গ্রেটেস্ট শো অন আর্থের কৃতীরা
এমন কয়েকজন অলিম্পিয়ান যারা বদলে দিয়েছিলেন গ্রেটেস্ট শো অন আর্থের মঞ্চ। কারও অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স, কারও বা অনন্য রেকর্ড বদলে দিয়েছে অলিম্পিকের চিত্র।
এমন কয়েকজন অলিম্পিয়ান যাঁরা বদলে দিয়েছিলেন গ্রেটেস্ট শো অন আর্থের মঞ্চ। কারও অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স, কারও বা অনন্য রেকর্ড বদলে দিয়েছে অলিম্পিকের চিত্র। আধুনিক অলিম্পিকের প্রথম উপস্থাপনাকে বিখ্যাত করে তুলেছিলেন স্পিরিডন লুইস। একজন সাঁতারু হিসেবে শুরু করেছিলেন কেরিয়ার।পরবর্তীতে ইভেন্ট বদলে হলেন একজন অ্যাথলিট।আঠেরোশ ছিয়ানব্বই অলিম্পিকে চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছিলেন গ্রীক এই সাতারু। প্যানাথিনাইকো স্টেডিয়ামে অ্যাথলেটিক্স বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন স্পিরিডন লুইস।তারপর পুরোটাই ইতিহাস। উনিশশো ছত্রিশের বার্লিন অলিম্পিককে বলা যায় জেসি ওয়েন্সের অলিম্পিক।একশো মিটারে সোনা,দুশো মিটারে নিজের রেকর্ড নিজেই ভেঙে সোনা এবং লং জাম্পে জার্মানির লুটজ লং-কে হারিয়ে সোনা জয় করলেন ওয়েন্স।মোট তিনটে সোনা কিন্তু এই পরিসংখ্যান দিয়ে জেসি ওয়েন্সকে বিচার করা একদমই ঠিক নয়।তিনি কিংবদন্তী, যিনি ট্র্যাকে একের পর এক ঝড় তুলে উনিশশো ছত্রিশের অলিম্পিককে হিটলারের অলিম্পিক থেকে জেসি ওয়েন্সের অলিম্পিক বানিয়ে ছেড়েছিলেন।
মা হওয়ার পর গ্র্যান্ডস্লাম জেতার জন্য কিম ক্লিস্টার্সকে নিয়ে মাতামাতি প্রচন্ড। কিন্তু মাতৃত্বের স্বাদ পেয়ে বিশ্বক্রীড়ায় ঝড় তোলার ইতিহাস আজ থেকে প্রায় চৌষট্টি বছর আগে লন্ডন অলিম্পিকে। উনিশশো আটচল্লিশে লন্ডন অলিম্পিকে একশো ও দুশো মিটার দৌড়,আশি মিটার হার্ডলস এবং চারশো মিটার রিলে রেসে সোনা জিতে অলিম্পিকের ইতিহাসে আজও এক কীর্তির নাম ফ্যানি ব্ল্যাঙ্কার্স-কোয়েন।উনিশশো ছত্রিশের অলিম্পিকে আত্মপ্রকাশ এই ডাচ অ্যাথলিটের। কিন্তু একটি অলিম্পিকে চারটি সোনা জয়ের কীর্তি গড়তে লাগল আরও বারো বছর। তিরিশ বছর বয়স,সদ্যই মা হয়েছেন। তারপরেও ট্র্যাক অ্যন্ড ফিল্ডে এই কীর্তি। আর তাই ফ্যানি ব্ল্যাঙ্কার্স কোয়েন আজও অনন্য। উনিশোশো কুড়ি অ্যান্টওয়ের্প অলিম্পিকে ট্র্যাক অ্যন্ড