ঐতিহাসিক প্রতিবাদের বছর পেরিয়েও আজও নিগৃহীত এদেশের নারী নিরাপত্তা

এক বছর। ঠিক এক বছর আগে দিল্লির রাজপথে চলন্ত বাসে ধর্ষিত হয়েছিল মেয়েটি। শুধু ধর্ষণেই ক্ষান্ত হয়নি ধর্ষকদের নারকীয় প্রবৃত্তি। মেয়েটির উপর চলেছিল বীভৎস যৌন নিপীড়ন। রক্তাক্ত মেয়েটাকে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল ওরা। এই একটা ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর রাগে ক্ষোভে গর্জে উঠেছিল গোটা দেশ। রাজধানীর রাস্তার সঙ্গেই সমগ্র দেশ সাক্ষী ছিল মানুষের স্বতস্ফূর্ত প্রতিবাদের। আর সেই ধর্ষিত মেয়েটি? হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মৃত্যুর সঙ্গে অসম লড়াই চালিয়ে গিয়েছিল। শাস্তি চেয়েছিল অপরাধীদের। তার তীব্র জীবনবোধ অপরিসিম অক্সিজেন জুগিয়েছিল দেশ জোড়া আন্দোলনের বুকে। না, মেয়েটি বাঁচেনি। কিন্তু নিজের জীবন দিয়ে সদ্য তরুণী মেয়েটা রাষ্ট্রকে বাধ্য করেছিল আইন বদলাতে। কিন্তু তারপর?

Updated By: Dec 16, 2013, 03:47 PM IST

এক বছর। ঠিক এক বছর আগে দিল্লির রাজপথে চলন্ত বাসে ধর্ষিত হয়েছিল মেয়েটি। শুধু ধর্ষণেই ক্ষান্ত হয়নি ধর্ষকদের নারকীয় প্রবৃত্তি। মেয়েটির উপর চলেছিল বীভৎস যৌন নিপীড়ন। রক্তাক্ত মেয়েটাকে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল ওরা। এই একটা ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর রাগে ক্ষোভে গর্জে উঠেছিল গোটা দেশ। রাজধানীর রাস্তার সঙ্গেই সমগ্র দেশ সাক্ষী ছিল মানুষের স্বতস্ফূর্ত প্রতিবাদের। আর সেই ধর্ষিত মেয়েটি? হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মৃত্যুর সঙ্গে অসম লড়াই চালিয়ে গিয়েছিল। শাস্তি চেয়েছিল অপরাধীদের। তার তীব্র জীবনবোধ অপরিসিম অক্সিজেন জুগিয়েছিল দেশ জোড়া আন্দোলনের বুকে। না, মেয়েটি বাঁচেনি। কিন্তু নিজের জীবন দিয়ে সদ্য তরুণী মেয়েটা রাষ্ট্রকে বাধ্য করেছিল আইন বদলাতে। কিন্তু তারপর?

দেশজোড়া আন্দোলন, নয়া আইন, মিডিয়ার হইচই, সরকারের প্রতিশ্রুতি কোনও কিছুই কি আদতে বদলাতে পেরেছে দেশের সামগ্রিক নারী নিগ্রহের ছবিটাকে? দেখে নেওয়া যাক এক ঝলক

১৬ ডিসেম্বর ২০১২, নির্ভয়া ধর্ষণ কাণ্ডের ঘণ্টা তিনেক পর দিল্লি পুলিসের কাছে আরও একটি গণধর্ষণের খবর আসে। দক্ষিণ পশ্চিম দিল্লিতে চলন্ত বাসে একই কায়দায় ধর্ষিত হন এক মহিলা। নির্ভয়ার ঘটনায় যেখানে দেশ জুড়ে আলোড়ন পরে যায়, চার দুষ্কৃতী মৃত্যুদণ্ড হয়, সেখানে দিল্লি পুলিস দ্বিতীয় ঘটনাটির ক্ষেত্রে এফআইআর পর্যন্ত দায়ের করেনি। নিগৃহীতা মহিলার মেডিক্যাল পরীক্ষারও কোনও ব্যবস্থা করেনি পুলিস। দ্বিতীয় ঘটনায় অভিযুক্ত দুষ্কৃতীদের ধরতে বিন্দুমাত্র উদ্যোগও দেখাইনি তারা।

শুধু তাই নয় ওই একই দিনে দিল্লির কুসুমপুর পাহাড়ি অঞ্চলে ধর্ষিত হয় পাঁচ বছরের এক শিশুকন্যা। উত্তর বসন্ত কুঞ্জ পুলিস স্টেশনে ফোনে বার দুয়েক পুলিসের কাছে অভিযোগ জানানোর চেষ্টা করলেও পুলিসের তরফ থেকে কোনও রকম পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

