ট্রাম্প ইরান-চুক্তি বাতিল করায় শাঁখের করাতে ভারত

চাবাহার বন্দর থেকে অপরিশোধিত তেল- কী প্রভাব পড়বে চুক্তি বাতিলে?  

Updated By: May 9, 2018, 07:26 PM IST
ট্রাম্প ইরান-চুক্তি বাতিল করায় শাঁখের করাতে ভারত

নিজস্ব প্রতিবেদন: ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি বাতিল করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। কূটনৈতিক মহলের মতে, এই সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়তে চলেছে তেহরান-নয়াদিল্লি সম্পর্কেও। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা সত্য হলে এবার বড়সড় ধাক্কা খেতে পারে ভারতীয় অর্থনীতি। মনে করা হচ্ছে, তেলের দাম বাড়া থেকে জিডিপি-সব ক্ষেত্রেই অনুঘটক হতে পারে এই চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত। ২০১৫ সালে পরমাণু চুক্তির পর ইরানের উপর থেকে উঠে যায় আর্থিক নিষেধাজ্ঞা। তারপর সে দেশের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতে জোর দেয় ভারত সরকার। বর্তমানে ইরান ভারতের অন্যতম কৌশলী সহযোগী। তাদের চাবাহার বন্দর ব্যবহার করে পাকিস্তানের উপরে চাপ বাড়িয়েছে নয়াদিল্লি। এমতাবস্থায় ইরানের সহ্গে পরমাণু চুক্তি ছিন্ন করার মার্কিন সিদ্ধান্ত তাই ভারতীয় কূটনৈতিক মহলের কপালে চিন্তার ভাঁজ বাড়াচ্ছে।

ঠিক কী কী কারণে চিন্তিত ভারত?

তেলের দামবৃদ্ধি- অপরিশোধিত তেল আমদানির নিরিখে বিশ্বের তৃতীয় দেশ ভারত। কিন্তু ইরানের উপরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চাপালেও তার প্রভাব পড়বে না ভারতের তেল আমদানিতে। তবে মার্কিন মুলুকের পদাঙ্ক অনুসরণ করে যদি ইউরোপীয় দেশগুলিও একই ধরনের নিষেধাজ্ঞার পথে হাঁটে, সেক্ষেত্রে সমস্যায় পড়বে নয়াদিল্লি। কারণ, ইরানকে তেলের দাম মেটানো হয় ইউরোয়। ফলে, আপাতত এক্ষেত্রে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কোন পথে হাঁটে, সেদিকেই সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে নয়াদিল্লি।

তবে ইরানের উপরে মার্কিন আর্থিক নিষেধাজ্ঞার ফলে বিশ্ব বাজারে এক ধাক্কায় বাড়বে তেলের দাম। বিশ্বব্যাঙ্কের মতে, ২০ শতাংশ দাম বাড়তে চলেছে অপরিশোধিত তেলের। এর জেরে টাকার অবমূল্যায়ন, দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি ও জিডিপি-তে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা অনেকের। 

চাবাহার বন্দর- পাকিস্তানের মাটিতে চিনের নিয়ন্ত্রণাধীন গদর বন্দর থেকে ৮৫ কিলোমিটার দূরে ইরানের চাবাহার। এই বন্দরের উন্নয়নে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে সংযোগেস্থাপন করবে চাবাহার। এর ফলে ভারতের রফতানিকৃত পণ্যের পরিবহণ খরচ এক তৃতীয়াংশ কমে যাবে। কিন্তু আমেরিকা-সহ অন্যন্য দেশও যদি ইরানকে একঘরে করে সেক্ষেত্রে বিপদ বাড়বে ভারতের।

নজরে চিন- ইরান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূরত্ব বাড়লে সেই জায়গা পূরণে সচেষ্ট হবে চিন ও তাদের সহযোগী পাকিস্তান। ইতিমধ্যেই চিনের প্রভাব বাড়ছে নেপাল, মলদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কায়। ইরানেও বেজিংয়ের উপস্থিতি বাড়লে ভৌগলিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়বে ভারত। উল্লেখ্য, ট্রাম্পের পদক্ষেপ আঁচ করে চাবাহার বন্দরের উন্নয়নে ইতিমধ্যেই পাকিস্তান ও চিনকে আমন্ত্রণ জানিয়ে রেখেছে ইরান। 

ধন্দে ভারত- ইতিমধ্যে সাংহাই কর্পোরেশনে ইরানকে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছে চিন। এই গোষ্ঠী মার্কিনবিরোধী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত পারে। আর এই বিষয়টি একেবারেই চায় না ভারত।  বলা যায়, শাঁখের করাতে কেন্দ্রীয় সরকার। বর্তমান পরিস্থিতিতে ইরানের পাশে দাঁড়ালে গোঁসা হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। আবার ইরানের সঙ্গ ছাড়লে সে দেশে প্রভাব বাড়াবে  চিন ও পাকিস্তান, যা কখনই কাম্য নয় নয়াদিল্লির। ফলে ভারসাম্যের কূটনীতির এই চ্যালেঞ্জ ভারত কতটা সামলাতে পারে, সেটাই এখন দেখার। 

আরও পড়ুন- ডিজিটাল ইন্ডিয়ায় রেলস্টেশনের ওয়াইফাই ব্যবহার করে সিভিল সার্ভিসে উত্তীর্ণ কুলি 

.