ফিল্ডে বিপ্লব এনেছিলেন পাভো নুরমি। অলিম্পিক ইতিহাসে প্রথমবার, নটি সোনা জয়। এক কথায় কিংবদন্তী। দশ হাজার মিটারে ব্যক্তিগত ও টিম ইভেন্টে সোনা জিতে শুরু পাভো নুরমির অলিম্পিকে ইতিহাস স্থাপনের। উনিশশো চব্বিশে প্যারিস অলিম্পিকে সবকিছুকে ছাপিয়ে গেলেন পাভো। ব্যক্তিগত ইভেন্টে পাঁচটি সোনা জয়। তার সঙ্গে ষষ্ঠ সোনা জয় ফিনল্যান্ডে দশমিটার টিম ইভেন্টে। চার বছর পর একত্রিশ বছরের পাভো নুরমি আমস্টারডাম অলিম্পিকে জিতলেন দশমিটার রিলেতে সোনা। উনত্রিশটি বিশ্বরেকর্ডের অধিকারী নুরমি আজ অলিম্পিক স্টেডিয়ামের বাইরে মূর্তি হয়ে যেন আগামি প্রজন্মকে জানান দিচ্ছেন,সোনা জয় নয়,বর্তমান অ্যাথলিটদের মাপকাঠি হওয়া উচিত তাঁকে টপকানো। মার্কিন সাঁতারু মার্ক স্পিত্জের নাম না বললে অলিম্পিকের তারকাদের গল্প বোধ হয় শেষ হওয়ার নয়। স্পিত্জ অলিম্পিকে সোনা জিতেছেন সাতটি। নীল জলের এপ্রান্ত থেকে ও প্রান্তের চকিতে পৌঁছে যাওয়া স্পিত্জকে টেক্কা দেওয়ার সাহস দেখাননি কেউই। ফেল্পসের আগে সাতটি সোনা জয়ের বিশ্বরেকর্ড ছিল স্পিত্জেরই দখলে। আটষট্টি ও বাহাত্তরের অলিম্পিকে তাই সবার নজর ট্র্যাক অ্যন্ড ফিল্ড, বক্সিং থকে সরে গিয়েছিল নীল জলের দিকেই। কারন স্পিত্জের উপস্থিতি। উনিশশো বিরানব্বইয়ে বার্সিলোনা অলিম্পিকে যোগ্যতা অর্জন করতে না পারার জন্য বিয়াল্লিশ বছরের স্পিত্জ অবসর নেন।
তিনি জিমন্যাস্টিক্সের রানী।আর জিমনাস্টিক্সের হাত ধরেই ল্যারিসা সোভিয়েত ইউনিয়নকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন।অলিম্পিকে জিতেছেন মোট নয়টি সোনা। পদক জয়ের ক্ষেত্রে পাভো নুরমির সঙ্গে এক আসনে তিনি। আর অলিম্পিকে ল্যারিসার মোট পদক সংখ্যা সতেরোটি। ছেষট্টির বিশ্বচ্যাম্পিয়নশীপের পর অবসর নেন ল্যারিসা। জনি ওয়েসমুলার হলিউডে টারজান ফিল্মের নামভূমিকার নায়ক। সুন্দর-সুঠাম চেহারার অধিকারী জনি ওয়েসমুলার ফিল্মিজগতের কাছে টারজান হিসেবে পরিচিত হলেও ক্রীড়াজগতের কাছে তিনি কিংবদন্তী সাঁতারু। অলিম্পিক সাঁতারে পাঁচটি সোনা ব্যক্তিগত ইভেন্টে। আর ওয়াটারপোলোতে ব্রোঞ্জ। প্যারিস ও আমস্টারডাম অলিম্পিক-পরপর দুটি অলিম্পিকে একের পর এক কীর্তি গড়ে জনি টারজান ওয়েসমুলার আজও গ্রেটেস্ট শো অন আর্থে কিংবদন্তী। আজকের বক্সিং দুনিয়ায় কিউবার