অয়ন শীলের নয়া কীর্তি! নিয়োগ দুর্নীতিতে যোগ্য প্রার্থীর বিস্ফোরক অভিযোগ...
তদন্তের স্বার্থে তাই নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত অয়ন শীলের অফিসের দুই কর্মীকে তলব করেছে ইডি। সল্টলেক বিডি ব্লকে অয়নের সংস্থা এবিএস ইনফোজোন প্রাইভেট লিমিটেড সংস্থার এই ২ কর্মী তথা অয়নের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে চাঞ্চল্যকর নাটকীয় মোড়। তদন্তে সামনে এল, অয়ন শীলের নয়া কীর্তি! অভিযোগ, যাঁরা নিজের যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের থেকেও লাখ লাখ টাকা দাবি করেন অয়ন শীল। টাকা না দেওয়ায় প্যানেল থেকে নাম বাদ পর্যন্ত দিয়ে দেন! এমনই অভিযোগ হুগলির চুঁচুড়ার চয়নিকা আঢ্যর। তাঁর অভিযোগ, পুরসভায় যোগ দিয়েও টাকা না দিতে পারায় সেই চাকরি আর করতে পারেননি চুঁচুড়ার চয়নিকা আঢ্য।
২০১৯ সালে উত্তর ২৪ পরগনার টিটাগড় পুরসভায় চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেখে আবেদন করেন চুঁচুড়া ষন্ডেশ্বরতলার বাসিন্দা চয়নিকা আঢ্য। জাতীয় স্তরের যোগাসন চ্যাম্পিয়ন, অ্যাথলিট চয়নিকা আঢ্য প্লেয়ার্স কোটায় সেই চাকরির পরীক্ষা দিয়ে ইন্টারভিউয়ে ডাক পান। ইন্টারভিউয়ের পর চাকরিও হয়ে যায় তাঁর। ২০১৯-এর ১১ নভেম্বর চয়নিকাকে পুরসভার তরফে জয়েনিং লেটারও দেওয়া হয়। চয়নিকার অভিযোগ, এরপরই এক পুলিসকর্মী একদিন তাঁর বাড়িতে গিয়ে বলেন অয়ন শীলের অফিসে গিয়ে দেখা করতে। চাকরির ব্যাপারে কথা আছে। চয়নিকা তখন তাঁর বাবাকে নিয়ে চুঁচুড়ার জগুদাসপাড়ায় অয়ন শীলের অফিসে গিয়ে দেখা করেন। অয়ন তাঁদের বলেন, চাকরির জন্য ৫ লাখ টাকা দিতে হবে। চয়নিকা জানান, তিনি তো অয়ন শীলের ক্যান্ডিডেট নন। তাহলে কেন টাকা দেবেন? অত টাকা তাঁর কাছে নেইও।
সেদিন ফিরে আসার পর অয়ন শীলের লোক তাঁর সঙ্গে আবার যোগাযোগ করে। তখন তাঁকে সল্টলেকের অফিসে যেতে বলে। বাবাকে নিয়ে সল্টলেকের অফিসেও গিয়েছিলেন চয়নিকা। কিন্তু বেশ কয়েক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও, দেখা না পেয়ে ফিরে আসেন। চয়নিকা জানিয়েছেন, সেইসময় বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে সমস্যা চলছিল তাঁর। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা। চাকরির খুব প্রয়োজন। তাই হাল না ছেড়ে টিটাগড় পুরসভায় গিয়ে কথা বলেন চেয়ারম্যানের সঙ্গে। তখন হবে না, হবে না করেও তাঁকে জয়েন করানো হয়। স্যালারির জন্য স্থানীয় বেসরকারি ব্যাঙ্কে জিরো ব্যালান্স অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হয়। এটিএম কার্ডও দেওয়া হয়। কিন্তু মাত্র ৬ দিন পুরসভার চতুর্থ শ্রেণির কর্মী হিসেবে কাজ করতে পেরেছিলেন চয়নিকা। তারপর তাঁকে বের করে দেওয়া হয় পুরসভা থেকে।
চয়নিকা বলেন, নিয়োগ তালিকায় ২২০ নম্বরে তাঁর নাম ছিল। রাতারাতি সেই তালিকা পরিবর্তন করে, যাঁদের নাম ছিল না, তাঁদের নাম ঢু্কিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর সাফ অভিযোগ, যাঁরা টাকা দিতে পেরেছিলেন, তাঁদের চাকরি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চয়নিকার মত যাঁরা নিজেদের যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের বাদ দেওয়া হয়েছে। আর এর পিছনে রয়েছে অয়ন শীল ও নিয়োগ দুর্নীতি চক্র। প্রসঙ্গত, অয়ন শীলের সংস্থা পানিহাটি সহ বেশ কয়েকটি পুরসভায় নিয়োগের পরীক্ষার দায়িত্বে ছিল। তাঁর অফিস থেকে ইডি বিভিন্ন পুরসভায় নিয়োগের পরীক্ষার ওএমআর শিট ইতিমধ্যেই উদ্ধার করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে স্কুল, পুরসভা সহ বিভিন্ন সরকারি দফতরে নিয়োগের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা তোলা ও বহু মানুষকে প্রতারিত করার অভিযোগ উঠেছে।
তদন্তের স্বার্থে তাই নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত অয়ন শীলের অফিসের দুই কর্মীকে তলব করেছে ইডি। সল্টলেক বিডি ব্লকে অয়নের সংস্থা এবিএস ইনফোজোন প্রাইভেট লিমিটেড সংস্থার এই ২ কর্মী তথা অয়নের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। ইডি সূত্রে খবর, কী কী কাজ চলত ওই অফিসে? কাদের যাতায়াত ছিল? তা জানতেই তলব করা হয়েছে। অয়নের এই সংস্থা-ই ছিল পুরসভার নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ের দায়িত্বে। আবাসন ও সিনেমা তৈরিতেও এই সংস্থা যুক্ত। টাকার লেনদেন সম্পর্কেও ওই দুই কর্মীর থেকে জানবে ইডি।
আরও পড়ুন, আরও বিপাকে কেষ্ট! তিহাড়ের বন্দিদশা থেকে মিলছে না রেহাই