ফের মাও কবলে রেড করিডোর

প্রথমে ছত্তিসগড়ের বাস্তারে কংগ্রেস কনভয়ে হামলা। তারপর বিহারের জামুইয়ে দিনে-দুপুরে যাত্রীবাহী ট্রেনে অবাধে হামলা। রেড করিডরে ফের উপস্থিতির জানান দিচ্ছে মাওবাদীরা। তবে যাত্রীবোঝাই ট্রেনের ওপর এভাবে নির্বিচার হামলার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। জ্ঞানেশ্বরী কাণ্ড ছাড়া এই ধরনের নির্বিচার হামলার নজির মাওবাদীদের দিক থেকে নেই।

Updated By: Jun 14, 2013, 11:24 PM IST

প্রথমে ছত্তিসগড়ের বাস্তারে কংগ্রেস কনভয়ে হামলা। তারপর বিহারের জামুইয়ে দিনে-দুপুরে যাত্রীবাহী ট্রেনে অবাধে হামলা। রেড করিডরে ফের উপস্থিতির জানান দিচ্ছে মাওবাদীরা। তবে যাত্রীবোঝাই ট্রেনের ওপর এভাবে নির্বিচার হামলার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। জ্ঞানেশ্বরী কাণ্ড ছাড়া এই ধরনের নির্বিচার হামলার নজির মাওবাদীদের দিক থেকে নেই। 
নেপালের পশুপতি থেকে অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুপতি। এনডিএ জমানায় দেশের বামদিক ঘেঁষে বিশাল এই ভূভাগকেই রেড করিডর হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন তত্কালীন উপপ্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণী। পরের কয়েকবছরে শক্তি আরও বাড়ে মাওবাদীদের। মাওবাদী অ্যাকশন স্কোয়াডের প্রধান মাল্লোজুলা কোটেশ্বর রাও বা কিষেণজির দাপটে কার্যত মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয় দেশের পূর্বপ্রান্তের জঙ্গলময় অঞ্চলগুলি। ২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলে কিষেণজির মৃত্যুর পর, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার-ঝাড়খণ্ড এবং ওড়িশায় অনেকটাই ধাক্কা খেয়েছিল মাওবাদীদের সংগঠন। এরপর বিভিন্ন রাজ্যে যৌথ বাহিনীর অভিযানে সাফল্য এবং বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা গ্রেফতার হওয়ার পর কার্যত ছত্তিসগড়ের জঙ্গলে গুটিয়ে যায় তারা। 
প্রায় দেড়বছর পর ফের রেড করিডরে নিজেদের উপস্থিতির জানান দিল মাওবাদীরা। প্রথম আঘাত এল মাওবাদীদের শক্তঘাঁটি ছত্তিসগড় থেকেই। ২৫ জুন বাস্তারে কংগ্রেস কনভয়ে মাওবাদী হামলায় মৃত্যু হয় ছত্তিসগড়ের একাধিক শীর্ষস্থানীয় কংগ্রেস নেতার। পরবর্তী হামলা বিহারের জামুইয়ে। বৃহস্পতিবার দুপুরে জামুইয়ের কাছে কুন্দর হল্টে ধানবাদ-পাটনা ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসে হামলা চালায় প্রায় বেশ কয়েকশো মাওবাদী। জামুইয়ের ট্রেনে হামলা আতঙ্ক ছড়ালেও এই হামলার উদ্দেশ্য নিয়ে ধন্ধে গোয়েন্দারা। কারণ এর আগে বিহার ও ঝাড়খণ্ডে একাধিক ট্রেনে মাওবাদীরা হামলা চালালেও, দিনের বেলায় হামলার ঘটনা এই প্রথম। ট্রেন থেকে মাত্র তিনটি স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র লুঠ করেছেন মাওবাদীরা। ওই কটা অস্ত্র লুঠের জন্য মাওবাদীরা এত বড় মাত্র হামলার প্রস্তুতি কেন নিল তা নিয়েও প্রশ্ন জেগেছে গোয়েন্দাদের মনে।
নির্বিচারে অপরিচিত মানুষের ওপর হামলা মাওবাদী রাজনীতির অঙ্গ নয়। হামলার পর অবাধেই জঙ্গলে গা ঢাকা দিতে পেরেছে প্রায় শখানেক মাওবাদী। কয়েকঘণ্টার মধ্যেই চিরুণি তল্লাসি শুরু হলেও, অভিযুক্তদের ধরতে এখনও তেমন কোনও সাফল্য পায়নি যৌথবাহিনী। অর্থাত্ নিশ্চিন্তে গা ঢাকা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েই ট্রেনে হামলা চালিয়েছিল মাওবাদীরা। গোয়েন্দাদের একাংশ বলছেন, কিষেণজির হত্যার পর মাওবাদীরা নিজেদের রণনীতি অনেকটাই বদলেছে। এখন নিজেদের তরফে সবচেয়ে কম ক্ষতি হয় এমন ক্ষেত্রেই হামলার পথে যাচ্ছে মাওবাদীরা। এবং হামলাও হচ্ছে বড়মাপের ক্ষতক্ষতি করার উদ্দেশ্য নিয়েই। যেমন হয়েছিল ছত্তিসগড়ের বাস্তারে কংগ্রেস কনভয়ে হামলার ক্ষেত্রে। কিন্তু, তাহলেও, জামুইয়ে ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস আটকে রেখে মাওবাদীরা তাণ্ডব চালাল কেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
 

.