83: Ranveer Singh-এর '83' নিয়ে উন্মাদনা থাকলেও, কেন আবেগতাড়িত 'Kapils Devils'?
সতীর্থদের মনে এখনও রয়ে গিয়েছেন তাদের প্রিয় 'যশ'।
সব্যসাচী বাগচী: মাঠ ও মাঠের বাইরে অনেক ঝড়ঝাপটা স্টেডিয়ামের বাইরে ফেলে ১৯৮৩ সালের ২৫ জুন ঘটেছিল 'হ্যাপি এন্ডিং'। কিন্তু রুক্ষ বাস্তবে কি সব সময় 'হ্যাপি এন্ডিং' থাকে! জীবনের পথে চলতে গেলে অনেক ঘটনার শেষটা সুখের হয় না। তবে পরিস্থিতির চাপে মানিয়ে নিতে হয়। মেনে নিতে হয়। 'কপিলস ডেভিলস'-এর (Kapils Devils) ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা ঠিক তেমনই। কারণ, রিল লাইফের যশপাল শর্মা ওরফে যতীন সার্না সবার মুখে হাসি ফোটাবেন। তবে সবার প্রিয় যশপাল শর্মা (Yashpal Sharma) যে অতীত হয়ে গিয়েছেন।
মঙ্গলবার সকালে রণবীর সিং-এর (Ranveer Singh) স্বপ্নের প্রজেক্ট 83-র (83) ট্রেলর মুক্তি পেল। সোশ্যাল মিডিয়াতে এই মুহূর্তে ট্রেন্ডিংয়ে চলছে ভারতের প্রথম বিশ্বকাপ জয় নিয়ে তৈরি এই সিনেমা। ৩ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের এই ট্রেলর ইতিমধ্যেই দেশ ও দেশের বাইরে ঝড় তুলেছে। পরিচালক কবির খান (Kabir Khan), সিনেমার সঙ্গে যুক্ত থাকা কাপ জয়ী দলের অন্যতম সদস্য বলবিন্দর সিং সান্ধুর (Balwinder Singh Sandhu) পরিশ্রম ও নিখুঁত কাজ পুরো ট্রেলরের পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে। রুপোলি পর্দার সব চরিত্রগুলো যেন আমাদের ৩৮ বছর আগে নিয়ে যায়। কপিল দেব থেকে সুনীল গাভাসকর, মহিন্দর অমরনাথ থেকে কৃষ্ণামাচারি শ্রীকান্ত। তাঁদের খেলার ধরণ, আদব কায়দা সবকিছু একেবারে নিখুঁত ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
ম্যাচের দৃশ্য, ব্যাটিং স্টান্স, বোলিং স্টাইল, কিংবা লর্ডসের বাতাবরণ সব যেন সেলুলয়েডে নয়। দাদু-বাবা-কাকারা দূরদর্শনের পর্দায় যেমন মুহূর্তগুলো দেখেছিলেন, সিনেমায় যেন ঠিক সেই ভাবেই তুলে ধরা হয়েছে। ট্রেলর দেখে মনে হল ভারতের বিশ্বকাপ অভিযানের সেই সময়ের ভিসুয়ালকে তুলে এনে যেন এডিট টেবিলে ভিএফএক্স যোগ করে কারুকাজ হয়েছে! এতটাই নিখুঁত কাজ।
২৪ ডিসেম্বর মুক্তি পাবে এই ছবি। ব্যস অপেক্ষার প্রহর শুরু। তবে সেই আনন্দের মধ্যেও 'কপিলস ডেভিলস'-এর অন্যতম সদস্য ও এই সিনেমার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বলবিন্দর সিং সান্ধুর মন খারাপ। কারণ,সবার প্রিয় 'যশ' যে আর নেই।
বাইশ গজের যুদ্ধের চরিত্রগুলো সিনেমায় জীবন্ত করে তোলার জন্য রণবীর, তাহির রাজ ভাসিন, সাকিব সেলিম, যতীন সার্নাদের ক্রিকেটের পাঠ দিয়েছেন সেই ফাইনালে গর্ডন গ্রিনিজের অফ স্টাম্প উড়িয়ে দেওয়া এই প্রাক্তন ডানহাতি জোরে বোলার। গত ১৩ জুলাই ওঁদের প্রিয় 'যশ' শরীর ছেড়ে দিয়েছেন। তবে ওঁদের স্মৃতিতে এখনও রয়ে গিয়েছেন। এবং থেকে যাবেন আজীবন।
প্রয়াত মারকুটে ব্যাটারকে 'রোমি' বলে ডাকতেন বলবিন্দর। কিন্তু তাঁর বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক কপিল দেবের (Kapil Dev) স্ত্রীর নামও যে রোমি! সেটার জন্য নিজেদের মধ্যে সমস্যা হয়নি? জি ২৪ ঘন্টাকে টেলিফোনে বলবিন্দর বললেন, "বিশ্বকাপ অভিযানের সময় যশ ও আমি একই ঘরে থাকতাম। তখনকার দিনে অধিনায়ক ছাড়া আর কারও আলাদা ঘর বরাদ্দ ছিল না। প্রায় দেড় মাসের বেশি সময় আমরা এক ছাদের তলায় কাটিয়েছিলাম। তাই মজা করে ওকে 'রোমি' বলে ডাকতাম। সেটা নিয়ে অবশ্য যশ খুব লজ্জা পেত।"
ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের মতে প্রায়ত অজিত ওয়াদেকরের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে জোড়া টেস্ট সিরিজ জয় 'ভারত উদয়' হয়ে থাকলে, ১৯৮৩ সালের ২৫ জুন নির্ঘাৎ ভারতীয় ক্রিকেটের রেনেসাঁ ঘটেছিল। সেই বিশ্বকাপ অভিযান, বাতিলের খাতায় থাকা একটা দলের বিশ্বজয়ী হয়ে ওঠার রোমহর্ষক গল্প, কপিল-সুনীল গাভাসকরের (Sunil Gavaskar) মানসিক টানাপোড়েন সবকিছুই উঠে এসেছে পরিচালক কবির খানের রিল লাইফের 83-তে।
আরও পড়ুন: INDvsNZ: ড্র হওয়া কানপুর টেস্টের বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত
বলবিন্দর ফের যোগ করলেন, "গত ১৩ জুলাই খারাপ খবরটা পাওয়ার আগে শেষবার 83 নিয়ে একটা অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছিল। সেখানেই ওর সঙ্গে শেষ আড্ডা দিয়েছিলাম। আমার বাড়তি ওজন, ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়ার জন্য কত বকাবকি করল। সেই মানুষটাই আজ আমাদের মধ্যে নেই! অবিশ্বাস্য!"
