দিল্লি এসে কেন্দ্রের বিরোধিতায় সরব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

পশ্চিমবঙ্গের পরিসর ছাড়িয়ে এবার কংগ্রেস-তৃণমূল শরিকি সংঘাতের বহিঃপ্রকাশ দেখা গেল দিল্লিতে। বুধবার দেশের রাজধানী শহরে এসে একটি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাত্কারে ফের একবার কেন্দ্রের ইউপিএ সরকারের কড়া সমালোচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Updated By: Nov 24, 2011, 09:27 AM IST

পশ্চিমবঙ্গের পরিসর ছাড়িয়ে এবার কংগ্রেস-তৃণমূল শরিকি সংঘাতের বহিঃপ্রকাশ দেখা গেল দিল্লিতে। বুধবার দেশের রাজধানী শহরে এসে একটি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাত্কারে ফের একবার কেন্দ্রের ইউপিএ সরকারের কড়া সমালোচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি জানান, পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক দুরবস্থায় কেন্দ্রের সাহায্য প্রয়োজন। কিন্তু তিনি কেন্দ্রের কাছে ভিক্ষা চাইবেন না। একই সঙ্গে মাওবাদীদের সঙ্গে তৃণমূলের যোগাযোগ নিয়ে বামেদের অভিযোগের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন মাওবাদীদের আন্দোলনে তিনি বা তাঁর দল কোনওদিনই যোগ দেননি।
রাজ্যে ক্ষমতায় আসার ছমাসের মধ্যেই বেশ কয়েকটি অপ্রীতিকর প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে নতুন সরকারকে। বুধবার দিল্লিতে সেই প্রশ্নগুলিরই উত্তর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাত্কারে কেন্দ্রের ইউপিএ সরকারের প্রতি কটাক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যের হাল ফেরাতে টাকা দরকার। তবে তার জন্য কেন্দ্রের কাছে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে যাবেন না। সম্প্রতি কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের উন্নয়নের জন্য অতিরিক্ত ১৫ হাজার কোটি টাকার দাবিও তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু ঘটনা হল, লাগাতার চাপ সত্বেও কেন্দ্র যে পশ্চিমবঙ্গের জন্য আলাদা করে কোনও আর্থিক প্যাকেজ দিতে এখনও প্রস্তুত নয়, তা এখন স্পষ্ট। এবং সেটা বুঝতে পেরে কেন্দ্রের উপর ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। আর টিভি ক্যামেরার সামনে একান্ত সাক্ষাত্‍কারে সেই ক্ষোভই তিনি উগরে দিয়েছেন বলে ধারণা রাজনৈতিক মহলের।
এদিন মাওবাদী মোকাবিলা প্রশ্নেও মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মাওবাদীদের সঙ্গে তৃণমূলের যোগাযোগের কথা অস্বীকার করে তিনি জানান, জঙ্গলমহলে শান্তিরক্ষার জন্য পুলিস প্রশাসনই ব্যবস্থা নিচ্ছে। কংগ্রেস হাইকমান্ডের সঙ্গে বোঝাপড়ার সমস্যা না হলেও পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের একাংশের সঙ্গে যে সম্প্রতি তৃণমূলের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে সে কথা কার্যত মেনে নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের `সামর্থ্য` ও `জনভিত্তি`কেও কটাক্ষ করেছেন তিনি।
গত ছমাসের শাসনকালে রাজ্যের বেহাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য বারেবারে সমালোচিত হতে হয়েছে নতুন সরকারকে। একের পর এক সরকারি হাসপাতালে শিশুমৃত্যুর ঘটনায় বিব্রত হতে হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। পূর্ণ সময়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিয়োগ না করে, স্বাস্থ্য দফতরের ভার এখনও পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী নিজের হাতে রাখায় প্রশ্ন তুলেছেন অধীর চৌধুরীর মতো রাজ্য কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতা। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, মাত্র ছ`মাসে যে রাজ্যের বেহাল স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে শোধরানো সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে রাজ্যের বেহাল স্বাস্থ্য পরিষেবার দায় পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের ঘাড়ে চাপিয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি ভবানীপুর থানায় গিয়ে  দলীয় কর্মীদের ছাড়িয়ে আনার গুরুতর অবিযোগ উঠেছিল মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগের অস্বীকার করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থেই তিনি ওই থানায় গেছিলেন। ভবানীপুর কাণ্ডের জন্য পরোক্ষে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন জোটশরিক কংগ্রেসের দিকেও।
তৃণমূলের আপত্তি অগ্রাহ্য করেই ফের রান্নার গ্যাস ও কেরোসিনের উপর ভর্তুকি তোলার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে কেন্দীয় সরকার। সরকারে দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক হওয়া সত্ত্বেও তৃণমূলকে যে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয় না সেকথাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। স্পষ্ট করে দিয়েছেন, অদূর ভবিষ্যতে বিমান পরিবহণে বিদেশি লগ্নি, প্রস্তাবিত পেনশন বিল নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে সংঘাতে যাওয়ার কথা।
বিভিন্ন প্রশ্নে কংগ্রেসের আচরণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও তাত্‍পর্যপূর্ণ ভাবে জোট ভাঙ্গার বিষয়ে কোনও পূর্বাভাস দেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও তাঁর এই সাক্ষাত্‍কারে
ইউপিএ জোটের অভ্যন্তরীণ চোরাস্রোত নতুন মাত্রা পেল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

.