Durga Puja 2023: সেফটি পিন | ছোট গল্প | পাপিয়া বোস ধর

বিক্রমের স্বভাবে একটু পরিবর্তন ও এসেছে । বিয়ের পর কিছু পুরোনো স্বভাব ছিলো যা পাল্টে নিয়েছিলো । সেগুলোতে আবার জড়িয়ে পড়ছে । বোধহয় আমার ভালোবাসা কোথাও কম পড়েছে। হতেই পারে । আজকাল তো আর ভালোবাসা নেই যা আছে শুধুই কেয়ারিং ।তবে কেয়ারিং টাও তো ভালোবাসা  আমার কাছে । কি জানি ! কি হয়েছে কিছু ধরতে পারছি না ।

Updated By: Oct 21, 2023, 03:55 PM IST
Durga Puja 2023: সেফটি পিন | ছোট গল্প | পাপিয়া বোস ধর

পাপিয়া বোস ধর

ইদানীং দেখছি , বিক্রম একটু গভীর রাত করেই বাড়ি ফিরছে নিজের ইচ্ছে মত। কিছু বলিনা । যদি খারাপ পেয়ে বসে । তবে ভেবেছি  আজ বলবো। দিনের পর দিন এমনটা মেনে নেওয়া যায় না । অত রাত পর্যন্ত আমি জেগে থাকতে পারি না। এই সময় আমার ঘুমের প্রয়োজন।  বিক্রমের স্বভাবে একটু পরিবর্তন ও এসেছে । বিয়ের পর কিছু পুরোনো স্বভাব ছিলো যা পাল্টে নিয়েছিলো । সেগুলোতে আবার জড়িয়ে পড়ছে । বোধহয় আমার ভালোবাসা কোথাও কম পড়েছে। হতেই পারে । আজকাল তো আর ভালোবাসা নেই যা আছে শুধুই কেয়ারিং ।তবে কেয়ারিং টাও তো ভালোবাসা  আমার কাছে । কি জানি ! কি হয়েছে কিছু ধরতে পারছি না । আমার সঙ্গে লাস্ট রিলেশন কবে হয়েছে , ঠিক মনেও নেই । ছোট্ট ছোট্ট একে অপরের কপালে হামি খাওয়া  টাও হয় না । পাশাপাশি বসে টিভি দেখা হয় না। একসাথে  কফি করাও হয় না। নতুন নতুন গল্প শোনা হয় না ।
অভ্যাস গুলো কেমন যেনো একা হয়ে গেছে ।

আরও পড়ুন, Durga Puja 2023: বাইনারি কোড | ছোট গল্প | সন্তু ধর

দরজার কলিং বেল টা বেজে উঠলো  ।বোধহয় বিক্রম এসেছে । ঘড়ির দিকে তাঁকিয়ে দেখলাম । রাত পৌনে দুটো বাজে । এগিয়ে গেলাম। গেট খুলতেই দেখি বিক্রম দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে। 
-তুমি ড্রিংক করে এসেছো? 
- তুমি ঘুমাও নি এখনো ?
- আমি ঘুমোলে তোমার দরজা কে খুলতো ? 
- প্রেগন্যান্সি তে পর্যাপ্ত ঘুমের দরকার । ওষুধ নিয়েছ ঠিক মতো ?
-হ্যাঁ নিয়েছি । 
ঘরে চলে এলো । ব্যাস ! আমায় একটা বার চোখ তুলেও দেখলো না । দেখবেই বা কি করে। নেশার যে ঘোরে আছে। ঘরে এসেই শুয়ে পড়েছে । জামাকাপড়, জুতো কিছুই চেঞ্জ করে নি । এতো ক্লান্ত ? আজ আর কিছু বলা হলো না । গুডনাইট । মনে মনে ভাবলাম ,
" তুমি কি সত্যিই আমার কেয়ার করো ?আমায় ভালোবাসো সেটা অনুভব করি । কিন্তু কেনো এমন করছো? কেন তোমার মন টা খারাপ ? কাল আমাদের বিবাহ বার্ষিকী। তোমার মনেও নেই হয়তো । তাই তো অমন করে শুয়ে পড়লে। "
রাত বাড়ছে । ঘড়ির কাঁটা দুটো । আমিও শোবার জন্য রেডি হলাম । টেবিলল্যাম্প টা অফ করতেই পাশে রাখা ক্যালেন্ডারে চোখ পড়লো।  হাত বাড়িয়ে নিলাম। ইশ!  ক্যালেন্ডারে দু দিন দাগ কাঁটা হয়নি । হিসেবে দেখলাম আগামীকাল আট মাস পূর্ণ হবে । মনটা একটু উৎফুল্ল হলো বটে। আর কটা দিন । তারপর আমাদের বেবী এসে গেলে  তুমি আর রাত করে বাড়ি ফিরতে পারবে না । সময়ই পাবে না । হয়তো আবার সব ঠিক হয়ে যাবে আগের মতো । 