দাপাদাপি যার হাত ধরে শুরু হয়েছিল তিনি টিওফিলো স্টেভিনসন। কুড়ি বছর বয়সে মিউনিখ অলিম্পিকে প্রথম সোনা জেতেন স্টিভেনসন। স্টিভেনসনের সেই সাফল্যে আত্মবিশ্বাসী হয়ে সেই অলিম্পিকে বক্সিংয়ে কিউবা জেতে তিনটি সোনা,একটি রুপো ও একটি ব্রোঞ্জ। শুরু হয় মুষ্ঠিযুদ্ধে কিউবা জমানা। যা আজও চলছে। মন্ট্রিল অলিম্পিকেও সোনা জিতেছিলেন টিওফিলো। টিওফিলো বদলে দিয়েছিলেন ছোট্ট দেশ কিউবার ক্রীড়াভাষাটাই।
উচ্চতা মাত্র চার ফিট দশ ইঞ্চি। খর্বকায় চেহারা নিয়ে ভারোত্তোলনে একনায়কতন্ত্র কায়েম করেন সুলেমানুগলু। যিনি পকেট হারকিউলিস নামে বেশি পরিচিত। উনিশশো চুরাশিতে বুলগেরিয়া লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিক বয়কট করায় আরও চারবছর অপেক্ষা করতে হয় তাঁকে। অবশেষে তুরস্কের নাগরিকত্ব নিয়ে অলিম্পিকে নামেন উনিশশো অষ্টআশিতে সিওলে। বুলগেরিয়ায় জন্ম হলেও তাঁর যাবতীয় কীর্তি কিন্তু তুরস্কের জন্যই। উনিশশো অষ্টআশি, বিরানব্বই, ছিয়ানব্বই -সব অলিম্পিকেই সোনা জিতেছিলেন সুলেমানুগলু।মজার বিষয়,নিজের রেকর্ড নিজেই ভাঙতে পছন্দ করতন তিনি। কার্লস লিউস নামটাই যথেষ্ট ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে। চুরাশি অলিম্পিকেই তাক লাগিয়ে দেন তেইশ বছরের কার্ল লিউস। সেই অলিম্পিকে চারটি সোনা জেতেন তিনি। ছুঁয়ে ফেললেন নিজের আইডল জেসি ওয়েন্সের একটি অলিম্পিকে চারটি সোনা জয়ের কীর্তি।অষ্টআশিতে একশো মিটারে বেন জনসনের কাছে হেরে দ্বিতীয় হলেও ডোপিং বিতর্কে ফেঁসে যাওয়ায় জনসনের স্বর্নপদক চলে যায় কার্ল লউসের জিম্মায়।উনিশশো ছিয়ানব্বইয়ে নিজের শেষ অলিম্পিকে শেষ সোনা জেতেন পঁয়ত্রিশ বছরের কার্ল লিউস।অলিম্পিকে নটি সোনা জয়ের রেকর্ডের পাশাপাশি জিতেছেন একটি রুপোও। মাত্র কুড়ি বছরেই অবসর।কিন্তু কুড়িটি বসন্তের মাঝেই জিমনাস্টিক্সে আনইভেন বারস্, ফ্লোর,ব্যালান্স বিম-সববিভাগেই পুল ফুটিয়েছেন রোমানিয়ার নাদিয়া কোমানিচি। আর জিমনাস্টিক্সে পারফেক্ট টেন মানেই তো নাদিয়া । ছিয়াত্তরের মন্ট্রিল অলিম্পিকে আত্মপ্রকাশ।সেখানেই তিনটি সোনা,একটি রুপো ও একটি ব্রোঞ্জ।তারপর উনিশশো আশির মস্কো অলিম্পিকে দুটি সোনা ও দুটি রুপো।রোমানিয়ার সোনার মেয়ে এখন ব্যস্ত সমাজসেবামূলক কাজ এবং দেশের জিমনাস্টিক্স উন্নয়নে।