দক্ষিণে সাম্রাজ্য বিস্তারে 'রাম মন্দির' পেয়ে গেলেন অমিত শাহ?
সবরীমালা মন্দির বিতর্কে ভক্তদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন অমিত শাহ।
নিজস্ব প্রতিবেদন: নির্বাচন সামনে আসছে, তার আগে হিন্দুত্বের পথেই হাঁটতে চলেছে মোদী-শাহ, তা আরও একবার স্পষ্ট করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী সেনাপতিই। সবরীমালায় মহিলা প্রবেশে সুপ্রিম কোর্টের রায় সত্ত্বেও যেভাবে অমিত শাহ বিক্ষোভকারী ভক্তদের পাশে দাঁড়ালেন, তাতে বিজেপির কৌশল স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের।
লোকসভা ভোটের আগে উত্তরে ফের উঠে গিয়েছে রাম মন্দিরের জিগির। সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, জোরকদমে চলছে পাথর কাটার কাজ। রাজস্থান ও গুজরাট থেকে আসছে ৭০ লরি পাথরও। বলাই বাহুল্য, আরএসএস-ভিএইচপির রাম মন্দির আন্দোলন থেকেই বিজেপির উত্থান। ২০১৯ সালের আগে মুখে 'সবকা সাথ সবকা বিকাশ' বললেও হিন্দুত্বই যে মোদী-শাহের হাতিয়ার হতে চলেছে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত রাজনৈতিক মহল। পেট্রোল-ডিজেলের চড়া দাম ও রাফাল নিয়ে বিরোধী আক্রমণের জেরে নাজেহাল মোদী সরকার। যে অচ্ছে দিনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোদী ক্ষমতায় এসেছিলেন, সেই প্রত্যাশা মেটেনি বলে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে দেশের মধ্যবিত্ত মহলে। তা আঁচ করতে পেরেই দক্ষিণে সবরীমালাকে আর এক অযোধ্যা করতে উঠে পড়ে লেগেছে গেরুয়া শিবির, মত রাজনৈতিক মহলের একাংশে। একথাই কয়েকদিন আগে বলেছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তিনি বলেছিলেন, সবরীমালাকে নিয়ে আর একটা অযোধ্যা বানাতে চাইছে আরএসএস-বিজেপি। সেই মাথায় গেরুয়া ফেট্টি পরা লোকজন, সেই এক কায়দা।
দক্ষিণের রাম মন্দির যে সবরীমালা হতে পারে তা বিলক্ষণ বোঝেন অমিত শাহও। আর সে কারণেই শনিবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ উড়িয়ে স্পষ্ট বলে দিলেন, ''কেরলের মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট করতে ষড়যন্ত্র করেছে বামপন্থীরা। কেরলের মানুষ ও আয়াপ্পার ভক্তদের আশ্বস্ত করতে চাই, তাঁদের পাশে পাহাড়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকবে বিজেপি। ভারতে এমন মন্দির আছে, যেখানে পুরুষদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। সেখানে কোনও পুরুষ প্রবেশের চেষ্টা করেন না''। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির মতে, কেরালায় সরকারের নিষ্ঠুরতার সঙ্গে লড়ছে ধর্মবিশ্বাস। ভক্ত ও সংঘ সেবকদের গ্রেফতারি নিয়ে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন বিজয়ন সরকারকে।
অমিত শাহ কার্যত বুঝিয়ে দিলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছে না বিজেপি। আর এই প্রশ্নই তুলে বিজেপি ও সঙ্ঘকে বিঁধেছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। বিজেপি সভাপতিকে জবাব দিয়ে বিজয়ন নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে লিখেছেন, অমিত শাহের বক্তব্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ও সংবিধানের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। নির্বাচিত সরকারকে ফেলে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন বিজেপি সভাপতি। এর দিকে নজর দিক সুপ্রিম কোর্ট। হুমকির জবাব গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই দেওয়া হবে।
সবরীমালায় ঋতুমতী মহিলাদের ঢুকতে না দেওয়ার বিরোধিতায় আন্দোলন করছেন ভক্তরা। তার মোকাবিলায় এখনও পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করেছে কেরল সরকার। শনিবারই তিরুঅনন্তপুরমের নিকটে স্বামী সন্দীপানন্দ গিরির আশ্রমে ভাঙচুর চালায় দুষ্কৃতীরা। উল্লেখ্য, সবরীমালায় মহিলাদের ঢুকতে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন সন্দীপানন্দ। এই হামলার সঙ্গে তার যোগসূত্র রয়েছে বলে ধারণা পুলিসের। কেরলের মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরোধিতা করেছিলেন স্বামী সন্দীপানন্দ। হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করেছে আরএসএস।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, সবরীমালাকে কেন্দ্র করে কেরলে মেরুকরণের রাজনীতি করছে সঙ্ঘ। লোকসভা ভোটের আগে সেই ফসলই ঘরে তোলার কৌশল নিয়েছে বিজেপি। এটা অনস্বীকার্য সবরীমালাকে কেন্দ্র করে গেরুয়া শিবিরের যে প্রভাব দেখা গিয়েছে, কেরলের মতো রাজ্যে যা বেনজির। ফলে আগামিদিনে দক্ষিণে হিন্দুত্বের রাজনীতি কতটা সফল হয়, সেটাই এখন দেখার। প্রসঙ্গত, গুজরাট নির্বাচনের প্রচারের সময় থেকে 'নরম হিন্দুত্বে'র কৌশল নিয়েছে কংগ্রেসও। নিজেকে শিবভক্ত বলে দাবি করেছেন রাহুল গান্ধী। মন্দিরে মন্দিরে দিয়েছেন পুজো। মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিসগঢ় ও রাজস্থানে ভোটের আগেও একই কৌশলে মন্দিরদর্শন করছেন কংগ্রেস সভাপতি। উন্নয়ন তরজা ছেড়ে কি ধর্মের নামেই ভোটে যাবে প্রধান দুই দল? যে প্রেক্ষাপটে বিচার্য হয়ে উঠবে, কে 'সহি হিন্দু'? উঠছে প্রশ্ন।
আরও পড়ুন- দলের আপত্তি সত্ত্বেও 'হিন্দু পাকিস্তান' মন্তব্যে অনড় শশী থারুর