সব পক্ষকেই তুষ্ট রেখেই কর্নাটকে সরকার বাঁচাতে চাইছেন গডকড়ি
শেষ পর্যন্ত কন্নড় মুলুকে বিজেপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব যুক্ত হল জাতপাতের জটিল সমীকরণ! আর পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য এবার জোড়া উপ-মুখ্যমন্ত্রী করার চিন্তাভাবনা শুরু করলেন নীতিন গডকড়ি, অরুণ জেটলি, রাজনাথ সিংরা।
শেষ পর্যন্ত কন্নড় মুলুকে বিজেপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব যুক্ত হল জাতপাতের জটিল সমীকরণ! আর পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য এবার জোড়া উপ-মুখ্যমন্ত্রী করার চিন্তাভাবনা শুরু করলেন নীতিন গডকড়ি, অরুণ জেটলি, রাজনাথ সিংরা।
কর্ণাটকে সরকার বাঁচানোর স্বার্থে বি এস ইয়েদুরাপ্পার চাপে নতিস্বীকার করে মুখ্যমন্ত্রী ডি ভি সদানন্দ গৌড়াকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করেছে বিজেপি হাইকম্যান্ড। শিকারিপুরার বিক্ষুব্ধ নেতাকে শান্ত করতে তারই জাত লিঙ্গায়েত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি জগদীশ শেট্টারকে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী করা হচ্ছে। কিন্তু ১১ অশোক রোডের নীতিনির্ধারকদের এই সিদ্ধান্তে প্রবল ক্রুদ্ধ সদানন্দের নিজের জাত ভোক্কালিগারা। এদিন বিজেপি পরিষদীয় দলের বৈঠকে যোগ দিতে এসে তারই আঁচ পেলেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক অরুণ ও রাজনাথ।
অবৈধ আকরিক লোহা উত্তোলন এবং সরকারি জমি আত্মসাতের জোড়া কেলেঙ্কারির জোরে মুখ্যমন্ত্রী পদ ছাড়তে বাধ্য হওয়ার পর ২০১১ সালে অগাস্ট মাসে নিজের ঘনিষ্ঠ অনুগামী সদানন্দ গৌড়াকে বিজেপি পরিষদীয় দলের বৈঠকের ভোটাভুটিতে জিতিয়ে এনেছিলেন ইয়েদুরাপ্পা। সে সময় রাজ্য বিজেপি সভাপতি এশ্বরাপ্পা এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অনন্তকুমারের নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীর মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে বিজেপি পরিষদীয় দলের ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছিলেন জগদীশ শেট্টার।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনের কিছুদিনের মধ্যেই ইয়েদুরাপ্পা-সদানন্দ সম্পর্কে ফাটল ধরে। আর এরপরই উত্তরসূরির অপসারণ চেয়ে বিজেপি হাইকম্যান্ডের কাছে দরবার শুরু করেন শিকারিপুরার লিঙ্গায়েত নেতা। তাঁর অনুগামী মন্ত্রী-বিধায়করাও প্রকাশ্যে সদানন্দ গৌড়ার অপসারণ চেয়ে সোচ্চার হন। সদানন্দের ছেড়ে দেওয়া উদুপি-চিকমাগালুর লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিজেপি প্রার্থীর পরাজয়ের পর ইয়েদুরাপ্পা শিবিরের মুখ্যমন্ত্রী বদলের দাবি আরও জোরাল হয়। তাত্পর্যপূর্ণভাবে গোষ্ঠী রাজনীতির সমীকরণ বদলে ইয়েদুরাপ্পা শিবিরে যোগ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হয়ে ওঠেন জগদীশ শেট্টার।
বিজেপি হাইকম্যান্ডের চাপ বাড়িয়ে গত ২৯ জুন জগদীশ শেট্টার-সহ ইয়েদুরাপ্পা শিবিরের ৯ মন্ত্রী তাঁদের পদ থেকে ইস্তফা দেন। পাশাপাশি রাজ্য বিজেপির ১২০ জন বিধায়কের মধ্যে মোট ৫৭ জন সদানন্দ গৌড়ার অপসারণের দাবি তোলেন। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপর চাপ বাড়াতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রমব মুখোপাধ্যায়কে সমর্থনেরও ইঙ্গিত দেন কুশলী ইয়েদুরাপ্পা। কার্যত এরপরই ইয়েদুরাপ্পা গোষ্ঠীর চাপের কাছে নতি স্বীকার করে বিজেপি হাইকম্যান্ড। কর্নাটকের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা ধর্মেন্দ্র প্রধান প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত্ করে সদানন্দকে সরানোর প্রতিশ্রুতি দেন। গত সপ্তাহে বিজেপি`র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে জগদীশ শেট্টারকে মুখ্যমন্ত্রী করার বার্তাও দেওয়ার পরই পদত্যাগী মন্ত্রীরা তাঁদের ইস্তফাপত্র প্রত্যাহার করে নেন।
কিন্তু আসল সমস্যার সূত্রপাত হয় এর পরই। মূলত মধ্য ও উত্তর কর্ণাটকের বাসিন্দা লিঙ্গায়েতরা রাজ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী গোষ্ঠী। রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ১৮ শতাংশই লিঙ্গায়েত। প্রভাবের বিচারে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও কন্নড় মুলুকে ভোক্কালিগা ভোট রয়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ। এই পরিস্থিতিতে ভোক্কালিগা নেতা আর অশোককে উপ-মুখ্যমন্ত্রী করে গৌড়া শিবিরকে কিছুটা তুষ্ট করার কথা ভাবছে গেরুয়া শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। পাশাপাশি অনগ্রসর কুরুবা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি তথা রাজ্য বিজেপি সভাপতি এশ্বরাপ্পাকেও উপ-মুখ্যমন্ত্রী করার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে।