ইস্তফা দেননি, দাবি দীনেশের, বিভ্রান্তি চরমে

খবর ছিল দলের নির্দেশ মেনে বুধবার রাতেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি। এদিন তৃণমূলের তরফে জানানো হয়, দীনেশ ত্রিবেদীর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন মনমোহন সিং। কিন্তু বেলা বাড়াতেই মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে দীনেশ ত্রিবেদী জানালেন, তিনি এখনও প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ে পদত্যাগপত্র পাঠাননি। ফলে পুরো ঘটনা ঘিরে বিভ্রান্তি চরমে উঠেছে।

Updated By: Mar 15, 2012, 09:00 AM IST

খবর ছিল দলের নির্দেশ মেনে বুধবার রাতেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি। এদিন তৃণমূলের তরফে জানানো হয়, দীনেশ ত্রিবেদীর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন মনমোহন সিং। কিন্তু বেলা বাড়াতেই মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে দীনেশ ত্রিবেদী জানালেন, তিনি এখনও প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ে পদত্যাগপত্র পাঠাননি। ফলে পুরো ঘটনা ঘিরে বিভ্রান্তি চরমে উঠেছে।
অন্যদিকে নয়া রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার জন্য এদিন ফের দিল্লি উড়ে গিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী মুকুল রায়। এদিন পশ্চিমবঙ্গের জন্য বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের দাবিতে সংসদ ভবন চত্বরে তৃণমূল সাংসদদের ধর্নায় নেতৃত্বও দিচ্ছেন তিনি। অন্যদিকে এই ধর্নায় যোগদানের জন্য দলের তরফে তাঁকে আমন্ত্রণ জানান হয়নি দাবি করে দীনেশ বলেছেন, এদিন সংসদে যাবেন তিনি।
বুধবার রেল বাজেটে ভাড়াবৃদ্ধির প্রস্তাব পেশের পর সাংসদদের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করার নির্দেশ দেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের বিরোধিতায় দীনেশ নরম তো হনইনি, উল্টে বিকেলে এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, তিনি ভগবানকেও ভয় পান না। দলনেত্রীর নাম না-করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, "গত ২ বছর রেল আইসিইউ-তে রয়েছে। রেলের স্বাস্থ্য উদ্ধারে যা করা উচিত, আমি তাই করেছি।" তাঁর প্রশ্ন, "আমি মহাকরণ থেকে রেলমন্ত্রক চালাব, না রেল ভবন থেকে?"
এর পরই রেলমন্ত্রীর পদ থেকে দীনেশ ত্রিবেদীর বিদায় কার্যত নিশ্চিত হয়ে যায়। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীকে ফ্যাক্স বার্তায় মুখ্যমন্ত্রী রেলমন্ত্রী হিসাবে মুকুল রায়ের নাম প্রস্তাব করেন। ওদিকে মুকুল রায় ও দীনেশ ত্রিবেদী, দুজনকেই কলকাতায় ডেকে পাঠান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখনই পরিষ্কার হয়ে যায়, রেল ভবনে পালাবদলের চিত্রটা।

