প্রতিবাদের তিন রূপ,পথ আলাদা

একই দিনে তিনটে বড় সভা। দুটো রাজ্যের রাজধানীতে আর একটা দেশের প্রাণকেন্দ্রে। বামফ্রন্ট, তৃণমূল, কংগ্রেস তিন দলই আজ প্রতিবাদের মঞ্চ হিসাবে বেছে নিল রাস্তাকে। জাতীয় রাজনীতিতে মাটি ফিরে পেতে দিল্লির যন্তর মন্তরে ধরনায় তৃণমূল কংগ্রেস। মমতাকে পাল্টা চাপ দিতে তাঁর দুর্গে মিছিলের পথে কংগ্রেসর। আর রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার ক্রমশ অবনতি হওয়ার প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে বামফ্রন্টের ধর্মতলায় বিরাট সমাবেশ।

Updated By: Oct 1, 2012, 01:11 PM IST

একই দিনে তিনটে বড় সভা। দুটো রাজ্যের রাজধানীতে আর একটা দেশের প্রাণকেন্দ্রে। বামফ্রন্ট, তৃণমূল, কংগ্রেস তিন দলই আজ প্রতিবাদের মঞ্চ হিসাবে বেছে নিল রাস্তাকে। জাতীয় রাজনীতিতে মাটি ফিরে পেতে দিল্লির যন্তর মন্তরে ধরনায় তৃণমূল কংগ্রেস। মমতাকে পাল্টা চাপ দিতে তাঁর দুর্গে মিছিলের পথে কংগ্রেসর। আর রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার ক্রমশ অবনতি হওয়ার প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে বামফ্রন্টের ধর্মতলায় বিরাট সমাবেশ।
কংগ্রেস-তৃণমূলের রাস্তা আলাদা হওয়ার পর এই প্রথম দিল্লিতে কেন্দ্রের প্রতিবাদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্পর্ক বিচ্ছেদের পর এই প্রথম কলকাতার রাস্তায় তৃণমূলের প্রতিবাদে কংগ্রেসও। সম্মুখ সমরে! সোমবার তৃণমূল নেত্রী কেন্দ্রের `জন বিরোধী` নীতির প্রতিবাদে দিল্লির যন্তর মন্তরে ধরনায় বসছেন। বেশ কিছু অবিজেপি ও অকংগ্রেসী দলগুলিকে এদিনের প্রতিবাদ কর্মসূচীতে পাশে থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে তৃণমূলের তরফে। ফলত, এদিন দিল্লির প্রাণকেন্দ্র থেকে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ উঠে আসতে পারে মবে মনে করা হচ্ছে। তৃণমূলের একাংশের মন্তব্য, খুচরো ব্যবসায় বিদেশী বিনিয়োগ, রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি কমানো ও ডিজেলের দামবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে তাঁদের অবস্থান স্পষ্ট করতেই এই প্রতিবাদ।
এফডিআই নিয়ে সংসদে মুলতুবী প্রস্তাব আনতে চলেছে বিজেপি। তবে কী লোকসভার মুখ্য বিরোধী দলের আনা প্রস্তাবকে সমর্থন করবে তৃণমূলও? এনিয়ে জল্পনা এখন তুঙ্গে, তবে এবিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলতে চাননি প্রাক্তন রেল মন্ত্রী মুকুল রায়। তিনি বলেন, "কে প্রস্তাব আনছে সেটা বড় কথা নয়, আসল কথা কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত জন বিরোধী।" সেইসঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, অধুনা অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় এফ এফডিআই নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আশ্বাস দিলেও, তা বাস্তবায়িত হয়নি।
জোটে থাকার সময় থেকেই ধীরে ধীরে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হচ্ছিল তৃণমূলের। বেশ কয়েকবার ইউপিএ থেকে সরে আসার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। অবশেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে জোট সম্পর্ক ছিন্ন করে বেড়িয়ে আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর থকেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রশ্ন শানানো অব্যাহত রেখেছেন তৃণমুল নেত্রী। কখনও ফেসবুকে আবার কখনও সরাসরি রাস্তায় নেমে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে তৃণমূল। এদিনও ফেসবুকে বেশ কড়া ভাষায় মনমোহন সরকারের সমালোচনা করেছেন মমতা, "আমাদের লড়াইটা সাহসিকতার সঙ্গে ও সংঘবদ্ধ হয়ে লড়তে