ISL 2022-23, KBFC vs EBFC: সেই বেহাল রক্ষণ, শুরুতেই কেরলের হলুদ ঝড়ের কাছে মুখ থুবড়ে পড়ল কনস্ট্যানটাইনের লাল-হলুদ
ISL 2022-23, KBFC vs EBFC: দু’বছর পরে হোম এবং অ্যাওয়ে ফরম্যাটে ফিরেছে আইএসএল। ফলে কোচির স্টেডিয়ামে আবার তৈরি হল সর্ষের ক্ষেত। হলুদ জার্সি পরে ম্যাচের অনেক আগে থেকেই ভিড় জমিয়েছিলেন সমর্থকরা। ম্যাচের এক ঘণ্টা আগেই ৬০ হাজারের স্টেডিয়ামের ৭৫ শতাংশ পূর্ণ হয়ে যায়।
কেরল ব্লাস্টার্স : ৩ ('৭২ আদ্রিয়ান লুনা, '৮২, '৮৯ ইভান)
ইস্টবেঙ্গল এফসি : ১ ('৮৮, অ্যালেক্স লিমা)
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: একের পর এক মরসুম শেষ হয়। দলের নাম বদল হয়। কিন্তু ভাগ্য ফেরে না। শ্রী সিমেন্ট ইস্টবেঙ্গল থেকে এবারের আইএসএল-এ (ISL 2022-23) ইস্টবেঙ্গল এফসি (East Bengal FC) নামে খেলতে নামা দলের হেড কোচ ও ফুটবলারদের মধ্যে বদল ঘটেছে। কিন্তু পারফরম্যান্সে বদল ঘটল না। দুর্বল এবং দুর্বোধ্য রক্ষণের জন্য এবারের আইএসএল-এর প্রথম ম্যাচেই লজ্জার হার হজম করল স্টিফেন কনস্ট্যানটাইনের (Stephen Constantine) লাল-হলুদ। কেরল ব্লাস্টার্সের (Kerala Blasters FC) বিরুদ্ধে হারের ব্যবধান ৩-১। আদ্রিয়ান লুনা (Adrian Luna) একটি গোল ও উজবেকিস্তানের ইভান (Ivan Kaliuzhnyi) জোড়া গোল করে ম্যাচের নায়ক হলেন।
কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করার আগে লাল-হলুদের হেড কোচ হুঙ্কার দিয়েছিলেন। তাঁর দাবি ছিল, এবারের দল একেবারে আলাদা। তাঁর দল হারতে আসেনি। এই ইস্টবেঙ্গল লিগ টেবিলের শেষে থাকতে আসেনি। কিন্তু কথায় ও কাজে যে অনেক তফাৎ। সেটা কোচির জওহতরলাল নেহেরু স্টেডিয়ামে বেশ বোঝা গেল। দলটার রক্ষণ এখনও জমাট বাধেনি। ভাগ্যিস গোলে কমলজিত ছিলেন। দ্বিতীয়ার্ধে রুখে না দাঁড়ালে গোলের ব্যবধান আরও বাড়তে পারত। মাঠের মধ্যে বেশ কয়েকবার হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে দুই দলের ফুটবলাররা।
শুরু থেকেই লাল-হলুদের রক্ষণ একের পর এক ভুল করে গিয়েছে। বিপক্ষের স্ট্রাইকারদের মার্ক করা তো অনেক দূরের কথা, নিজেদের মধ্যে মারাত্মক সমন্বয়ের অভাবে ভুগতে দেখা গেল। তবে রক্ষণ এক নাগাড়ে ভুল করলেও, মাঝমাঠ থেকে খেলা তৈরি করে গোলের মুখ খোলার চেষ্টার অভাব ছিল না। প্রথমার্ধের শুরু থেকে সেটা বারবার চোখে পড়ছিল।
পড়ুন, বাঙালির প্রাণের উৎসবে আমার 'e' উৎসব। Zee ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল শারদসংখ্যা
খেলার বয়স তখন মাত্র আট মিনিট। মাঝমাঝে কেরালার পাস অনুধাবন করে অ্যালেক্স লিমা এগিয়ে এলেন। ডানপ্রাপ্ত থেকে দূরপাল্লার শট নিলেন লিমা। তবে ভালো সেভ করলেন কেরলের গোলকিপার প্রভসুখান সিং।
