Subhash Chandra Bose Jayanti: সন্ন্যাসী হতে চাওয়া ঘরছুট তরুণ সুভাষচন্দ্রকে সেদিন কী বলেছিলেন স্বামী ব্রহ্মানন্দ!

Netaji Subhas Chandra Bose Birth Anniversary: উত্তাল অশান্ত মন তাঁর তখন। ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন। যোগ দেবেন রামকৃষ্ণ সংঘে। বিবেকানন্দের জ্বলন্ত আদর্শ তাঁর মনে। এইরকম এক মানসিক অবস্থায় রাখাল মহারাজের সঙ্গে দেখা কৈশোর-পেরনো সদ্য তরুণ সুভাষের!

Updated By: Jan 23, 2023, 01:20 PM IST
Subhash Chandra Bose Jayanti: সন্ন্যাসী হতে চাওয়া ঘরছুট তরুণ সুভাষচন্দ্রকে সেদিন কী বলেছিলেন স্বামী ব্রহ্মানন্দ!

সৌমিত্র সেন

স্থান বারাণসী। সেখানে তখন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের দুটি ‌শাখাকেন্দ্র। এরই একটিতে অবস্থান করছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণের সাক্ষাৎশিষ্য স্বামী ব্রহ্মানন্দ, যিনি রাখাল মহারাজ নামেই বেশি পরিচিত। এবং যিনি রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রথম প্রেসিডেন্টও। এহেন মহারাজের সঙ্গে সেখানে দেখা তরুণ সুভাষচন্দ্র বসুর। উত্তাল অশান্ত মন তাঁর তখন। ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন। মন বলছে, তিনি যোগ দেবেন রামকৃষ্ণ সংঘে। বিবেকানন্দের জ্বলন্ত আদর্শ তাঁর মনের মধ্যে তখন জ্বলছে। ঠিক এইরকম মানসিক অবস্থায় রাখাল মহারাজের সঙ্গে দেখা কৈশোর-পেরনো সদ্য তরুণ সুভাষের।

আরও পড়ুন: Parakram Diwas: পরাক্রম দিবসে আন্দামানের ২১ দ্বীপের নামকরণ, উদ্বোধন জাতীয় স্মৃতি সৌধের মডেল

ছোট থেকেই স্বামী বিবেকানন্দের ত্যাগের মন্ত্রে সুভাষের জীবন উদ্বেলিত ছিল। কলেজে পড়তে পড়তেই মনে তাঁর তোলপাড় আকুতি-- আর নয়, এবার বেরিয়ে পড়তেই হবে গুরুর সন্ধানে। তাঁর বয়স তখন ১৭ বছর। তখনই এই অভাবিত ঘটনা ঘটল তাঁর জীবনে।

সুভাষের দূর সম্পর্কের ‌এক ‌আত্মীয়যুবক এসেছিলেন কটকে। সুভাষ একদিন গেলেন তাঁর কাছে। সেই যুবকটিও ছিলেন ‌স্বামী বিবেকানন্দের ভক্ত। তাঁর টেবিলে রাখা ছিল স্বামীজির লেখা বইপত্র। সুভাষ সেগুলি ‌পড়তে ‌শুরু করলেন। বিবেকানন্দ-প্রীতি ছিলই, সেটা ক্রমান্বয়ে বাড়তে লাগল। নতুন দিগন্ত যেন খুলে যেতে শুরু করল ‌তাঁর সামনে। শুধু তাই নয়, সন্ন‍্যাসী হওয়ার প্রবল বাসনাও তখন দেখা দিল তাঁর মনে। 

আরও পড়ুন: নেতাজি জয়ন্তীতে নয়া ভারত নির্মাণে সংঘবদ্ধভাবে কাজের ডাক মোহন ভাগবতের

কিন্তু সন্ন্যাসী হতে গেলে প্রয়োজন গুরুর। গুরু কোথায় পাবেন এবং কীভাবে? 

সুভাষ শুনেছিলেন এমন সন্ন্যাসীরা হিমালয়ে আছেন, যাঁরা প্রকৃত পথের সন্ধান দিতে পারেন। ব্যস! বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লেন। দু-লাইনের লেখা একটি পোস্টকার্ড দিয়ে পরে জানালেন বাড়িতে। তারপর ঘুরে বেড়াতে লাগলেন উত্তর ভারতের তীর্থ। সঙ্গে তাঁর আরও দুই বন্ধুও। শুরু হল এক অন্যরকম পরিব্রাজক জীবন। লছমনঝোলা, হৃষীকেশ, হরিদ্বার, গয়া, মথুরা, বৃন্দাবন হয়ে সুভাষচন্দ্রেরা অবশেষে এলেন বারাণসীতে।

সেখানে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের বাড়িতে উঠলেন। দেখা হল
রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রথম সভাপতি ছিলেন স্বামী ব্রহ্মানন্দ, রাখাল মহারাজ তথা ‘রাজা মহারাজে’র সঙ্গে। সুভাষচন্দ্র পরে লিখেছেন-- 'বারাণসীতে স্বামী ব্রহ্মানন্দ আমাদের সাদর অভ্যর্থনা জানালেন, তিনি আমার বাবা ও ‌পরিবারের অনেককেই চিনতেন। এখানে আমরা কয়েকদিন রইলাম।' সেই সময়েই‌ ‌একদিন নিজের মনোবাসনা প্রকাশ করলেন সুভাষ। সন্ন্যাস প্রার্থনা করলেন স্বামী ব্রহ্মানন্দের কাছে। সুভাষের প্রার্থনা শুনে স্বামী ব্রহ্মানন্দ তরুণ সুভাষের মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন। যেন তাঁর জীবনের অনাগত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে রইলেন! তারপর তাঁকে সন্ন্যাস নিতে নিবৃত্ত করলেন।

শোনা যায়, সন্ন্যাসী হতে না পারলেও স্বামী ব্রহ্মানন্দের দর্শনে সেদিন সুভাষের মনে অপার শান্তি নেমেছিল। বন্ধু দিলীপকুমার রায়কেও তিনি বলেছিলেন-- 'ওই রাখাল মহারাজই আমাকে কাশী থেকে ফেরত পাঠান, বলেন, আমাকে দেশের কাজ করতে হবে!'

সেদিন সুভাষচন্দ্রেকে ঠিক কী বলেছিলেন রাখাল মহারাজ ?

তাঁদের সাক্ষাতের কোনও প্রত্যক্ষ লিপিবদ্ধ বর্ণনা নেই, তা ছিল দুই মহামানবের রুদ্ধদ্বার একান্ত আলাপ। তবে শোনা যায়, স্বামী ব্রহ্মানন্দ সেদিন সুভাষকে বলেছিলেন, সন্ন্যাসজীবন তাঁর জন্য নয়, বরং অন্তরে সন্ন্যাসী থেকে দেশের জন্য আত্মোৎসর্গ করতে হবে তাঁকে, এতেই তাঁর সিদ্ধি!ব্যস! চিরতরে ঘুরে গেল সুভাষের জীবনের অভিমুখ।

(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App) 

.