নমিতা । আমাদের বাড়ির কাজের মেয়ে । গায়ের রং শ্যামলা ভারী মিষ্টি দেখতে । খুবই নম্র । বয়স খুব বেশি নয় ।আঠারো উনিশ হবে।  নমিতার মা ঝর্ণা দি আগে কাজ করতো । উনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তারপর থেকে নমিতা কেই পাঠান কাজের জন্য । ড্রয়িং রুমে এসে নমিতা বললো - 

"দিদি ! আজ কিচু আচে নাকি ? রান্না ঘরে দেখলুম মেলা তরকারি। মাছ মাংস নিয়ে এয়েচেন দাদাবাবু । " 
মুচকি হাসি হেসে বললো - "দুটো গোলাপ পুলো  আচে । "
যাক মনে আছে তাহলে । আজ আমাদের এননিভার্সারী টা। আমার হাসি দেখে নমিতার আর বুঝতে বাকি রইলো না ।
নমিতা কে বললাম -
-আজ দুপুরে তুই এখানেই খাবি । বুঝলি ?
-ঠিক আচে দিদি ।
নমিতা খুব খুশি । গান গাইতে গাইতে রান্নাঘরে গেলো। বিক্রমের বোধহয় আজ অফিস নেই । ছুটি নিয়েছে হয়তো । কিন্তু ওহ তো আমায় এখনো উইশ করেনি ? আমিও বা কোথায় উইশ করেছি । দেখলাম স্নান করে ঘরে এলো । একটু অবাক হলাম -
- এতো তাড়াতাড়ি স্নান সেরে এলে ? 
- অফিস যাবো । আচ্ছা শোনো ! আজ বাবা মা আসবেন । আমি বাজার করে এনেছি সব । নমিতা কে দেখিয়ে দিও। ওহ রান্না টা করে নেবে । 
- ওহ আচ্ছা । আর গোলাপ ফুল দুটো ? 
- এমনি নিয়ে এলাম। খাবার টেবিলে রেখো । 
- আজ আমাদের বিবাহবার্ষিকী বিক্রম । আমি ভাবলাম তুমি হয়তো সেই জন্যই বাজার করে এনেছো । গোলাপ দুটো নিয়েছো । তোমার মনেই নেই ?

বিক্রম যেনো পুরো আকাশ থেকে পড়লো । কি বলবে হয়তো বুঝতে পারছে না । আলতো ভাবে একটা "হ্যাপি এননিভার্সারী" বললো মৃদু হেসে ।ঠোঁটের কোণের হাঁসি টা অনিচ্ছার ।  আবার অফিসের জন্য তৈরি হতে লাগলো । আমি আর পারলাম না - 
-একটা রাস্তার মেয়েকে বিয়ে করে কি  সুখ পেলে তুমি ? 
-(ধমক দিয়ে বিক্রম বললো) রিম ! তোমায় কতবার বারণ করেছি নিজেকে এই শব্দে আর কোনোদিন জড়াবে না ? তারপর ও তুমি একই ভুল করছো ?
- কেনো জড়াবো না ? যেটা আমার অতীত ।আমার পরিচয় ছিলো সেটা আমি অস্বীকার করতে পারবো না । সেইদিনের রাত টা যে আমার জীবন টাই পাল্টে দেবে আমি কখনোই ভাবিনি । 

- আমি তোমার প্রতি কোনো দয়া করিনি  ।আমার যেটা ঠিক মনে হয়েছে আমি সেটাই করেছি ।

-ভুল করেছো ।মস্ত বড় ভুল। যেই ভুলের মাশুল এখন তুমিও পাচ্ছ ,আমিও পাচ্ছি। ইদানিং তোমার  বিহেবিয়ার এতো চেঞ্জ হয়ে গেছে যে আমি নিতে পারছি না । ডিপ্রেশন লাগছে । মদ খাচ্ছ। লেট নাইট বাড়ি ফিরছো ।  তুমি পার্টি করছো । সেদিন তোমার হোয়াটস আপ দেখলাম । তুমি ফরেইনার ট্যুর এরও প্ল্যান করছো উইথ আউট মি ? 