দিল্লিতেই চলতি বছরের মার্চে সাত বছরের একটি শিশু ধর্ষিত হয় তার স্কুলেই।

এপ্রিলে পশ্চিম দিল্লিতে পাঁচ বছরের আর শিশু কন্যাকে অপহরণ করে ধর্ষণ করে দুই দুষ্কৃতী

অক্টোবরে পরিচিত দুই ব্যক্তির কাছে গাড়িতে ধর্ষিত হয় এক ১৭ বছরের এক কিশোরী।

পিতামপুরা মলে এক ২৭ বছরের ব্যবসায়ী মহিলা ধর্ষিত হন দুই ব্যক্তির কাছে।

পয়লা জানুয়ারি, ২০১৩ দিল্লি থেকে ২ঘণ্টার দূরে একটি গ্রামের মেয়েকে ধর্ষণ করে ছয় দুষ্কৃতী। সুবিচার আশায় ছ'মাস লড়াই চালায় সে। কিন্তু প্রশাসন, পরিবার, প্রতিবেশী সবার কাছ থেকেই প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করে মেয়েটি।

পয়লা জানুয়ারি, ২০১৩ দিল্লি থেকে ২ঘণ্টার দূরে একটি গ্রামের মেয়েকে ধর্ষণ করে ছয় দুষ্কৃতী। সুবিচার আশায় ছ'মাস লড়াই চালায় সে। কিন্তু প্রশাসন, পরিবার, প্রতিবেশী সবার কাছ থেকেই প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করে মেয়েটি।

বিহারে ট্রেন থেকে নামিয়ে গণধর্ষণের পর এক মহিলাকে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় গাছে।

ত্রিপুরায় জনসমক্ষে গণধর্ষণের শিকার হন এক গৃহবধূ।

সরকারী স্কুলে ৭ বছরের শিশু কন্যাকে ধর্ষিত হতে হয় শিক্ষকদের হাতে।

মহারাষ্ট্রে তিন নাবালিকা বোনকে ধর্ষণের পর খুন করে ফেলে দেওয়া হয় কুয়োতে।

কলকাতায় পরিতক্ত্য বাসে ধর্ষিত হন এক মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলা।

৭ জুলাই, কামদুনিতে গণধর্ষণের পর খুন করা হল তরুণী ছাত্রীকে। এখনও শাস্তি পায়নি দুষ্কৃতীরা।

খরজুনাতে ধর্ষিত হলেন গৃহবধূ। খুন করা হল তাঁকেও।

গেদেতে ধর্ষণের শিকার এক গৃহবধূ।

সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে মুম্বইতে ধর্ষিতা হন এক চিত্র সাংবাদিক।

তেহলকার সম্পাদক তরুণ তেজপালের হাতে যৌন নিগ্রহের শিকার তাঁরই সহকর্মী।

সুপ্রিমকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গাঙ্গুলির বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ আনলেন এক ইন্টার্ন।

কেরালার রিসর্টে গণধর্ষণের শিকার তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী।

আসলে এই তালিকা সীমাহীন। প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে এদেশে ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন কোটি কোটি মহিলা। তার মাত্র কয়েক শতাংশ পুলিসে অভিযোগ জানাতে পারেন। তার মধ্যেও মাত্র কয়েক শতাংশ স্থান পান খবরের কাগজের পাতায়। শুধুমাত্র ধর্ষণকেই যদি ধরা হয়, সেক্ষেত্রে পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রের সামাজিক পরিকাঠামোকে টপকে আইনের দোরগোড়ায় পৌঁছতে পারেন খুবই কম সংখ্যক মানুষ। এই সত্যিটাও সবারই জানা। কিন্তু এসব কিছু বাদ দিয়েও যাঁরা অভিযোগ নথিভুক্ত করতে পারেন তাঁদের মধ্যেও ক`জন সঠিক বিচার পান? আর বৈবাহিক ধর্ষণের শিকার হন যাঁরা? না, এদেশের শীর্ষ আদালত 'ব্যক্তিগত' শব্দের মোড়কে তাঁদের অভিযোগ জানানোর অধিকারও কেড়ে নিয়েছে।

দিল্লি ধর্ষণ কাণ্ডের পর সারা দেশে নারী সুরক্ষার প্রচুর তোড়জোড় হলেও পরিসংখ্যান বলছে মোটেও এদেশে নারী নিগ্রহ বা ধর্ষণের ঘটনার সংখ্যা কমেনি। বরং যত দিন যাচ্ছে বেড়েই চলেছে সংখ্যা।

দিবসগুলো পালিত হয়, শপথগুলো নয়... নির্ভয়ার ১৩ দিনের লড়াইয়ে আপনিও শপথ নিন
"RESPECT WOMEN"

.