ভারতের ধর্মস্থান গুলিতে গঙ্গার জলে ভয়ঙ্কর হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধকারী মারণ ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা

উত্তরাখণ্ডের ঋষিকেশ ও হরিদ্বারে মে, জুন মাসে লক্ষ লক্ষ তীর্থ যাত্রীরা ভিড় করেন। ডুব দেন গঙ্গার জলে। আর তখনই সেখানকার জলে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধকারী `সুপারবাগ` ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা ৬০ গুন বৃদ্ধি পায়। অ্যান্টিবায়োটিক এই ব্যাকটেরিয়াগুলির উপর কোনও রকম প্রভাব ফেলতে পারে না বলে একবার শরীরে এই ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করলে যে সমস্ত অসুখ সৃষ্টি হয় তার নিরাময় এক কথায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। বহু সময় মৃত্যুর কারণ হয়ে ওঠে এই `সুপারবাগ`। সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই তথ্য।

Updated By: Feb 18, 2014, 04:22 PM IST

উত্তরাখণ্ডের ঋষিকেশ ও হরিদ্বারে মে, জুন মাসে লক্ষ লক্ষ তীর্থ যাত্রীরা ভিড় করেন। ডুব দেন গঙ্গার জলে। আর তখনই সেখানকার জলে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধকারী `সুপারবাগ` ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা ৬০ গুন বৃদ্ধি পায়। অ্যান্টিবায়োটিক এই ব্যাকটেরিয়াগুলির উপর কোনও রকম প্রভাব ফেলতে পারে না বলে একবার শরীরে এই ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করলে যে সমস্ত অসুখ সৃষ্টি হয় তার নিরাময় এক কথায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। বহু সময় মৃত্যুর কারণ হয়ে ওঠে এই `সুপারবাগ`। সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই তথ্য।

আইআইটি দিল্লি ও ব্রিটেনের নিউক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা পার্বত্য গতির গঙ্গার জল নিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছেন বাৎসরিক তীর্থযাত্রার সময় এই সমস্ত ধর্মীয় স্থানগুলিতে জলে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বিপজ্জনকভাবে বৃদ্ধি পায়।

নিউক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ইঞ্জিনিয়ার প্রফেসর ডেভিড গ্রাহাম জানিয়েছেন এটি কোনও আঞ্চলিক সমস্যা নয়, বরং সারা পৃথিবীর সমস্যা।`

গবেষণার ক্ষেত্রে ধর্মস্থানগুলির উপর বিশেষ জোর দেওয়ার কারণ হিসাবে তিনি জানিয়েছেন তাঁরা সন্দেহ করেছিলেন প্রকৃতির মধ্যে দিয়ে কীভাবে ব্যাকটেরিয়ার প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং সংক্রামিত হয় এই স্থান গুলিই তা জানার আদর্শ স্থান।

`blaNDM-1` নামের একটি বিশেষ জিন তা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধে সক্ষম সেই জিনের উপস্থিতি বহু ব্যকটেরিয়ার প্রতিরোধ ক্ষমতা ভীষণ ভাবেই বাড়িয়ে দেয়। বিভিন্ন সময়ে পার্বত্য গতির গঙ্গার জলের নমুনা সংগ্রহ করে গবেষকরা দেখেছেন তীর্থযাত্রার সময় এই জলে
`blaNDM-1` জিন সহ ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা লক্ষ্যণীয় ভাবে বৃদ্ধি পায়।

এর কারণ হিসাবে ব্যাখা করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন তীর্থযাত্রার সময় ধর্মস্থানগুলিতে জনসমাগম বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। বর্জ্যপদার্থের পরিমাণও বৃদ্ধি পায় পাল্লা দিয়ে। কিন্তু সেই বর্জ্যপদার্থ সরাসরি জমা হয় গঙ্গার জলে। নিকাশি ব্যবস্থা এতটাই খারাপ যে গঙ্গার জলের সঙ্গে বর্জ্যপদার্থ পৃথকীকরণের কোনও ব্যবস্থাই থাকে না অধিকাংশ ক্ষেত্রে। সেই জলেই স্নান থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ করে থাকেন তীর্থযাত্রীরা।

blaNDM-1 জিনসহ ব্যাকটেরিয়া সাধারণত মানুষের অন্ত্রের দ্বারা বাহিত হয়। বর্জ্যপদার্থের সঙ্গে এই ব্যাকটেরিয়াও নির্গত হয়ে আসে এবং মেশে গঙ্গার জলে। সেই জল থেকে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধকারী ব্যাকটেরিয়া অন্য আরেক জনের মধ্যে সংক্রমিত হয় এবং রেপ্লিকেট করে। ফলে দ্রুত হারে এদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়।

ধর্মস্থানগুলিতে নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতি, পরিচ্ছন্নতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ছাড়া কোনও ভাবেই অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধকারী ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধি রোধ করা সম্ভব নয়। টানা ১০ বছরের গবেষণার ফলে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। শুধু ভারত নয় অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে পরিচ্ছন্ন জল পান করার দিকে তাই জোর দিচ্ছেন তাঁরা।

.