কথা গুলো শোনার পর  বিক্রম বসে পড়লো । আমায় ও কখনো এভাবে চিৎকার করতে দেখেনি ।ওর ওপর আমার অধিকার টা হয়তো আজ ফিল করলো ।  নমিতা কে ডেকে এক কাপ কফি আনতে দিলো । " আমি জানি বিক্রম ।আমি সব জানি ।আমি চাই  তোমার মুখ থেকে সব শুনতে । ভালোবাসায় তুমি আমায় জড়িয়ে ছিলে । আমি তো খদ্দের খুজছিলাম পেটের দায়ে ।   যাঁর সারা শরীর জুড়ে সিগারেট , বেল্ট, দাঁতের দাগ। সেই শরীর ভালোবাসা বোঝে না । ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই এমন পরিস্থিতিতে ছিলাম । সেদিন যখন তুমি গাড়ি নিয়ে এসে আমার সামনে দাঁড়ালে । আমায় গাড়ির দরজা খুলে দিলে ।ভেতরে বসার জন্য । যদি জানতাম এরপর সবটাই আমার পাল্টে যাবে । এতো টা শ্রদ্ধা, মায়া আমায় আঁকড়ে ধরবে । সেই রাস্তাতেই আমি পা রাখতাম না । 

স্লিভলেস ডিপ নেক ব্লাউজের থেকে আমার খোলা ক্লিভেজ টা তোমায় খুব বিরক্ত করছিলো । বার বার শাড়ী টা আমার বুক থেকে পড়ে যাচ্ছিলো । ওটা আমার ইচ্ছাকৃত । যাতে পেট ভরে  । দুটো টাকার জন্য করতে হয় এসব । তোমার থাই এর ওপর হাত রাখতেই হঠাৎ তুমি আমায় গাড়ি থেকে নামিয়ে দিলে । আমি অবাক হলাম। জেদ হলো। অপমানিত বোধ হলো। নিজে থেকে গাড়িতে উঠিয়ে আবার নিজেই গাড়ি থেকে নামিয়ে দিলে । কত টাকা চাই তুমি আমায় জিজ্ঞেস করলে । ঠিক কত টাকা হলে আমি আর ক্লিভেজ দেখাবো না ? রাস্তায় দাঁড়াবো না ? আমি তোমায় বিয়ে করবো ? তোমার একটা নোংরা মেয়ের দরকার । তুমি তারই যোগ্য ।
আমার কাছে উত্তরের চেয়ে প্রশ্ন ছিলো বেশি । কেনো ? কোন অধিকারেই বা এসব কথা বলেছিলে ? হ্যাঁ আমি নোংরা মেয়ে । 

গাড়ি থেকে মদের বোতল  বের করে খেতে লাগলে । মদ খেতে খেতেই চিৎকার করছিলে । "তৃনা আমি তোমার যোগ্য নই। তোমার কাছে আমার দাম নেই । ইউ ব্লাডি । হোয়াট ইউ সেইড আই এম অনলি ফর স্মল টাউন গার্ল । আই এম ডাউন মার্কেট । "
বুঝতে পারলাম তোমার ব্রেকআপ হয়েছে। সে তোমায় চিট করেছে । সেই রাগেই তুমি আমায় গাড়িতে তুলেছিলে। আমি নোংরা মেয়ে । নষ্টা। বেশ।এই ভালো ।
কিছুক্ষনের জন্য দুজনেই চুপটি করে দাঁড়িয়ে রইলাম। তুমি  চাঁদের দিকে চেয়ে রইলে। আর আমি তোমার দিকে চেয়ে রইলাম। ইউ আর জেন্টলম্যান  । আমার আফসোস হচ্ছিলো মেয়েটার প্রতি যে তোমার মতো ছেলেকে চিট করলো । সিক্স ফিট লম্বা ।সুঠাম দেহ । যেমন দেখতে ঠিক তার চলন সই । কিসের অভাব তোমার। সবই আছে । 

সেদিন গর্ব হচ্ছিলো। আমি হ্যাপি । আমি ভালোবাসা বুঝি না । তাহলে হয়তো আমারও তোমার মতো দশা হতো। কেও চিট করতো।সেদিন তোমার ঐ একটা কথায় আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি । "আপনার কাছে একটা সেফটিপিন হবে  খুব দরকার ? "
আমার সাইড ব্যাগ থেকে বের করে সেফটিপিন টা তোমার হাতে দিতে গেলাম । তুমি আমার শাড়ী টাকে দেখিয়ে বললে - ''পিন আপ করে নিন । এটা ভোগের বিষয় নয় । এটা আপনাদের অহংকার " ।  কথা গুলো শুনতে ভালোই লাগলো । কিন্তু পরমুহূর্তে আমি বেশ রেগেই গেলাম । 
-"এটা আমার রুজি রুটি  । আমাকে নিজেই আমার পেট চালাতে হয় । "

