দাদুর জন্য অক্সিজেন চেয়ে জড়িয়ে গেলেন 'ক্রিমিনাল' কেসে!
কোভিড পরিস্থিতিতে কেউ উত্তেজনা ছড়ালেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, দু'দিন আগে উত্তর প্রদেশে এই মর্মে নির্দেশ জারি করেন যোগী আদিত্যনাথ।
নিজস্ব প্রতিবেদন: পরিবেশের শাান্তিতে কেউ বিঘ্ন ঘটালেই ব্যবস্থা নিতে হবে তাঁর বা তাঁদের বিরুদ্ধে। ক'দিন আগেই কোভিড পরিস্থিতিতে জেরবার উত্তর প্রদেশে এই নির্দেশিকা জারি করেছিলেন সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী। সেই নির্দেশের সূত্রেই এক তরুণকে 'ক্রিমিনাল' কেসে জড়িয় দিল সে রাজ্যের পুলিস।
কেন তিনি ক্রিমিনাল?
তাঁর একটাই দোষ, তিনি তাঁর দাদুর জন্য টুইটে অক্সিজেনের সাহায্য চেয়েছিলেন। Amethi Police মঙ্গলবার সন্ধেবেলা টুইট করে জানিয়েছে যে, তারা এক তরুণের বিরুদ্ধে একটি ক্রিমিনাল কেস দায়ের করেছে। কারণ তরুণটি টুইটারে অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন!
রাজ্য়ে যদি কোনও বিষয়ে কেউ কোনও আতঙ্ক বা ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে তোলে বা যদি জনগণের মনের স্থিরতায় বিঘ্ন ঘটে (State or against the public tranquility) এমন কোনও বিষয় গুজবের মতো করে ছড়িয়ে (circulating a rumour) দেয়, তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোমবার সন্ধেবেলা Shashank Yadav নামের এক ব্যক্তি টুইটে actor Sonu Sood-কে ট্যাগ করে অক্সিজেন সিলিন্ডার চান। তিনি কিন্তু তাঁর টুইটে Covid-19 বা অন্য রকম রোগের উল্লেখ করেননি।
শশাঙ্কের এক বন্ধু Ankit রাত সাড়ে আটটা নাগাদ বন্ধুর টুইটকে রিটুইট করেন এবং তিনি এক সংবাদ মাধ্যমের সিনিয়র এডিটরকেও পাশাপাশি টুইটারে সরাসরি মেসেজ পাঠান।
ওই সম্পাদক মধ্যরাত নাগাদ বিষয়টিতে সাড়া দেন। কোথাও কোনও মেডিক্যাল হেল্প লাগলে সাংবাদিকেরা যেমন তাঁদের পরিচিতি কাজে লাগিয়ে বিষয়টা দ্রুত ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে দিয়ে পরিস্থিতি অনুকূল করার চেষ্টা করেন, তিনিও তাই-ই করেছেন। আলাদা কাজের মধ্যে তিনি Union minister Smriti Z. Irani-কে ট্যাগ করে দেন। কেননা ইরানি অমেঠিতে সাসংদ। Irani দ্রুত সাড়া দেন। বলেন তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।
ইতিমধ্যে Ankit ওই সিনিয়র সাংবাদিককে মেসেজ করে জানান, তাঁর বন্ধুর দাদু মারা গিয়েছেন। এই খবরটিও ওই এডিটর মন্ত্রীকে জানান। ইরানি সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দেন এবং সদ্য দাদুকে হারানো যুবকের জন্য সান্ত্বনাও দেন। এই ঘটনা জেনে অঙ্কিত ইরানিকে ধন্যবাদ দেন।
ঘটনা এইখানেই শেষ হতে পারত। কিন্তু না, তখনও কিছু বাকি ছিল। কেননা ততক্ষণে কোভিড-ক্রাইসিস ঘিরে রাজ্যের পরিস্থিতিও অনেক বদলে গিয়েছে। আতঙ্কে দিন গুনছে সকলে। কোভিড আক্রান্ত মানেই দুঃসহ টেনসন। তারমধ্যে অক্সিজেন চেয়ে টুইট করে একজন অজান্তেই টেনসন আরও বাড়িয়ে ফেলার অপরাধে অপরাধী হয়ে পড়লেন।
আরও পড়ুন: কাঁদতে কাঁদতে 'করোনায় মৃত' স্ত্রীর মৃতদেহ কাঁধে তুলে ৩ কিমি হেঁটে শ্মশানে গেলেন স্বামী
২৭ এপ্রিল বিকেলে Amethi District Magistrate Amethi Chief Medical Officer-কে একটি টুইট করে ওই সম্পাদকের পোস্টের বিষয়ে খোঁজ নেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শশাঙ্কের দাদু একটি বেসরকারি হাসপাতাসলে ভর্তি ছিলেন। তিনি হার্ট অ্যাটাক করে মারা গিয়েছেন। শশাঙ্ক বা ওই সাংবাদিক কেউই তাঁদের টুইটে কোভিডের কারণে এই অক্সিজেন-সন্ধান এ কথা উল্লেখ করেননি। কিন্তু তবুও বলা হয়, উক্ত দুই ব্যক্তি এই সঙ্কটকালে রাজ্যের নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন। মঙ্গলবার সন্ধেবেলাতেই Amethi Police শশাঙ্ক এবং সাংবাদিককে একটি টুইট করে বলে, এই পরিস্থিতিতে এই আচরণ শুধু গুজব ছড়ানো নয়, রীতিমতো criminal offence। police জানিয়ে দেয়, তারা অভিযোগ দায়ের করছে ভারতীয় পেনাল কোডের sections 188, 269 এবং 505 (1)(b) ধারায়, থাকছে Epidemic Act-এর Section 3 এবং Disaster Management Act-এর Section 54-ও। পুলিস যদি কেসটা চালিয়ে যায় তবে এতে শশাঙ্কের জেলও হতে পারে।
কদিন আগে Uttar Pradesh Chief Minister Adityanath সাংবাদিকদের সঙ্গে করা একটি ভার্চুয়াল কথোপকথনে জানিয়েছিলেন, জাতীয় নিরাপত্তার খাতিরে অসামাজিক কাজকর্ম বা গুজব ছড়ানোর মতো বিষয়গুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়াকেও এসব থেকে মুক্ত রাখার কথা বলেছিলেন তিনি। পাশাপাশি তিনি এ-ও জানিয়েছিলেন, রাজ্যে অক্সিজেনের কোনও ঘাটতি নেই!
ঠিক তার পরই শশাঙ্কের এই ঘটনা। সংশ্লিষ্ট মহলের মত, যাতে আপাত ভাবে মনে হবে রাজ্যে অক্সিজেন সঙ্কট চলছে। তাই আর যাতে কোনও রোগীর পরিবার এরকম কোনও বার্তা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার না করে সেই বার্তা দিতেই শশাঙ্কের প্রতি এই দৃষ্টান্তমূলক ব্যবহার।
আরও পড়ুন: 'কোনও ঘাটতি নেই', যোগী আদিত্যনাথের ঘোষণার পর Oxygen-র অভাবে ২৪ ঘণ্টায় মৃত ৮