এরপর প্রথমার্ধের বাকিটা সময় কেরল আধিপত্য দেখিয়ে গেল। তবে ঘরের মাঠে গোলের মুখ খুলতে পারেননি হলুদ বাহিনী। সেটা অবশ্য লাল-হলুদের হঠাৎ দারুণ পারফর্ম করা রক্ষণের জন্য নয়। মাঝেমধ্যে কমলজিত সেভ দিলেন। আবার বেশিরভাগ সময় কেরল ঘরের মাঠে ফিনিশিং-এর অভাবে ভুগছিল।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই কেরল আগ্রাসী মেজাজে খেলতে শুরু করে। কমলজিত একের পর এক সেভ দিতে শুরু করলেন। মনে হচ্ছিল তিনিই যেন একমাত্র লাল-হলুদের রক্ষণের দায়িত্বে রয়েছেন। এ দিকে রক্ষণের যখন এমন বেহাল দশা তখন মুড়ি মুড়কির মতো হলুদ কার্ড দেখে কোচের রক্তচাপ আরও বাড়িয়ে দিলেন লালচুংনুনগা ও অঙ্কিত মুখোপাধ্যায়।
ভিপি সুহের শুরুতে একবার আক্রমণ তুলে আশা জাগিয়েছিলেন। কিন্তু ম্যাচের সময় যত এগিয়েছে ততোই যেন খেই হারালেন কেরল থেকেই উঠে আসা লাল-হলুদের এই স্ট্রাইকার। তাই বাধ্য হয়ে তাঁকে তুলে নিলেন কনস্ট্যানটাইন। কিন্তু এতে লাভ হল না।
বরং ম্যাচের ৭২ মিনিটে গোল করে খেলা ঘুরিয়ে দিলেন আদ্রিয়ান লুনা। পুরনো যোদ্ধার পাসে বিদ্ধ লাল-হলুদ। মাঝমাঠ থেকে হরমনজিৎ খাবরা ঠিকানা লেখা পাস পেনাল্টি বক্সে লুনার উদ্দেশে বাড়িয়ে দিয়ছিলেন। লুনা স্লাইড করে কমলজিতের মাথার উপর জালে বল জড়িয়ে দিতে ভুল করেননি। কয়েক মাস মেয়েকে হারিয়েছেন। সেই প্রয়াত মেয়েকে গোল উৎসর্গ করলেন উরুগুয়ের ফুটবলার।
এরপর ৭৯ মিনিটে পরিবর্ত হিসেবে মাঠে নামলেন ইভান। আর মাঠে নামার দুই মিনিটের মধ্যেই গোল। প্রথম টাচেই গোল করলেন উজবেকিস্তানের এই ফুটবলার। কেরালা তখন দুই গোলে এগিয়ে।
কিন্তু তাই বলে হাল ছাড়েননি অ্যালেক্স লিমা। ৮৮ মিনিটে গোল করে আশা জাগালেন। কিন্তু আশা জাগলেও শেষরক্ষা হল কোথায়! ৮৯ মিনিটে ফিরতি বলকে প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে বাঁ পায়ের জোরালো শটে জালে জড়িয়ে দিলেন সেই ইভান। লাল-হলুদের ভঙ্গুর রক্ষণ পুরো ম্যাচে ম্যাজিক দেখাতে পারেনি। শেষ দিকেও সাহেব কোচের ছেলেদের কাছ থেকে প্রত্যাশা ছিল না। ফলে প্রথম ম্যাচেই পুরো পয়েন্ট মাঠে ফেলে এল কনস্ট্যানটাইনের দল।
২০২১-২২ মরসুমে রবি ফাউলারের কোচিংয়ে এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে উদ্বোধনী ম্যাচে ০-২ ব্যবধানে হার। গত বছর কোচিং স্টাফে এসেছিল বদল। মানলো দিয়াজ দায়িত্ব নিয়েও হাল ফেরাতে পারেননি। ২০২২-২৩ মরসুমের প্রথম ম্যাচ ছিল জামশেদপুরের বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচ কোনওমতে ড্র করেছিল লাল-হলুদ। তবে অনেক স্বপ্ন জাগিয়েও পারল না কনস্ট্যানটাইনের লাল-হলুদ।