Kartikeya: উলঙ্গ শিশু কার্তিকের উপাসনা থেকেই শুরু কাটোয়ার কার্তিক পুজো!

এক সময় বণিকবাবুরা জড়িয়ে পড়ল এখানকার কার্তিকপুজোর সঙ্গেও। নিজের বারবণিতাটির দুঃখ ঘোচাতে তাঁকে খুশিতে রাখতে এই বাবুরা কার্তিক পুজোয় অঢেল টাকা খরচ করতেন। তাঁদের টাকাতেই কার্তিকপুজোর বিপুল আয়োজন হত। 

Updated By: Nov 17, 2023, 09:01 PM IST
Kartikeya: উলঙ্গ শিশু কার্তিকের উপাসনা থেকেই শুরু কাটোয়ার কার্তিক পুজো!
প্রতীকী ছবি

সন্দীপ ঘোষ চৌধুরী: সারাবাংলার কার্তিক পুজো কাটোয়ায় 'কার্তিক লড়াই' নামে খ্যাত। আর কোথাও কার্তিক পুজো এরকম ভিন্ন নাম পায়নি। কার্তিক পুজো তথা কার্তিক লড়াই ঘিরে অনেকদিন থেকেই সেজে উঠছে কাটোয়া শহর। তবে কার্তিক পূজো কীভাবে কার্তিক লড়াই হয়ে উঠল সেই নিয়ে বিভিন্ন গল্প আছে। বহুকাল আগে মুর্শিদাবাদের প্রবেশদ্বার ছিল কাটোয়া। তৎকালীন সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্য বেশ জমজমাট হয়ে উঠছিল কাটোয়ায়। ব্যবসা বাণিজ্যকে কেন্দ্র করেই এখানে ক্রমশ গড়ে উঠছিল এক বাবুসমাজ।

আরও পড়ুন, Memari: মা নেই ১২ বছর, গ্রামের মহিলার সঙ্গে পরকীয়া, ছেলে প্রতিবাদ করায় বাবা ঘটাল ভয়ংকর কাণ্ড!

এই বাবুদের মনোরঞ্জনের জন্য ক্রমে এখানে গড়ে উঠতে শুরু করল নিষিদ্ধপল্লীও। সন্ধ্যা ঘনালেই সে সময়ে কাটোয়ার চুনারিপাড়া, লবণগোলা পাড়ার নিষিদ্ধপল্লীর ঘরগুলিতে জ্বলে উঠত বাহারি আলো। রংদার পোশাকে বাবুরা পৌঁছে যেতেন বারবণিতাদের পাড়ায়। আর ততোধিক ঝলমলে পোশাকে বাবুদের কাছ নিজেদের মোহময়ী করে তুলতেন বারবণিতারা। বাবুদের খুশি করে মিলত অর্থ, বিলাসবহুল জীবনযাপনের প্রতিশ্রুতি। কিন্তু এরপরেও কোথাও একটা খামতি থেকে যেত বারবণিতাদের জীবনে।

কোনও দুর্বল মুহূর্তে মাতৃত্বের আকাঙ্ক্ষায় ব্যাকুল হয়ে পড়তেন তাঁরা। সেই আকুল বেদনা থেকেই এখানে শুরু হল কার্তিক পুজো। কার্তিক তাঁদের কাছে সন্তানসম। স্থানীয় ইতিহাস গবেষকদের মতে, কাটোয়া শহরের ঐতিহ্যবাহী এই কার্তিক পুজোর সূচনা হয়েছিল কাটোয়ার নিষিদ্ধপল্লী থেকেই। জানা যায়, কাটোয়া শহরের প্রাচীন নাম ছিল 'কণ্টকনগর'। কাটোয়ার উপর দিয়ে বয়ে চলা ভাগীরথী নদী তখন ছিল বাণিজ্যের জরুরি মাধ্যম। দেশ বিদেশের ব্যবসায়ীরা নদীপথে কাটোয়ায় বাণিজ্য করতে আসতেন। এই সব বণিকবাবুদের হাত ধরে দেশ বিদেশের হরেক মালপত্রও আসত কাটোয়ায়। আর কাটোয়া থেকে সেসব যেত দূর দূরান্তে।

