WB Panchayat Election 2023 Results: লোকসভা-বিধানসভায় ১টি, কিন্তু পঞ্চায়েতে কেন ৩টি ভোট দিতে হয়?

WB Panchayat Election 2023 Results: পঞ্চায়েত' শব্দটির ব্যুৎপত্তি হিন্দি 'পঞ্চায়ত'। প্রাচীন ভারতে পাঁচজন সদস্য নিয়ে স্বশাসিত স্বনির্ভর যে গ্রামীণ পরিষদ গঠিত হত, তাকেই বলা হত পঞ্চায়েত। আধুনিককালে এই শব্দটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সমষ্টিগত এক চেতনা। ১৯৬৪ সালে পশ্চিমবঙ্গে গড়ে ওঠে চার-স্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা-- গ্রাম পঞ্চায়েত , অঞ্চল পঞ্চায়েত, আঞ্চলিক পরিষদ, জেলা পরিষদ। ১৯৭৮ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু হয়। এর তিন স্তর-- গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ।

Updated By: Jul 11, 2023, 12:22 PM IST
WB Panchayat Election 2023 Results: লোকসভা-বিধানসভায় ১টি, কিন্তু পঞ্চায়েতে কেন ৩টি ভোট দিতে হয়?
ফাইল চিত্র

জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: আজ পঞ্চায়েত ভোটের ফল প্রকাশ। গোটা বাংলা গত ১ মাস ধরে যেন আগুনের মতো তপ্ত হয়ে আছে। খুন-রক্তপাত-আগুন-মারামারি-লড়াই-সংঘর্ষে মুহূর্তে মুহূর্তে কেঁপে উঠেছে বঙ্গভূমি। আজ, মঙ্গলবার ফল প্রকাশের মধ্যে দিয়ে সেই উদ্দীপনা শেষ হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। সারা রাজ্য অধীর আগ্রহে এই ফলের দিকে তাকিয়ে আছে। 

আরও পড়ুন: WB Panchayat Election 2023 Results: এজেন্টকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ, হাজির শর্বরী-লাভলী, ঘটনাস্থলে পুলিস

কিন্তু দেখা গিয়েছে, পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে যত হইচইই হোক, অনেকেই পঞ্চায়েত ব্যবস্থা(Panchayat system) সম্পর্কে খুব স্বচ্ছ ধারণা পোষণ করেন না। কেন পঞ্চায়েতে ৩টি ভোট দিতে হয়, এই মূল প্রশ্নটিই অনেককে বিচলিত করে! আসুন, আজ ফলপ্রকাশের দিনে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ব্যবস্থা(West Bengal Panchayat system) নিয়ে একটু বরং আলোচনা করা যাক।

ওয়াকিবহাল মহল বলে থাকে, পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ব্যবস্থা এ রাজ্যের গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসনের মূল ভিত্তি। 'পঞ্চায়েত' শব্দটির ব্যুৎপত্তি হিন্দি  'পঞ্চায়ত'(पंचायत)। প্রাচীন ভারতে পাঁচজন সদস্য নিয়ে স্বশাসিত স্বনির্ভর যে গ্রামীণ পরিষদ গঠিত হত, তাকেই বলা হত 'পঞ্চায়েত'। 'পঞ্চায়েত' শব্দটির লোকপ্রচলিত অর্থ দাঁড়ায়-- পাঁচ জনের জন্য। সন্দেহ নেই, আধুনিককালে এই শব্দটির অর্থে বিবর্তন ঘটেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সমষ্টিগত এক চেতনা। 

তবে পরে ক্রমে ক্রমে পঞ্চায়েত বিষয়টিতে বহু বিবর্তন এসেছে। ১৯৬৩ সালে পশ্চিমবঙ্গ জেলা পরিষদ আইন বা 'ওয়েস্ট বেঙ্গল জিলা পরিষদ অ্যাক্টে'র মাধ্যমে ১৯৬৪ সালে ব্লক স্তরে আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা স্তরে জেলা পরিষদ গঠিত হয়। এই আইনের উদ্দেশ্য ছিল গ্রামোন্নয়নে স্থানীয় নির্বাচিত সংস্থাকে যুক্ত করা এবং উন্নয়ন ও পরিকল্পনার কাজে গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ ঘটানো, পাশাপাশি এতে জনগণের অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করা। এইভাবে গড়ে ওঠে পশ্চিমবঙ্গের চার-স্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা-- গ্রাম পঞ্চায়েত , অঞ্চল পঞ্চায়েত, আঞ্চলিক পরিষদ, জেলা পরিষদ।

