Exclusive, Cheteshwar Pujara: কামিন্স, হ্যাজেলউড, ন্যাথান লিঁও-র মহড়া নেওয়ার জন্য কীভাবে তৈরি হচ্ছেন 'চে পূজারা'?
দেশের হয়ে মাত্র একটি ফরম্যাট খেলার সুযোগ পান চেতেশ্বর। ম্যাচ প্র্যাকটিসের অভাব থাকে। রঞ্জি কিংবা দলীপ ট্রফি খেললেও বিপক্ষের বোলারদের মধ্যে সেই খুনে প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করেন না। এটাও চেতেশ্বরের ব্যর্থ হওয়ার কারণ বলে মনে করছেন সৌরাষ্ট্রের প্রাক্তন ক্রিকেটার।
সব্যসাচী বাগচী
সৌরাষ্ট্র (Saurashtra) রাজকোটে রঞ্জি ট্রফির কোয়ার্টার (Ranji Trophy Quarter Final 2022-23) ফাইনাল খেলছে। তবে পঞ্জাবের (Punjab) বিরুদ্ধে সেই ম্যাচ খেলছেন না চেতেশ্বর পূজারা (Cheteshwar Pujara)! তিনি ব্যাটিং চর্চার জন্য জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমি (National Cricket Academy) যেতেই পারতেন। তবে বেঙ্গালুরু যাননি। তাহলে অস্ট্রেলিয়ার (Australia) বিরুদ্ধে বর্ডার গাভাসকর ট্রফিতে (Border Gavaskar Trophy 2023) নামার আগে কোথায় গেলেন টিম ইন্ডিয়ার (Team India) টেস্ট ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড? প্যাট কামিন্স (Pat Cummins), জশ হ্যাজেলউড (Josh Hazelwood), ন্যাথান লিঁও-দের (Nathan Lyon) মহড়া নেওয়ার আগে কীভাবে প্রস্ততি সারছেন 'চে পূজারা'। তারকা ব্যাটারের বাবা অরবিন্দ পূজারাকে (Arvind Pujara) ফোন করতেই জানা গেল রঞ্জি না খেলার আসল কারণ। জি ২৪ ঘণ্টাকে এক্সক্লুসিভ সাক্ষতকারে জানালেন যে, কোন ছকে নিজেকে মহারণের জন্য তৈরি করছেন তাঁর 'চিন্টু'।
রাজকোট স্টেডিয়াম থেকে গাড়িতে আরও ২৫ মিনিটের রাস্তা। এলাকার নাম রিং রোড। সেই রিং রোড থেকে একটু ভিতরের দিকে গেলেই চোখের সামনে ভেসে উঠবে চেতেশ্বর পূজারা ক্রিকেট অ্যাকাডেমি (Cheteshwar Pujara Cricket Academy)। সেখানেই এই মুহূর্তে অস্থায়ী ঠিকানা গড়ে তুলেছেন চেতেশ্বর। সকাল-বিকেল মিলিয়ে প্রায় ৪-৫ ঘণ্টা ধরে চলছে তাঁর ব্যাটিং সাধনা। এমনটাই জানালেন গর্বিত বাবা অরবিন্দ।
কিন্তু কীভাবে চলছে চিন্টুর ব্যাটিং সাধনা? তিন বছর আগে এই অ্যাকাডেমিতে যাওয়ার সুবাদে তিন রকমের পিচ দেখেছিলাম। ঘাসে ভরা বাউন্সি পিচ রয়েছে। সেই পিচগুলোতে এতটাই ঘাস রয়েছে, যে আপনি আউট ফিল্ড ও পিচের ফারাক করতেই পারবেন না। রয়েছে স্পিন সহায়ক বাইশ গজ। যেখানে স্পাইক দিয়ে তৈরি করা হয়েছে একাধিক 'রাফ এরিয়া'। চেতেশ্বর এমনিতেই দারুণ স্পিন খেলেন। কিন্তু এবার যে লড়াই আরও কঠিন। কারণ বিপক্ষের তারকা অফ স্পিনার ন্যাথান লিঁও-র সঙ্গে আরও তিন স্পিনার রয়েছে। এবং এছাড়া রয়েছে সিমেন্টের তৈরি পিচ।
— Cheteshwar Pujara (@cheteshwar1) January 31, 2023
অরবিন্দ বলছিলেন, "চিন্টু কোন পিচে কীভাবে অনুশীলন করছে, সেটা সম্পর্কে প্লিজ জানতে চাইবেন না। কারণ এগুলো টেকনিক্যাল বিষয়। তাছাড়া ওর অনুশীলনের বিষয় মিডিয়াতে প্রকাশ পেলে, বিপক্ষ দল বাড়তি সুযোগ পাবে। দেশের স্বার্থে সেই তথ্য বাইরে আনা উচিত নয়। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ফের একবার সফল হওয়ার জন্যই বিসিসিআই ও টিম ম্যানেজমেন্টের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে ও আলাদাভাবে তৈরি হচ্ছে।"
কিন্তু তিনিই যতই আলাদাভাবে অনুশীলন করুন, কামিন্স-হ্যাজেলউড ও নেট বোলাররা তো এক জাতের নন। সেটা চিন্টুও জানেন। তবুও নিজেকে বাকিদের থেকে সুপরিকল্পিতভাবে সরিয়ে নিয়েছেন এই তারকা। অরবিন্দ যোগ করলেন, "শুধু নতুন বল নয়, পুরনো বলের বিরুদ্ধেও প্রস্তুতি সারছেন। নিজেকে তৈরি রাখছে রিভার্স সুইংয়ের জন্য। আবার মাঝেমধ্যে চলে যাচ্ছে স্পিন পিচে। সেখানে নেট বোলারদের নির্দেশ দিচ্ছে, যাতে 'রাফ এরিয়া'-তে বল ফেলা হয়। এছাড়া সিমেন্টের পিচ তো আছেই। সেখানে টেনিস বলকে ভিজিয়ে একনাগাড়ে ব্যাট করে যাচ্ছে।"
