প্রধানমন্ত্রীকে হুঁশিয়ারি দিলেও সরকার ছাড়ছে না তৃণমূল

পাঁচ দিনের টানটান স্নায়ুযুদ্ধের পর কংগ্রেসের সঙ্গে সম্মানজনক রফার পথই বেছে নিল তৃণমূল। তবে সেই সঙ্গেই রইল ইউপিএ জোটের 'সিনিয়র পার্টনার'-এর প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি। আপাতত ইউপিএ সরকারেরই থাকছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।

Updated By: Nov 8, 2011, 04:55 PM IST

পর্বতে মুষিক প্রসব!
পাঁচ দিনের টানটান স্নায়ুযুদ্ধের পর কংগ্রেসের সঙ্গে সম্মানজনক রফার পথই বেছে নিল তৃণমূল। তবে সেই সঙ্গেই রইল ইউপিএ জোটের 'সিনিয়র পার্টনার'-এর প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি। আপাতত ইউপিএ সরকারেরই থাকছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। তবে সেই সঙ্গেই তৃণমূল সুপ্রিমো স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে পেট্রাপণ্যের দাম বাড়ানো হলে সরকার থেকে সরে আসবেন তাঁরা।
মঙ্গলবার সন্ধেয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাত্‍ করে ইউপিএ জোটের সমন্বয় বাড়ানোরই বার্তা দিয়েছে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস সংসদীয় দল। শরিক দলগুলির সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা না করে বারবার কংগ্রেস নেতৃত্ব একক সিদ্ধান্তে পেট্রোপণ্যের দাম বাড়ানোয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে চরম ক্ষুব্ধ, সে কথাও ৭ রেসকোর্স রোডের বাসিন্দাকে জানিয়েছেন তাঁরা।
অন্য দিকে কলকাতার রাজভবনে এম কে নারায়ণনের মধ্যস্থতায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনার পর রাজ্যের আর্থিক দাবিদাওয়া নিয়ে বক্তব্য পেশ করার পাশাপাশি পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারের উপর সমর্থন পুনর্বিবেচনার মতো অপ্রিয় প্রসঙ্গেরও অবতারণা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট, এবারের পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধির ইস্যুতে নয়, অদূর কিংবা সুদূর ভবিষ্যতে যদি কেন্দ্র যদি পেট্রোপণ্যের দাম বাড়ায়, তবেই সরকার থেকে সরে আসবে তৃণমূল।
রাজ্যের বেহাল আর্থিক অবস্থায় এই মুহুর্তে কেন্দ্রীয় সাহায্য ছাড়া গতি নেই। সাহায্য আদায়ে প্রধানমন্ত্রীর ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধি ইস্যুকে হাতিয়ার করেছে তৃণমূল। আর সেই আর্থিক প্যাকেজের বিষয়ে কথা বলতেই এদিন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের মধ্যস্থতায় রাজভবনে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গের জন্য বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের পাশাপাশি এই বৈঠকে প্রণববাবুর কাছে কেন্দ্র থেকে গৃহীত ঋণ মকুবেরও দাবি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও, এমন একটি বিষয়ে রাজ্যপাল কেন মধ্যস্থের ভূমিকা নিলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেই সঙ্গে প্রশ্ন, রাজ্যের আর্থিক দাবিদাওয়া সম্পর্কিত এমন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে রাজ্যেরই অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রর
অনুপস্থিতি নিয়ে।
রাজভবনে বৈঠকের পর মিডিয়ার সামনে প্রণববাবু জানান, রাজ্যে আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁর। যদিও তৃণমূল নেত্রীর সাংবাদিক সম্মেলনে কার্যত রাজভবনের বৈঠকের বিষয়বস্তু উহ্য থেকে গিয়েছে। পরিবর্তে প্রাধান্য পেয়েছে ইউপিএ জোটের অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েনের বিষয়টি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এর পর কেন্দ্রীয় সরকার যদি তেল কোম্পানিগুলির দাবি মেনে পেট্রোপণ্যের দাম বাড়ায় তবে সরকারে থাকবে না তৃণমূল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল সংসদীয় দলের প্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রীকে এ কথা জানানোর পর, তিনি সাফাই দেন যে পেট্রোপণ্যের দাম কমা-বাড়ার বিষয়টি আন্তর্জাতিক বাজারের উপর নির্ভরশীল। সরকারের এ বিষয়ে তেমন কিছু করার নেই। এই মুহূর্তে ডিজেল, রান্নার গ্যাস এবং কেরোসিনের দাম বাড়ানোর কোনও কর্মসূচি কেন্দ্রীয় সরকারের নেই বলেও তৃণমূলের সংসদীয় দলের প্রতিনিধিদের জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এদিন রাজভবনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের পরই দিল্লি উড়ে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে অবহিত করেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।

.