লম্বা পথের স্বপ্ন, দু-চাকায় ভারতের খোঁজ!
পদ্মা থেকে লাদাখ। ৪০ থেকে ১৬ হাজার ১৮১ কিলোমিটার পথ
আত্রেয়ী বিশ্বাস: পদ্মা থেকে লাদাখ। ৪০ থেকে ১৬ হাজার ১৮১ কিলোমিটার পথ। সালটা ২০১৭। মিস্টার জোজোর সেদিন খুব মন খারাপ। আইপিএলের ফাইনালে ধোনির দল হেরেছে। সেটাও আবার মাত্র ১ রানে। জোজোর মনে জোর নেই। দুঃখে সাইকেলটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। বাড়ি থেকে কয়েক কিমি দূরে পদ্মানদী। পদ্মা পাড়ের খাদুয়ায় গিয়ে মনটা কেমন ফুরফুরে হয়ে গেলো। পদ্মাপাড়েই, গঙ্গা দেখার ইচ্ছে হল। মাইলফলকে দেখলো জঙ্গিপুর যেতে ওকে প্রায় ২০ কিমি সাইকেল চালাতে হবে। ব্যাস। সাইকেলের প্যাডেল ঘুরিয়ে জোজো গঙ্গা দেখে যখন বাড়ি ফিরল, তখন ঘড়ির কাঁটা মাত্র তিনটে ঘণ্টা পার করেছে। মানে প্রায় ৪০ কিলোমিটার পথ সাইকেলিং করতে জোজোর লেগেছে মাত্র ৩ ঘণ্টা। রেকর্ড নাকি ! মারো সার্চ। জয় গুগলবাবা। ....নাহ্ । রেকর্ড করেনি জোজো, তবে খোঁজ পেল সাইকেল নিয়ে ভ্রমণ করে এমন বহুজনের। ওহ, বলা হয়নি। এতটা সাইকেলিং করে জোজোর পায়ে কিন্তু ব্যাথা হয়নি। এটাই জোজোর মনে জোর বাড়ায়। ৩ ঘণ্টায় ৪০ কিমি যাওয়ার পর এবার নেক্সট ডেস্টিনেশন ঠাকুরবাড়ি। বীরভূম শান্তিনিকেতন । ৪ দিনেই লালগোলা থেকে শান্তিনিকেতন, শান্তিনিকেতন থেকে লালগোলা , প্রায় ১৫০ কিলোমিটার পথ। কাকুর সারিয়ে নেওয়া পুরনো সাইকেল নিয়ে জোজো লম্বা পথের স্বপ্ন দেখতে লাগলো।
আরও পড়ুন: Nusrat Jahan: 'I Love Taki', টাকির ইছামতীর তীরে নয়া সেলফি জোন; সৌজন্যে সাংসদ নুসরত
না, স্বপ্ন নয়। এটা বাস্তবে। লম্বা যাত্রা পথে ভালো খারাপ সবই দেখেছে। তবে ভূত দেখেনি। বরং চাঁদনী রাতে খোলা আকাশের নিচে ঘুমিয়েছে। কখনও টেন্টে। কখনও কারও বাড়িতে বা কোনও মন্দিরে, ধরমশালায় , মাদ্রাসায়। তবে লাদাখের অভিজ্ঞতা ভয়ানক। সন্ধের আগেই পৌঁছতে হবে গন্তব্যে। কিন্তু সেটা হয়ে ওঠেনি। ঠাণ্ডায় বোঝা যাচ্ছে না শরীরে হাত আছে কিনা। খুব কষ্ট করে রাত ৯ টায় পৌঁছল হোটেলে। শরীর অসাড় লাগছে। আগুনে হাত সেঁকে নিলেই হাতে জান আসবে। যেই না আগুনের কাছে হাত নিয়ে গেছে জোজো, শরীরে প্রবল ঝাঁকুনি। এক সিনিয়র বললো, খবরদার, একদম না। জমে যাওয়া এই হাত আগুনে দিলেই বাদ। অল্পের জন্য হাত রক্ষা পেল জোজোর। অগত্যা ঘষে ঘষে হাত গরম করতে হল। জোজোর সাইকেলে দেশ ভ্রমণের পাশাপাশি পরিবেশ সচেতনতার বার্তাও দেয়।
কেন হঠাৎ জোজোর কথা বললাম? আসলে জোজো , প্রসেনজিত দাস একটা ভালোবাসা। যার ভালোবাসায় ধক আছে। ১৯ টি রাজ্য ও ৬ টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘুরে ওর প্রাপ্তি দেশের আত্মাকে উপলব্ধি করা। বিভেদ বিভাজন হানাহানির খবরে বিষন্ন, বিপন্ন আমরা। তাই জোজোর কথা। দেশ ভ্রমণে কী প্রাপ্তি জোজো? দিদি, বিবিধের মাঝে দেখো মিলনও মহান। ভারত মানে বহুর সমষ্টি। সবটাই একটা সাইকেলের মতই। দু চাকায় ভর করে ভারসাম্য রেখে, চলতে রহো।