দেশের হয়ে মাত্র একটি ফরম্যাট খেলার সুযোগ পান চেতেশ্বর। ম্যাচ প্র্যাকটিসের অভাব থাকে। রঞ্জি কিংবা দলীপ ট্রফি খেললেও বিপক্ষের বোলারদের মধ্যে সেই খুনে প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করেন না। এটাও চেতেশ্বরের ব্যর্থ হওয়ার কারণ বলে মনে করছেন সৌরাষ্ট্রের প্রাক্তন ক্রিকেটার।
৭১ বছরের অরবিন্দের প্রতিক্রিয়া, "অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ডে সাফল্য পেতে হলে প্রচুর ম্যাচ প্র্যাকটিস দরকার। অ্যাকাডেমিতে বিভিন্ন ধরনের উইকেট বানিয়ে অনুশীলন করে। এছাড়া সময় সুযোগ পেলে রাজ্য দলের হয়ে প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলে থাকে। এভাবে তো বিদেশে গিয়ে পাল্লা দেওয়া যাবে না। তবুও নিজের স্কিলকে আরও ঘষেমেজে ও এগিয়ে যাচ্ছে। এবং সাফল্য পাচ্ছে। যেটা মোটেও সহজ নয়। কারণ মনে রাখবেন ও কিন্তু ভারতীয় দলের বাকিদের তুলনায় অনেক কম প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়।"
আরও পড়ুন: Lionel Messi: এমবাপের পেনাল্টি মিস, মেসি-ফাবিয়ানদের গোলে জিতল পিএসজি
দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে দলের ভরাডুবির পর তাঁকে ছেঁটে ফেলা হয়েছিল। এরপর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্টেও তেমন সফল হয়নি। তবে চেতেশ্বর হারিয়ে যাননি। বরং সাসেক্সের জার্সি গায়ে ‘নিঃশব্দে বিপ্লব’ ঘটিয়েছিলেন। বিপক্ষের গোলাগুলি ও ঘাতক সুইং সামলে লাগাতার আটটি ম্যাচের ১৩ ইনিংসে করেছিলেন ১০৯৪ রান। গড় ১০৯.৪০। সঙ্গে ছিল পাঁচটি শতরান। সর্বোচ্চ মিডলসেক্সের বিরুদ্ধে ২৩১ রান।
কীভাবে এমন কামব্যাক সম্ভব হল? অরবিন্দ বলছিলেন, “শুধু অধ্যাবসায় ও মনের জোরের উপর ভর করে চিন্টু ফের সাফল্য পেল। ওকে আর আটকে রাখা যাবে না। মিলিয়ে নেবেন। আগামী দিনে আরও বড় লড়াই করার জন্য আমার ছেলে রসদ পেয়ে গেল।"
২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিডনি টেস্টে ১৯৩ রান করার পর,২০২২ সালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপরাজিত ১০২ রান। মাঝের ২৮টি টেস্টের ৫১ ইনিংসে শতরান ছিল অধরা। একাধিক ইনিংসে ভালো শুরু করেও থমকে যাচ্ছিলেন। চেতেশ্বরের পড়তি ফর্ম দেখে সুনীল গাভাসকর পর্যন্ত মাইক হাতে গর্জে উঠেছিলেন। তাঁকে ছেঁটে ফেলার কথাও বলে দেন সানি।
অরবিন্দের কানে সব গিয়েছে। ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার মতো দলের বিরুদ্ধে টেস্ট খেলতে পারেননি তাঁর ছেলে। দলকে থেকে ছেঁটে ফেলা হয়েছিল। আক্ষেপ করে অরবিন্দ শেষে বললেন, “দেশের হয়ে খেলতে নামলে সফল হতেই হবে। এটাই নিয়ম। কিন্তু আমার প্রশ্ন হল গত কয়েক বছর ভারতীয় দল বিদেশে কি শুধু চিন্টু ব্যর্থ হওয়ার জন্য হেরেছিল! আর কি কোনও তারকা ব্যর্থ হয়নি! তাহলে শুধু ওর ঘাড়ে কেন কোপ পড়বে? অতীতেও চিন্টুকে বাদ দেওয়া হয়েছে। হয়তো ভবিষ্যতেও আমার ছেলে বাদ যাবে। আমরা তখনও প্রতিবাদ করিনি। এখনও প্রতিবাদ করব না।"
দেশের হয়ে ৯৮টি টেস্ট খেলে ফেলা চেতেশ্বর প্রতিবাদ করতে জানেন না। প্রচারের আলোয় থাকতেও রাজি নন। গায়ে-গতরে ওই ‘লাল গোলা’ হজম করে যান। টি-শার্ট শরীর থেকে নামিয়ে রাখলে জমাট রক্তের দাগগুলো স্পষ্ট দেখা যায়। তবুও নিজের কাজ নীরবে করে যাচ্ছেন একজন প্রকৃত যোদ্ধার মতো। কারণ 'চে পুজারা'-র যে এটাই স্টাইল স্টেটমেন্ট!