মুডসুইং আর মারাদোনা যেন সমার্থক, ফুটবল রাজপুত্রকে কলকাতায় নিয়ে আসার নেপথ্য কাহিনি শোনালেন শতদ্রু

লাতিন আমেরিকার অনেকেই আমাকে বলেছিলেন যে যতক্ষণ না মারাদোনা ল্যান্ড করছেন ততক্ষণ কিন্তু নিশ্চিত নয়। কেননা মুড সুইং করে। তাই বি কেয়ারফুল।

Updated By: Nov 26, 2020, 04:36 AM IST
মুডসুইং আর মারাদোনা যেন সমার্থক, ফুটবল রাজপুত্রকে কলকাতায় নিয়ে আসার নেপথ্য কাহিনি শোনালেন শতদ্রু
ছবি সৌজন্যে : ফেসবুক

২০১৭ সালে শীতে কলকাতায় এসেছিলেন ফুটবলের রাজপুত্র দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা। তাঁকে কলকাতা নিয়ে আসার মতো প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন যিনি তিনি হলেন শতদ্রু দত্ত। শোনালেন মারাদোনার মুডসুইংয়ের গল্প ...

প্রথম কথা দিয়েগো মারাদোনার দুটো পার্ট আছে, একটা ফুটবল।  আর একটা হল মারাদোনার চরিত্র। একজন ফুটবলার হিসেবে মারাদোনা মানে ভগবান।  আমার মতে তিনিই সেরা..  গ্রেটেস্ট অব অল টাইম।  ওর খেলা, সাফল্য সবকিছু দিক বিচার করে বলছি।  ফুটবলে উনিই সেরা।

আর চরিত্র হল বর্ণময়, ওনাকে বোঝার ক্ষমতা একমাত্র ওনারই ছিল আর কারোর বোঝাপড়ার বাইরে ছিল। মাইকেল জ্যাকসন, মাইক টাইসন এবং দিয়েগো মারাদোনা এই তিনের মিশ্রণ হল মারাদোনার চরিত্র।  ওকে বোঝা খুব কঠিন কাজ। আর মুড সুইং শব্দটা ডিকশেনারিতে দেখলে যেটা বোঝা যায় সেটাই হল মারাদোনা। মুডসুইং আর দিয়েগো মারাদোনা সমর্থক।

২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বুয়েনস আয়ার্সে আমি ওর বাড়িতে গিয়েছিলাম। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে আছি। ৩৪ ঘণ্টা জার্নি করে গেছি। ওই মানুষটাকে দেখার জন্য। ওকে নিয়ে আসার জন্য। অনেকক্ষণ পরে আমাদের ডাকল মাঠে। দু ঘণ্টা বসে থাকার পর দেখলাম একটা গাড়ি ঢুকল। সেখান থেকে নামল সেই ছোট্ট বিখ্যাত মানুষটি নামল। মোটা হয়ে গিয়েছিল। নামল আস্তে আস্তে। পায়ে কোনও সমস্যা ছিল মনে হয়। দেখে খারাপ লেগেছিল। যে দিয়েগো মারাদোনাকে দেখতাম যে কোনও ডিফেন্সকে চিরে .. ওকে ধরতে পারাটাই টাফ ছিল। সেখানে এরকমভাবে ও আস্তে আসতে হেঁটে হেঁটে আসছে। প্রথম দু-তিন মিনিট আমি বুঝতেই চলে গিয়েছিল।

তারপর মনে হল আগে তো পা টা ধরি। খুবই চিন্তায় ছিলাম আমি ডান পাটা ধরে ফেলেছিলাম। ওই তখন বলেছিল ডান পা ধর না আমার বাঁ পা টা ধর, এই পা টা। কলকাতা চিনত। কারণ আগে কলকাতা এসেছিল। শুনল সবকিছু এই ওই.. তারপরেই বলে আমার ম্যানেজারের সঙ্গে প্ল্যান করে নাও আমি আসব। ডেটটা বলে দিও আমি আসব। আমি বললাম ঠিক আছে।  আমরা খাচ্ছি, মারাদোনার সঙ্গে খাওয়া মানে তো অন্য ব্যাপার একটা। খাবো আর কি , ওকে দেখছি। ছোটবেলা থেকে মারাদোনাকে দেখা আর সেই মারাদোনার সামনে বসে খাচ্ছি। ভারতীয় সময় তখন রাত দুটো-তিনটে হবে। খাওয়ার পর মারাদোনা বলল .. চলো । জায়গা সামান্য দূরে একটু এগিয়েই।  গলফ গাড়ি করে সামনে একটা প্র্যাকটিস সেন্টারে নিয়ে গেল।অনববেক ছোট ছোট ছেলেদের ফুটবল প্র্যাকটিস করাল মারাদোনা। ওর একটা গড স্ট্যাটাস। এরপর দুবাই হয়ে ফিরছি, মনে খুব আনন্দ। যে মারাদোনা রাজি হয়েছে আসার ব্যাপারে।

তবে লাতিন আমেরিকার অনেকেই আমাকে বলেছিলেন যে যতক্ষণ না মারাদোনা ল্যান্ড করছেন ততক্ষণ কিন্তু নিশ্চিত নয়। কেননা মুড সুইং করে। তাই বি কেয়ারফুল। হলও তাই ..বলল যে আসতে পারবে না। দুবাইয়ের ক্লাবে কিছু একটা সমস্যা হয়েছিল। প্রতিদিন ডেট চেঞ্জ হচ্ছে। তারপর দুবাই গেলাম ওনার সঙ্গে দেখা করতে। প্রথমদিন দেখা করলেন না। দ্বিতীয় দিনে দেখা হল না। তখন ফিরে চলে এলাম। আবার দেখা করার টাইম দিল। এবার ওর জন্মদিনে দেখা করার জন্য সময় দিলেন। আমি গেছি, সঙ্গে ফেলু মোদকের মিষ্টি নিয়ে গিয়েছি। মন বলছে এবার হয়ে যাবে। গেলাম সেদিন খুব ভাল মুডে ছিলেন। তারপর আমাকে কথা দেন যে ১০ ডিসেম্বর যাব। অবশেষে ৯ ডিসেম্বর, ২০১৭ সালে উনি এলেন রাতের বেলা।

.