Manipur Violence, I.N.DI.A. : মানুষের যন্ত্রণা শুনতেই মণিপুরে আজ 'ইন্ডিয়া'! কটাক্ষে বিঁধলেন অনুরাগ
আজ ও কাল মণিপুরের পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখবেন বিরোধী 'ইন্ডিয়া' জোটের সাংসদরা। রাজ্যপালের সঙ্গেও সাক্ষাত্ করার কথা রয়েছে তাঁদের।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: হিংসাদীর্ণ মণিপুরে আজ 'ইন্ডিয়া'। কংগ্রেসের অধীর চৌধুরীর নেতৃত্ব মণিপুরে আজ বিরোধী জোট 'ইন্ডিয়া'র ১৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলে আছেন সুস্মিতা দেব, গৌরব গগৈ, কানিমোঝি প্রমুখ নেতৃত্ব। মণিপুরে গ্রাউন্ড জিরোয় পৌঁছে তাঁরা সরেজমিনে খতিয়ে দেখবেন সেখানকার পরিস্থিতি। মেইতেই ও কুকি, দুই সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গেই তাঁদের আলোচনা করার কথা রয়েছে। আজ ও কাল মণিপুরের পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখবেন বিরোধী 'ইন্ডিয়া' জোটের সাংসদরা। রাজ্যপালের সঙ্গেও সাক্ষাত্ করার কথা রয়েছে তাঁদের।
সিপিআইএম, জেডিইউ, ডিএমকে, আরজেডি, সমাজবাদি পার্টি, শিবসেনা সহ মোট ১৬ দলের ১৭ জন প্রতিনিধি যাচ্ছেন মণিপুরে। মণিপুরের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার সময় অধীর চৌধুরী বলেন, মানুষের যন্ত্রণা শুনতেই মণিপুরে! এদিকে ইন্ডিয়া জোটের এই মণিপুর যাওয়ার প্রসঙ্গে পালটা কটাক্ষ করেছেন অনুরাগ ঠাকুর। এদিন কলকাতায় নামার পর বিমানবন্দরে দাঁড়িয়েই অনুরাগ ঠাকুর বলেন, '৫৭ জনের বেশি খুন হয়ে গিয়েছে বাংলায়। মমতাজি আপনার নাকের ডগাতেই এই খুনগুলো হয়েছে। কিন্তু আপনি অপরাধীদের সুরক্ষা দিয়েছেন। যাঁরা মণিপুরে যাচ্ছেন, পশ্চিমবঙ্গেও যেভাবে মহিলাদের উপর হামলা হয়েছে, তাতে কি কংগ্রেস আর অন্য দলের প্রতিনিধি আসবেন? কংগ্রেসের কি রাজস্থান আর বাংলার মহিলাদের উপর কোনও সহানুভূত নেই?' প্রসঙ্গত, মণিপুর ইস্যুতে কেন্দ্রের সরকারের উপর চাপ বাড়াতে এটা নতুন কৌশল বলে মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বাদল অধিবেশনের শুরু থেকেই মণিপুর ইস্যুতে উত্তাল সংসদের উভয়কক্ষ- লোকসভা ও রাজ্যসভা। সংসদ ভবন চত্বরে প্রতিবাদ বিক্ষোভে সামিল হয়েছে বিরোধী ইন্ডিয়া জোট। এর পাশাপাশি, মণিপুর ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর মোদীর উপর চাপ বাড়াতে লোকসভায় ইন্ডিয়া জোটের তরফে অনাস্থা এনেছে কংগ্রেস। সেই অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীতও হয়েছে। ফলে মণিপুর ইস্যুতে এবার অধিবেশনে বিবৃতি দিতে বাধ্য মোদী। প্রসঙ্গত, সংরক্ষণের দাবিতে আজকে প্রায় ৩ মাস ধরে মেইতেই ও কুকিদের মধ্যে জাতি হিংসার কারণে উত্তপ্ত মণিপুর। এই মেইতেইরা মণিপুরের সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী। মোট জনসংখ্যার ৫৩ শতাংশ মেইতেই। মূলত ইম্ফল উপত্যকায় বাস মেইতেইদের। ওদিকে কুকি ও জো সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষরা থাকেন পাহাড়ি অঞ্চলে। মেইতেইদের সংরক্ষণের অধিকার দাবির বিরোধিতা করেছে কুকিরা। এই নিয়ে গত ৩ মে প্রথম সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তারপর থেকেই অশান্তির আগুনে পুড়ছে মণিপুর।
হিংসাদীর্ণ মণিপুরে একের পর এক বিভীষিকার ছবি সামনে আসছে। স্বাধীনতা সংগ্রামীর আশি বছরের বৃদ্ধা স্ত্রীকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে। এটি মণিপুরের কাকচিং জেলার সেরউ গ্রামের ঘটনা। ওদিকে পূর্ব ইম্ফলে ২১ জুলাই একটি এফআইআর হয়েছে। সেখানে এক ১৮ বছরের তরুণী অভিযোগ করেছেন, তাঁকে গণধর্ষণ করেছে কালো পোশাক পরিহিত অস্ত্রধারী ৪ যুবক। ওই তরুণী পুলিসকে জানিয়েছেন, তাঁকে অপহরণ করে মহিলাদের একটি দল। তারপর তাঁকে তুলে দেওয়া হয় অস্ত্রধারী ওই ৪ যুবকের হাতে। এর পাশাপাশি ঘরে ঢুকে ২ বোনকে গণঘর্ষণের পর খুনের অভিযোগ সামনে এসেছে ইম্ফলে। নির্যাতিতাদের বাবার অভিযোগ, ৪ মে ঘটনাটি ঘটে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত, এই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিস। ওদিকে, মণিপুরের বিষ্ণুপুর জেলার এক লোকালয়ে একটি বাড়ির বাঁশের বেড়ার মাথায় উদ্ধার হয়েছে একটি কাটা মুণ্ডু। ঘটনার বীভত্সতা ও নৃশংসতা চমকে দিয়েছে সবাইকে। এই ভিডিয়োটিও ভাইরাল। এই দৃশ্য দেখে শিউরে উঠছে সবাই। যে-ব্যক্তির কাটা মুণ্ড পাওয়া গিয়েছে, তাঁকে শনাক্তও করা গিয়েছে। তিনি কুকি সম্প্রদায়-ভুক্ত।
উল্লেখ্য, মণিপুরের ২ মহিলাকে গণধর্ষণ ও তাঁদের নগ্ন হাঁটানোর ভিডিয়ো সামনে আসতেই তোলপাড় হয় দেশ। ৪ মে মণিপুরের কাংপোকপি জেলায় এই ঘটনা ঘটে। ভাইরাল ভিডিয়ো ঘিরে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে দেশজুড়ে। ওই দুই নির্যাতিতার মধ্যে একজন কার্গিল যোদ্ধার স্ত্রী বলেও জানা যায়। দোষীদের অবিলম্বে শাস্তির দাবি ওঠে। বিরোধীদের ক্রমাগত দাবির মুখে শেষপর্যন্ত মণিপুর ইস্যুতে মুখ খোলেন প্রধানমন্ত্রী। ভাইরাল ভিডিয়োকাণ্ডে কড়া বিবৃতি দেন। দোষীদের কোনওভাবেই রেয়াত করা হবে না। আইন আইনের পথে চলবে বলে জানান তিনি। এখনও পর্যন্ত সেই ন্যক্কারজনক ঘটনায় ৫ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিস।
আরও পড়ুন, P Leader Arrest: মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কুরুচিকর পোস্ট! গ্রেফতার বিজেপি নেত্রী