হবে"। খোদ তৃণমূল সুপ্রিমোর এহেন মন্তব্য থেকে সরল সমীকরণ করা যায়, কোনও ভাবেই আর কংগ্রেসের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে রাজি নন তিনি। এখন দেখার সোমবারের সভা থেকে কী বার্তা দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দিল্লিতে এফডিআই-এর বিরুদ্ধে যখন ধরনায় বসছে তৃণমূল কংগ্রেস, তখন এফডিআই-এর পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে কলকাতায় তৃণমূল নেত্রীর খাসতালুকে পাল্টা মিছিল করতে চলেছে কংগ্রেস। বিড়লা তারামণ্ডলের কাছে ইন্দিরা গান্ধীর মূর্তির সামনে থেকে শুরু হয়ে হাজরা পর্যন্ত যাবে কংগ্রেসের মিছিল। খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে দেশের ভাল হবে, সাধারণ মানুষকে এ কথা বুঝিয়ে ২০০১৪ লোকসভা ভোটে যেতে চায় কংগ্রেস। তার আগে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে এ রাজ্যে তৃণমূলের সঙ্গে আট ঘাট বেঁধেই ময়দানে নামতে চলেছে তারা। তাই, এদিনের মিছিল থেকে একদিকে এফডিআই-এর পক্ষে জনসমর্থন জোগাড়, অন্যদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কড়া বার্তা দিতে চাইছে কংগ্রেস নেতৃত্ব। এআইসিসি-র নির্দেশে আয়োজিত এই মিছিল থেকে প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা হোর্ডিং-প্ল্যাকার্ডে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সরব হবেন বলে জানানো হয়েছে।  
মিছিল পাল্টা মিছিলে যখন সরগরম কলকাতা থেকে দিল্লি, তখন কেন্দ্র ও রাজ্যের পদক্ষেপের সমালোচনায় সোমবার ধর্মতলায় সমাবেশ করতে চলেছে সিপিআইএম। দুপুর ১টা থেকে শুরু হবে সভা। সিপিআইএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির ডাকে আয়োজিত সভায় বক্তব্য রাখবেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বিমান বসু, গৌতম দেব সহ অন্য বাম নেতারা। রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ, নির্বাচিত পঞ্চায়েতের ক্ষমতা খর্বের মতো বিভিন্ন ইস্যুতে এই সভার আয়োজন করা হয়েছে। ওই সভায় কেন্দ্রের এফডিআই নীতির বিরোধিতাও করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। নেতাদের বক্তব্যে উঠে আসতে পারে মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গও। সমাবেশ ঘিরে ইতিমধ্যেই পায়ে পায়ে শহরে ভিড় জমাতে শুরু করেছেন দলীয় সমর্থকেরা। শিয়ালদা স্টেশন থেকে মিছিল করে রানি রাসমনি রোডের সমাবেশ স্থলে আসবেন সিপিআইএম কর্মী-সমর্থকরা। রবিবার রাতে সভাস্থল ঘুরে দেখেন বিমান বসু, গৌতম দেব সহ অন্য বাম নেতারা। সমাবেশের অনুমতি নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ করেন সিপিআইএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক গৌতম দেব।    
তিনটি দলের মহা কর্মসূচী থেকে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য উঠে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। তৃণমূলের দাবি, দিল্লিতে কলকাতার কোনও কর্মী সমর্থককে নিয়ে জাননি তাঁরা। শুধুমাত্র দলীয় সাংসদ ও স্থানীয় লোকজনদের নিয়েই ধরনা মঞ্চ ভরানোর পক্ষপাতী তৃণমূল নেত্রী। অন্যদিকে মমতার অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে হাজরায় কংগ্রেসর মিছিল। পঞ্চায়েত নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়াবেন প্রদেশ নেতারা। এমনটাই মত সংশ্লিষ্ট মহলের। অন্যদিকে, বামেদের ধর্মতালা চত্তরে সমাবেশ একদিকে যেমন শক্তি পরীক্ষার চ্যালেঞ্জ, ঠিক তেমনি কেন্দ্র ও রাজ্যের বিরুদ্ধে নিজেদের লড়াই জারী রাখার কর্মসূচীও বটে। সোমাবারের মুখ্য তিন দলের কর্মসুচীগুলি থেকে রাজপথের রাজনীতি কোন দিকে বাঁক নেয়, সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।

.