এক কথায় দু কথায় তর্ক জুড়ে গেলো। আমি পারতাম তোমায় ছেড়ে চলে যেতে ।তুমি যখন একদম নেশায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলে। কিন্তু কেনো যেনো পারিনি যেতে ।  পুরো রাত টাই কেটে গেলো । তারপর বন্ধু থেকে প্রেম । প্রেম থেকে একদিন আমায় বিয়ে করে এই ঘরে নিয়ে এলে । আমাদের সুখের সংসার ।  
নমিতা কে দেখলাম দরজার পাশে দাঁড়িয়ে সব শুনছে । এগিয়ে গেলাম । "কিরে নমিতা , তুই ও আমার অতীত জেনে গেলি । আমি কত নিচ তাই না বল। আমার আর কোনো সন্মান রইলো না ।" 

নমিতা আমায় জড়িয়ে ধরলো । অঝোরে কাঁদছে । -" সেকিরে !কাঁদছিস কেনো ?"
- দিদি ! এই লাইনে কেও শখে আসে ।কেও উপায় না পেলে আসে । তুমি আমার কাছে পরিষ্কার । আর তাছাড়া দাদাবাবু তোমায় বিয়ে করে এনেচে । এখন এসব কতা বলবে নি । তুমি খুব ভালো দিদি । "
বিক্রম নমিতা কে রান্না ঘরে পাঠিয়ে দিলো। মাথা নিচু করে বিক্রম ক্ষমা চাইছে । তার লেট নাইট ,পার্টি ,মদের জন্য । 

তৃনার সাথে সেদিন দেখা হয়েছিলো । তৃনা ফিরতে চাইছে বিক্রমের কাছে । 
- "তাহলে আমার প্রতি তোমার অনুভূতি টা কি মিথ্যে বিক্রম ? "
- "একদমই নয় রিম । আসলে পাস্ট যখন সামনে এসে দাঁড়িয়ে ছিলো নিজের প্রতি ঘেন্না জন্মাছিলো। আমি এতো খারাপ ছিলাম । ওর মতো একটা নষ্ট মেয়ের সাথে আমি ডেট করেছি । মনে হচ্ছেছিলো আমি তোমার ও ভাগ্য টা পুড়িয়ে দিলাম । আমি তোমার ও যোগ্য নই ।হয়তো আমি সত্যিই খারাপ ।" 
-"বিক্রম । আমার পেটে একবার হাত দুটো রাখো । দু মিনিটের জন্য সব ভুলে যাও । শুধু ফিল করো । তুমি তোমার সব উত্তর পেয়ে যাবে । এসো । "

এই প্রেগন্যান্সি  টার প্ল্যান  হয়তো আমাদের ছিলো না ।তাই হয়তো তুমি আমায় একটু অবহেলা করে গেছো । আমি কিন্তু খুব উপভোগ করেছি ।আর করছি । তবে আমার পাশে তুমি ছিলে একটু হলেও । আমাকে মনে করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছ। ওষুধ খাচ্ছি কিনা খবর নিয়েছ । আচ্ছা ব্রেকআপ এর রাগ নিয়ে আমার মত একটা নষ্ট মেয়ে কে বিয়ে করলে , আমি যদি আবার নষ্ট হয়ে যাই । ভয় হয়না তোমার ? "

-"না । আর ভয় নেই । কারণ আমি জানি তোমার সেফটিপিন এখন শুধু আমি । কোনো চান্স ই নেই । তোমাকে আমি নোংরা ভাবলে বিয়েই করতাম না । নোংরা তো ছেড়ে এসেছি ।অনেক দূরে । 

দুজনে একে অপরকে জড়িয়ে ধরলাম। কতদিন পর আমরা একে অপরের কাছে এলাম।  আমার সব ডিপ্রেশন উধাও হয়ে গেলো । ভালোবাসার কাঙাল তো আমরা প্রত্যেকেই । শুধু সময়ের অপেক্ষা । ভালো থাকতে কে না চায় । এক সপ্তাহ বাদে আমাদের একটা ছোট্ট ফুটফুটে মেয়ে হলো । বিক্রম চেয়েছিলো যাতে মেয়েই হয়। হসপিটালে মেয়ে কে দেখে বিক্রম যেনো পুরো রিফ্রেশ হয়ে গিয়েছিলো । 
আমাদের সুখের সংসার । ছোট ছোট পায়ে এগিয়ে চলছে । 

আরও পড়ুন, Durga Puja 2023: সার্কেল | ছোট গল্প | অরুণাভ রাহারায়

.