১৯৭৩ সালের পর থেকেই বেশ কয়েকবার পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত আইন সংশোধিত হয়েছে। ১৯৭৮ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গে ত্রিস্তরীয় চৌকিদারি পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু হয়। এর তিন স্তর-- গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ। গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে গ্রাম স্তরে। এই 'গ্রাম' শব্দটি প্রচলিত গ্রামের ধারণার থেকে একটু আলাদা। সমষ্টি উন্নয়ন কল্পে ব্লক-স্তরে গঠিত হয় পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা-স্তরে গঠিত হয় জেলা পরিষদ।

এই বদলের একটা প্রেক্ষিত আছে। ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসে। এসেই তারা গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসনের ক্ষেত্রটিকে নিয়ে ভাবতে থাকে। পশ্চিমবঙ্গের জন্য ভাবা হয় ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা। সেটা গঠনও করা হয়। এবং নবগঠিত এই ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় ১৯৭৮ সালের জুনে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়। ভারতে এই প্রথমবার দলীয় প্রতীকের ভিত্তিতে একই দিনে পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই নির্বাচনের ফলে ১৫টি জেলা পরিষদ, ৩২৪টি পঞ্চায়েত সমিতি ও ৩২৪২টি গ্রাম পঞ্চায়েত গঠিত হয়েছিল। এরপর সেই ১৯৭৮ সাল থেকে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নিয়ম করে পঞ্চায়েতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে চলেছে।

সংশ্লিষ্ট গবেষকেরা পশ্চিমবঙ্গের এই পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে 'দ্বিতীয় প্রজন্মের পঞ্চায়েত' আখ্যা দিয়েছেন। তাঁরা বলেন, পঞ্চায়েত সংস্কার ও নিয়মিত নির্বাচনের এই ব্যবস্থা পশ্চিমবঙ্গের স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের ধারণাটিকে শক্তিশালী ও জনপ্রিয় করে তুলেছে। এর ফলে সাধারণ গ্রামবাসীরা আর সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিকের কাছে দাক্ষিণ্য প্রার্থনা করতে যান না বরং তাঁদের প্রাপ্যের দাবি তোলেন।

অর্থাৎ, গ্রামবাসীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্র হল এই পঞ্চায়েত। আর গ্রামোন্নয়নের ক্ষেত্রে পঞ্চায়েতের ভূমিকা ব্যাপক। শুধু ব্যাপক নয়, উন্নয়নই এর মুখ্য লক্ষ্য। পঞ্চায়েত ব্যবস্থা কার্যত গ্রামীণ পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। আর এর জেরে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গ্রামোন্নয়ন সংক্রান্ত সব কর্মসূচির সঙ্গেই পঞ্চায়েত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িত থাকে। গ্রামোন্নয়নে পঞ্চায়েতের কাজগুলিকে নানা ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন, আর্থ-সামাজিক কাঠামোগত উন্নয়ন (সড়ক, কার্লভার্ট, প্রাথমিক বিদ্যালয় ইত্যাদি)। মৌলিক কাঠামোগত পরিবর্তন (যেমন ভূমি সংস্কার, উদ্বৃত্ত জমি বণ্টন)। কেন্দ্র, রাজ্য সরকার ও স্বগৃহীত বিভিন্ন মানবসম্পদ উন্নয়নগত পরিকল্পনা রূপায়ন। বিশেষ এলাকাভিত্তিক পরিকল্পনা (যেমন দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চল উন্নয়ন কর্মসূচি)। সম্পদ সংগ্রহ  (খেয়াঘাট ও হাটবাজারের পরিকল্পনা, মৎস্যচাষ করে সম্পদ সংগ্রহ ইত্যাদি)।

আরও পড়ুন: West Bengal Panchayat Election 2023 Results Live Updates: গণনাকেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট পেপার ছিঁড়ে কালি ঢেলে দেওয়ার ঘটনা, গ্রেফতার তৃণমূল প্রার্থী

অতএব, দেখা যাচ্ছে, লোকসভা বিধানসভা ভোটের চেয়ে কোনও অংশে কম নয় পঞ্চায়েত ভোট। ফলে, প্রত্যাশিতই যে, এই ভোট নিয়ে সকলের আগ্রহ তুঙ্গে থাকবে।

(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App) 

.