ঘণ্টায় ৬০ টাকা, অভাব ও শিল্পের যোগসূত্র যখন ওদের নগ্ন শরীর...

ফুলের পাপড়ির মতো শরীর যত অনাবৃত হবে রেট ততই বাড়বে। বসে থাকতে হবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। প্রতি ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ টাকা রোজগার। 

Updated By: Dec 25, 2018, 03:27 PM IST
ঘণ্টায় ৬০ টাকা, অভাব ও শিল্পের যোগসূত্র যখন ওদের নগ্ন শরীর...

নিজস্ব প্রতিবেদন: বেশি রোজগারের জন্য বেশি কাপড় খুলতে হয়। ফুলের পাপড়ির মতো শরীর যত অনাবৃত হবে রেট ততই বাড়বে। বসে থাকতে হবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। প্রতি ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ টাকা রোজগার। 

আরও পড়ুন- এই ছবিটা আপনার সম্পর্কে অনেক কিছু বলে দিতে পারে

দূর থেকে সবাই দেখবে। প্রয়োজন পড়লে ছোঁবেও। তবে এই ছোঁয়ায় যৌনতা নেই। শরীর আছে, অথচ কামনা নেই। এখানে আছে ‘আত্মার বহিঃপ্রকাশ’। সাদা ক্যানভাস ফুটিয়ে তোলে শরীরের প্রতিটা রোম, চোখের প্রতিটা পলক। ভাঁজে ভাঁজে বিভাজিত হয় বক্ষ। কিন্তু কোথাও কোনও অপবিত্রতা নেই। এই কাজ শিল্পের জন্য। শিল্পীর জন্য। এই কাজ  ন্যুড মডেল হওয়ার।

সংস্কৃতি চর্চায়, বিশেষ করে আঁকায় বিমূর্তকে মূর্ত রূপ দিতেই ন্যুড মডেলদের ব্যবহার করা হয়। কলকাতা তো বটেই দেশের সমস্ত কৃষ্টিক্ষেত্রেই এই পেশার চল আছে। 

লক্ষ্মী (কল্পিত নাম), একজন ন্যুড মডেল। উনি চেয়েছিলেন ছেলেমেয়েদের একটা স্বপ্ননীড় গড়ে দিতে। সেখানে একটা জাগরণ হবে (গৃহপ্রবেশ অনুষ্ঠানের সময় ঈশ্বরের নাম সংকীর্তন)। সেই স্বপ্ন নিয়েই ন্যুড মডেল হওয়া, আর এখন আর্ট কলেজের অন্যতম মডেল লক্ষ্মী।

প্রথম যে দিন নিজেকে এই পেশায় নিয়ে এসেছিলেন, একেবারেই স্বচ্ছন্দ ছিলেন না তিনি। পোশাক খুলতে হবে, এটা ভেবেই যেন হিমশীতল স্রোত বয়ে যেত। তবে দিন যত এগিয়েছে, এই কাজে যেন নিজেকে পেশাদার করে তুলেছেন লক্ষ্মী। ওনার কথায়, “শরীরের আর কী, মরে গেল সব  পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।” লক্ষ্মী মনে করেন, যেভাবে গান, সিনেমা, লেখার মধ্য দিয়ে শিল্পী ও তাঁর সৃষ্টি অমরত্ব পায়, তিনিও সেই পথের পথিক। ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা তাঁকে দূর থেকে দেখে, তাঁর ছবি আঁকে। লক্ষ্মী মনে করেন, প্রতিদিন তাঁর মূর্তি তৈরি হচ্ছে। শিক্ষার্থী  বিদ্যা অর্জন করছেন। এবং এই শিক্ষার্থীরা যা সম্মান লক্ষ্মীকে দিয়েছে, তা তিনি আর কোথাও পাননি।

আরও পড়ুন- সময়টা ভাল যাচ্ছে না? সব কাজই বাধা পড়ছে? কাজে লাগান কর্পূর

একটা ক্লাসে একসঙ্গে ১৫ থেকে ২০ জন লক্ষ্মীর ছবি আঁকে। হিসেব করে দেখলে বছরে লাখো ছবি তৈরি হয় লক্ষ্মীর। সেখান থেকে অনেক ছবিই আবার উপহার হিসেবে পেয়েছেন তিনি। লক্ষ্মী বলছেন, “প্রথম প্রথম ভীষণ অদ্ভুত লাগত। কীভাবে এই কাজ করব, বুঝেই উঠতে পারতাম না। সময় যত এগিয়েছে, বড় বড় মানুষদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে সাবলীল হয়েছি। এখন সবাই জানে, আমি কী করি ।”  

.