সে বারের বিশ্বকাপে সেরা উইকেটকিপারের তকমা পাওয়া সঈদ কিরমানি (Syed Kirmani) এখনও একই রকম শোকস্তব্ধ। বেঙ্গালুরু থেকে টেলিফোনে বলছিলেন, "২৪ ডিসেম্বর সিনেমা মুক্তি পাওয়ার পর যশ আমাদের হৃদয়ে ফের জীবন্ত হয়ে উঠবে। আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে অনেক ডাকাবুকো ক্রিকেটার দেখেছি। তাদের মধ্যে যশ অন্যতম। ওর মধ্যে অনেক সীমাবদ্ধতা থাকলেও সেটা মাঠে প্রকাশ পায়নি। এই কারণে সানি, ক্যাপস, জিমি ওকে সম্মান করত।"
সেই প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে সেই বিশ্বকাপের দুটি মূল্যবান ইনিংসের কথা তুলে ধরলেন কিরমানি। বললেন, "আমরা কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করেছিলাম। যশ চাপের মুখে ৮৯ রান না করলে আমাদের হার নিশ্চিত ছিল। সেই সময় ক্রিজে আগুন ঝড়াত ম্যালকম মার্শাল। ওর জোরালো বাউন্সারগুলো সে দিন যশকে আটকাতে পারেনি। এরপর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেমি ফাইনালেও যশ একা লড়েছিল। সেই ম্যাচে সর্বাধিক ৬১ রান করেছিল যশ। বড় মঞ্চে কীভাবে জ্বলে উঠতে হয় সেটা আমাদের বন্ধু জানত।"
৬৬ বছরেও ফিটনেস ধরে রাখা যায়! সেটা সতীর্থদের দেখিয়েছিলেন ওঁদের যশ। তাই এহেন মানুষটার থেমে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না কিরমানি। যোগ করলেন, "83-র মাধ্যমে অনেকের কাছে আমাদের সেই অদেখা, অজানা কীর্তিগুলো সামনে আসবে। সবাই হাসব। অগণিত মানুষ হাততালি দেবে। শুধু কাঁদবে ওঁর পরিবার। তাই এই আনন্দ দিনের শেষে মূল্যহীন।"
লর্ডসের সেই মেগা ফাইনালের 'ম্যান অফ দ্য ম্যাচ' ছিলেন মহিন্দর অমরনাথ (Mohinder Amarnath)। তিনিও একই রকম ভারাক্রান্ত। কারণ, প্রয়াত যশপাল শুধু তাঁর জাতীয় দলের সতীর্থ ছিলেন না। দুজন একসঙ্গে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে উত্তরাঞ্চলেও খেলেছেন।
ছেলেবেলার বন্ধু যশকে নিয়ে জিমি-র প্রতিক্রিয়া, "83 সিনেমা অনেক আগেই রিলিজ হয়ে যেত। কিন্তু গত বছর করোনার জন্য সবকিছু থমকে যায়। ভাইরাস দাপট না দেখালে যশ আরও একবার ঐতিহাসিক মুহূর্তের শরিক হতে পারত। আমাদের দলে যে লোকটা সবচেয়ে বেশি মজা করতে পারত, তাকে এত আগে চলে যেতে হল!"
কালের নিয়মে যশ চলে গিয়েছেন। তবে রেখে গিয়েছেন এমন কিছু সুখের স্মৃতি যা এখনও সতেজ, টাটকা। একজন বন্ধন ছেড়ে বেরিয়ে গেলেও ওঁদের বন্ধুত্ব এখনও অটুট। প্রতি বছর ২৫ জুন এলেই ওঁরা একে অন্যকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানাতেন। দেখা হত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। তবে হোয়াটসঅ্যাপ যুগ শুরু হওয়ার পর থেকে বদলে গিয়েছে ব্যাপারটা। কয়েক বছর আগে প্রবাদপ্রতিম গাভাসকার একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করেছিলেন। নাম দিয়েছিলেন ‘চ্যাম্পিয়নস ফর এভার’। সেখানেই এখন চলে নিয়মিত আড্ডা। রোজ মজার জোকস পোস্ট করার দায়িত্ব নিয়েছেন সদাহাস্য সানি।
২৪ ডিসেম্বর প্রেক্ষাগৃহে 'কপিলস ডেভিলস' মিলিত হয়ে ১৯৮৩ সালের সেই বিকেলে ফিরে যাবেন। তবে একটা চেয়ার ফাঁকা থেকে যাবে। সারা জীবনের জন্য। কারণ কালের নিয়মে গত ১৩ জুলাই থেকে সেই গ্রুপের একজন 'মিউট' হয়ে গেলেন! রয়ে গেলেন বাকি ১৪ জন।