অন্যদিকে গোটা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে রাতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে বৈঠকে বসেন মনমোহন সিং, সনিয়া গান্ধী ও প্রণব মুখোপাধ্যায়, আহমেদ প্যাটেলরা। প্রণববাবু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও কথা বলেন। বাজেট অধিবেশন পর্যন্ত দীনেশ ত্রিবেদীকে রেলমন্ত্রী পদে বহাল রাখার অনুরোধ করেন তিনি। যদিও তাতে চিঁড়ে ভেজেনি। এর পর মুকুল রায়ের নামে সিলমোহর দেয় কংগ্রেস কোর কমিটি।
সূত্রে খবর, বুধবার সংসদে রেলবাজেট পেশের সময় দীনেশ ত্রিবেদী ভাড়াবৃদ্ধির কথা ঘোষণা করতেই কলকাতা থেকে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এসএমএস পাঠান তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই এসএমএস যায় দলের আরও বেশ কয়েকজন সাংসদের কাছেও। নির্দেশ একটাই। রেলে-ভাড়া বাড়ানোর বিরোধিতা করুন। নেত্রীর কাছ থেকে এই নির্দেশ পেয়ে রীতিমতো হতবাক তৃণমূলের সাংসদরাও। সংসদের অলিন্দে দাঁড়িয়েই চড়া সুরে বিরোধিতা করেন রেল বাজেটের।
সুদীপ বাবুর এই বিরোধিতার পর রীতিমতো নড়েচড়ে বসে রাজনৈতিক মহল। প্রধানমন্ত্রী ও প্রণব মুখোপাধ্যায়, দুজনেই স্বাগত জানিয়েছেন বাজেটকে। সকলে মিলে খোঁজ নিতে শুরু করেন কেন, এমনটা বললেন সুদীপ বাবু। জল্পনা আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায় তৃণমূলের অপর মন্ত্রী সুলতান আহমেদের বক্তব্যে। তিনি বলেন, বাধ্য হয়েই ভাড়া বাড়ানোর সতর্ক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন রেলমন্ত্রী। মমতা ঘনিষ্ঠ সুলতানের বক্তব্যে এবার বিভ্রান্তি তুঙ্গে ওঠে। কিছুক্ষণের মধ্যেই অবশ্য নিজের অবস্থান থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যান সুলতান আহমেদ। একই নেতার ভিন্ন সুর। বলেন, আমার দলীয় নির্দেশ জানা ছিল না। দলের অবস্থানই আমার অবস্থান।
নিজের দলের মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এভাবে সরাসরি জেহাদ ঘোষণা? দিল্লি থেকে কলকাতা, আলোড়ন তৈরি হয় রাজনৈতিক মহলে। এবার মুখ খোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে। নন্দীগ্রামে কৃষক দিবসের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "আমাদের না-জানিয়ে রেল বাজেটে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। আমরা এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছি। কিছুতেই ভাড়া বাড়তে দেব না"।

কেন এমনটা হল ? সরকার অথবা দল যে কোনও ক্ষেত্রেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই তো শেষ কথা। তিনি কি জানতেন না, ভাড়া বৃদ্ধি হচ্ছে ? একাই এতবড় সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন দীনেশ ত্রিবেদী! রেলমন্ত্রী অবশ্য জানিয়েছেন এই ভাড়া বাড়ার দায় এবং দায়িত্ব তাঁর নিজের। এত চাপেও নিজের অবস্থান থেকে সরতে নারাজ দীনেশ ত্রিবেদী। জানিয়ে দিয়েছেন, কোনও ভাবেই তিনি অবস্থান বদলাচ্ছেন না।
সবমিলিয়ে সংঘাত এখন চরমে। প্রাথমিক খবর ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে পদত্যাগ করেছেন দীনেশ ত্রিবেদী। কিন্তু বারাকপুরের তৃণমূল সাংসদ নিজেই সে খবর খণ্ডন করায় পুরো বিষয়টি অন্য মাত্রা পেয়েছে। অন্যদিকে রাজ্যের জন্য বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ এবং ভাড়াবৃদ্ধির প্রস্তাব প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৃহস্পতিবার দেখা করতে যাচ্ছেন তৃণমূলের সাংসদরা। তৃণমূল নজিরবিহীনভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংসদে রেল বাজেটের বিরুদ্ধে ছাঁটাই প্রস্তাব আনবেন তাঁরা। বাজেট বিতর্কের জবাবী ভাষণে হয়ত ভাড়াবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করবেন মুকুল রায়। ঘটনা যাই-ই ঘটুক না কেন, রেল বাজেটকে ঘিরে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল যে এমন চেহারা নেবে তা বোধহয় ভাবতে পারেননি কেউই।

.