মোদীর দর ৫ টাকা, আর রাজনীতির ১২ আনা
নীরেন চক্কত্তি লিখেছিলেন, "রাজা তোর কাপড় কোথায়?" মনীশ তিওয়ারি লিখলেন, মোদী তোর দাম কত? না নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী সঙ্গে রাজনীতির সমীকরণ টানার ধৃষ্টতা করা ঠিক হবে না। আসল কথা, বর্তমানে টুইট পাখির কূটকচালিতে রাজনীতির `আগুন` জ্বলছে দ্বিগুণ। এবার তরজা পাঁচ টাকার টিকিট নিয়ে। হয়দরাবাদে `মোদী শো`-র দর ৫ টাকা ধার্য করায়, ভারতীয় জনতা পার্টিকে এক হাত নিয়ে টুইটে নরেন্দ্র মোদীর `আসল দাম বাতলা`বার দাবি তুললেন কেন্দ্রীয় তথ্য সম্প্রচারমন্ত্রী মনীশ তিওয়ারি।
ঋত্বিক মণ্ডল
নীরেন চক্কত্তি লিখেছিলেন, "রাজা তোর কাপড় কোথায়?" মনীশ তিওয়ারি লিখলেন, মোদী তোর দাম কত? না নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী সঙ্গে রাজনীতির সমীকরণ টানার ধৃষ্টতা করা ঠিক হবে না। আসল কথা, বর্তমানে টুইট পাখির কূটকচালিতে রাজনীতির `আগুন` জ্বলছে দ্বিগুণ। এবার তরজা পাঁচ টাকার টিকিট নিয়ে। হয়দরাবাদে `মোদী শো`-র দর ৫ টাকা ধার্য করায়, ভারতীয় জনতা পার্টিকে এক হাত নিয়ে টুইটে নরেন্দ্র মোদীর `আসল দাম বাতলা`বার দাবি তুললেন কেন্দ্রীয় তথ্য সম্প্রচারমন্ত্রী মনীশ তিওয়ারি।
টুইটে তিওয়ারি তির, "বাবা প্রবচনের টিকিট ১০০ থেকে ১,০০,০০০। এমনকী, বক্স অফিস ফ্লপ সিনেমার টিকিটের দাম ২০০ থেকে ৫০০। আর `a` মুখ্যমন্ত্রীর দাম ৫টাকা!(sic)" বিড়ম্বনার এখানেই শেষ নয়। মনীশ লেখেন, দেশের মানুষের ওপর ৫টাকা করে `স্পিকিং ট্যাক্স` লাগু করতে চলেছে বিজেপি। (মনীশ বুঝলেন, টাইপে একটা ভুল হয়ে গেছে) পরে এক সংবাদ সংস্থাকে ডেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, "বিজেপি এখন `লিসনিং ট্যাক্স` চাপাচ্ছে।"
১১ অগাস্ট। হায়দরাবাদে লাল বাহাদুর স্টেডিয়ামে বক্তব্য রাখবেন মোদী। ১৮ থেকে ৪০ বছরের ভারতকে `মোদীমুগ্ধ` করার চ্যালেঞ্জ বিজেপির। দলের নির্বাচনী প্রধানের বাণী শোনার জন্য ৫ টাকার টিকিট বিলি করছে অন্ধ্র বিজেপি। সমলোচনার সূত্রপাত এখানেই। বিজেপির এই ভুল `সোশ্যাল দুনিয়ায়` ঝড় তোলার জন্য যথেষ্ট। কংগ্রেসের কড়া নিশানায় আসতে দেরি হয়নি।
রাজনীতিতে বেচাল হলে `এসকেপ রুট` দিয়ে পালানোর প্রথা বরাবরের। এ ক্ষেত্রেও সেই পথ খুঁজতে দেরি হল না বিজেপির। হায়দরাবাদের মোদী শো টাকা উত্তরাখণ্ডে ত্রাণ তহবিলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। কী বিড়ম্বনা! রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ায় খিল দিতে পারল বিজেপির এই কৌশল। বাঁকা হাসি বিজেপির ১৭ বছরের `সতীন` জেডি(ইউ)-এর। আলি আনোয়ারের মন্তব্য, "মোদীকে সুপার স্টার বানাতে চায় বিজেপি।" তাই `তামাশা` দেখতে পাঁচটা টাকা খরচ করতে রাজি মানুষ।
টাকা দিয়ে রাজনৈতিক সমাবেশে ভিড় বাড়ানোর কৌশল অনেক দিনের। টপ শট ভাল ওঠে। কিন্তু, দেশের ভাবী প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর (সম্ভাব্য) বক্তৃতা শুনতে শ্রোতাদের কাছ থেকেই টাকা নেওয়ার ভাবনা অভিনব। তাই নয় কি? এবার বিজেপি প্রতিক্রিয়ায় সংশোধনী এল। অবস্থান স্পষ্ট করে শীর্ষ নেতৃত্বের দাবি, মোদীর মতো জাতীয় স্তরের নেতার কথা শুনতে মানুষ কোনও টাকা ছাড়াই ভিড় জমায়।
ঘটনার অন্য ব্যাখ্যা নিয়ে ময়দানে নামলেন বিজেপি মুখপাত্র এন রামাচন্দ্র রাও। তাঁর যুক্তি, "যেখানে অন্য রাজনৈতিক দল সমাবেশে মানুষ নিয়ে আসে, সেখানে `ন্যূনতম` টাকা নিলে তা শ্রোতাদের উৎসাহিত করতে কাজে আসবে।" বাহ্ বিজেপি বাহ্!
কিন্তু মজার বিষয় হল, দেশের ১২০ কোটি মানুষের উৎসাহ একটাই। সেখানে চায়ের কাপ খালি করা আর কয়েক গোছা সিগারেটের প্যাকেট খালি করা ডজন খানেক আলোচনা না করেই বলে দেওয়া যায়, সাধারণ মানুষের উৎসাহের বিষয়টা ঠিক কী। দেশের যে কোনও নির্বাচনে দেশের যে কোনও প্রান্তে চলে যান। একজন সাধারণ ভোটারের কাছে প্রশ্নটা রাখুন। জবাব একটাই। মানুষ চায় বুনিয়াদি উন্নয়ন। শিক্ষায় উন্নয়ন, উন্নয়ন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার, ব্যবস্থা চায় নিরাপত্তার আর নিরাপত্তা চায় জীবিকার। যে ঘর থেকে মোদী, মনীশরা আসেন তাঁদের স্বজনদের প্রশ্নটা করলে জবাব সম্ভবত একই আসবে। আর সবচেয়ে বড় ঘর, যার নাম হিন্দুস্তান। তাঁর যেকোনও সদস্যকে প্রশ্নটা করুন, সাফ জবাব পাবেন।
এই ধরনের রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে বৃহত্তর হিন্দুস্তানকে কোটি টাকার স্বপ্ন দেখানোই রাজনৈতিক নেতাদের কাজ। দলের কাছে নিজের `হেভি ওয়েট`যাচাই করার তাড়না থাকে তাঁর কাছে। কিন্তু হাস্যকর হলেও বাস্তব এটাও, এই সমাবেশের শত প্রতিশ্রুতির মঝেই একটু ভাল করে বাঁচার স্বপ্নটাই খোঁজে এক আম আদমি।