কল্পনা… কিন্তু গল্প না

Updated By: Mar 31, 2017, 08:55 PM IST
কল্পনা… কিন্তু গল্প না

রঞ্জন মন্ডল

“ না জানে কিঁউ….
হোতা হ্যায় ইয়ে জিন্দেগি কে সাথ….
অচানক ইয়ে মন….
কিসি কি জানে কে বাদ….
করে ফির উসকি ইয়াদ….
ছোটি ছোটি সি বাত….
না জানে কিঁউ….”

…………. লতা মঙ্গেশকরের এই গানটা নন্দিতাদির মোবাইলের রিংটোন ছিল । তাই গানটা শুনতে শুনতে মনে পড়ল ওর কথা । সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের দুকামরার ছোট্ট অফিসটায় আমি ছিলাম নন্দিতাদির ইমিডিয়েট বস্ । বয়সে আমার থেকে বছর চারেকের বড় নন্দিতাদিকে আমি “তুমি” বললেও, ও কিন্তু আমাকে “আপনি” আর “স্যার” বলেই সম্বোধন করত । তবে “তুমি” “আপনি” বা বয়সের এই তারতম্য আমাদের সম্পর্কের সাবলীলতায় কখনও অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়নি । প্রাণখুলে হাসতে হাসতে নন্দিতাদি বলত ওর আর সুকান্তদার প্রেমের গল্প, ওদের বিয়ের কথা, বলত ওর পাঁচ বছরের দুষ্টুটার কথা । আর সুন্দরী নন্দিতাদিকে আমি হাঁ করে দেখতাম শুধু… লিটারেলি শুধু দেখতামই ! “জানো, তোমাকে একদম সোনাক্ষী সিনহার মতো দেখতে !” – একথা বললেই খিলখিল করে হেসে উঠতো নন্দিতাদি । বলত “আপনার যত অদ্ভুত কথা!” ।

মুম্বইয়ের মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির চাকরির অ্যাপয়েন্টমেন্টটা আমি পেয়ে গেছি তখন । অফিসে একমাত্র নন্দিতাদিকেই জানিয়েছিলাম সুখবরটা । আর কদিন পরেই ছাড়ব আমার দুবছরের পুরনো অফিসটাকে । সারাদিনের বাইরের কাজ সেরে অফিসের মারুতিটায় ফিরছি আমি আর নন্দিতাদি । হঠাৎ কি একটা অদ্ভুত মন কেমনে দুহাতে ওর হাত দুটো চেপে ধরে বললাম “আর হয়তো দেখা হবে না আমাদের…..” । আমার হাত থেকে নিজের হাতদুটো সরিয়ে নিয়ে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে চুপ করেছিল নন্দিতাদি । ততক্ষনে ওর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছে গাড়িটা । গাড়ি থেকে নেমে চলে যাওয়ার সময়ে একবার পিছন ফিরেও তাকালো না নন্দিতাদি । সেই অদ্ভুত মন কেমনটা কিন্তু রয়েই গেল আমার ।

পরদিন অফিসে আবার আগের মতই হাসি-ঠাট্টা-কাজ । গত সন্ধের অনভিপ্রেত মুহূর্তটা সরিয়ে রাখলাম দুজনেই । এর দিন-চারেক পর… আমার পুরনো অফিসের শেষদিন । সকাল থেকে মুখ ভার নন্দিতাদির । বসের চেম্বার থেকে বেরিয়ে অফিসের সব কাগজপত্রগুলো বুঝিয়ে দিলাম ওকে । “শরীরটা খারাপ লাগছে” বলে দুপুরেই বাড়ি চলে গেল সেদিন । বিকেলে অফিসকে টাটা দিয়ে বেরোতেই নন্দিতাদির ফোন । ফোনটা ধরতেই অপরপ্রান্ত থেকে ভেসে এলো অস্ফুট কিছু শব্দ আর কান্না । প্রফেশনাল ফরম্যালিটির বাইরে কিছু মুহূর্ত নিখাদ ইমোশনাল । ম্যানেজ করার একটা নিরীহ চেষ্টায় বললাম, “ আমার সোনাক্ষী সিনহা এমন করে কাঁদলে কি করে হবে ?” কিন্তু ওর কান্নাভেজা শব্দগুলো গ্রাস করছিল আমাকেও…. যাইহোক, কিছুক্ষণ এটা সেটা কথার পর একটু ধাতস্থ হয়ে অনেক শুভকামনা বিনিময় শেষে রাখলাম ফোনটা । অনেকটা ফাঁকা লাগলো বুকের ভিতরটা । কেন ? কি জানি…….

মুম্বইয়ে অফিস জয়েন করার দুদিন পর সন্ধেবেলায় নন্দিতাদির ফোন । দু-একটা কথার পর বলল “একটা সত্যি কথা বলি… আপনি অফিস ছাড়ার দিন খুব মন চাইছিল একবার আপনার হাতদুটো চেপে ধরি…. খুউউব । কিন্তু পারিনি । কেন জানেন ? কারন আমি চাইনি আমার চাওয়া কখনও আপনার জীবনের পিছুটান হয়ে দাঁড়াক । ভাল থাকবেন স্যার । হয়তো ফোন করব না আর……” । ফোনটা কেটে দিল নন্দিতাদি । একটা অদ্ভুত নিস্তব্ধতা । মনে মনে ভাবলাম “ভালবাসা”…. নাঃ.... জীবনের সব সম্পর্ককে প্রেমের মোড়কে পুরে “ভালবাসা”-র নাম না-ই বা দিলাম…. বরং এই অনুভূতিটার নাম থাক “হৃদয়সুখ”……. আমার মুম্বই ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে আমি তখন একা । অদূর আরব সাগরের ঠান্ডা হাওয়া ভরিয়ে দিচ্ছে আমার চোখ-মুখ-বুক । অস্ফুটে শুধু বললাম “ভালো থেকো নন্দিতাদি ।” চোখের কোণটা ছলছল করছে বোধ হয় । আরব সাগরের সীমানার হলুদ আলোগুলো আমার চোখে তখন যেন অজস্র মুক্তধারা…….

আরও পড়ুন, প্রেমের অণুগল্প "তোকে লিখছি"

আরও পড়ুন, প্রেমের অণুগল্প "ভালোবাসার দাম"

.