এই বণিকবাবুদের অনেককেই ব্যবসার প্রয়োজেন রাত কাটাতে হত কাটোয়ায়। আর তাঁরা রাত্রিবাসের জন্য বিশেষ করে বেছে নিতেন কাটোয়ার সদ্য গড়ে উঠতে থাকা নিষিদ্ধপল্লীগুলি। এখানকার সংস্কৃতির সঙ্গে তাঁরা জড়িয়েও পড়তে শুরু করলেন। এক সময় এই বণিকবাবুরা জড়িয়ে পড়ল এখানকার কার্তিকপুজোর সঙ্গেও। নিজের বারবণিতাটির দুঃখ ঘোচাতে তাঁকে খুশিতে রাখতে এই বাবুরা কার্তিক পুজোয় অঢেল টাকা খরচ করতেন। তাঁদের টাকাতেই কার্তিকপুজোর বিপুল আয়োজন হত। আলো, ভোজ, গানবাজনা, শোভাযাত্রার বিপুল জৌলস। আর চলত এসব নিয়ে ঘোরতর প্রতিযোগিতা।

প্রতিযোগিতা চলত এক বারবণিতার সঙ্গে অন্য বারবণিতার। কিন্তু তা আসলে এক বাবুর সঙ্গে অন্যবাবুর। কার্তিকপুজোকে ঘিরে এই যে লড়াই সেই থেকেই এখানে সূচনা হল কার্তিক লড়াইয়ের। কাটোয়ার গঙ্গাতীরে বর্তমান হরিসভাপাড়ার প্রাচীন নাম ছিল চুনারিপাড়া। এই পাড়াতেই বাবুদের আশ্রয়ে ছিল পতিতালয়। এখানকার পতিতাদের পূজিত ন্যাংটো শিশু কার্তিকের উপাসনা থেকেই শুরু হয়েছিল কাটোয়ার কার্তিক পুজো। সময়ের সঙ্গে অনেক কিছুর পরিবর্তন হলেও সেই ন্যাংটো কার্তিকের পূজো প্রাচীন সাংস্কৃতিক উদযাপন গুলির মধ্যে অন্যতম।

আমরা ক'জন ক্লাবে আজও হয় সেই পূজো। যেখানে ঘরের বাচ্চার মত কার্তিককে ঝুনঝুনি, বেলুন,মোয়া দেয় ভক্তরা। বিশ্বাস করা হয় এই জাগ্রত কার্তিকের কাছে মানত করলে ইচ্ছা পূরণ হয়। নিসন্তানের সন্তান হয়। কাটোয়া শহরে পতিতাপল্লী আর নেই। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভাগীরথী দিয়ে বয়ে গেছে অনেক জল। কিন্তু কাটোয়ার কার্তিক লড়াইয়ের ঐতিহ্য এখনও স্বমহিমায় বর্তমান। কাটোয়ার কার্তিক লড়াই ক্রমশ কাটোয়ার গর্বে পরিণত হয়েছে। ক্রমশ আরো জাকজমক পূরণ হয়ে উঠেছে কাটোয়ার কার্তিক লড়াই। সাবেকিয়ানা থাকার সঙ্গে জায়গা করে নিয়েছে থিমের পূজোও। নানা ধরণের প্যান্ডেল,রকমারি আলো, রকমারি বাজনায় চার দিন ধরে চলে এই কার্তিক লড়াই উৎসব। কাটোয়ার কার্তিক লড়াইয়ের শুরু থেকে থাকার পূজো চলে আসছে। থাকার পূজো গুলিতে থরে থরে পুতুল সাজিয়ে তুলে ধরা হয় নানান পৌরাণিক কাহিনী।

এর পাশাপাশি সিঙ্গেল ঠাকুরের পুজোয় আছে। রয়েছে বিগ বাজেটের থিমের পূজো। এই বছরের কাটোয়ার কার্তিক লড়াইয়ের বিগ বাজেটের থিমের পূজো গুলির মধ্যে রয়েছে অমৃতসরের স্বর্ণ মন্দির, জারওয়ার দেশ, কাঠ পুতুলের দেশে, লালকেল্লা, কাল্পনিক মন্দির সহ অন্যান্য রকমারি থিম। প্রতিমা ছাড়াও রকমারি লাইটে সুসজ্জিত ট্যাবলো সহযোগে বাজনা নিয়ে শোভাযাত্রা করে শহর পরিক্রমা করেন পূজো উদ্যোক্তারা। শতাব্দী প্রাচীন কার্তিক পুজোকে সুষ্ট ভাবে সম্পন্ন করার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে ১৫০০ পুলিস। সি সি টিভি ক্যামেরায় মুড়ে ফেলা হয়েছে গোটা শোভাযাত্রার পথ। এক কথায় কাটোয়ার ঐতিহ্য কার্তিক পূজোর আনন্দে বিভিন্ন ভাবে মেতে উঠেছে পূজো উদ্যোক্তা, প্রশাসন সহ সাধারণ মানুষ।

আরও পড়ুন, Jalpaiguri: গলায় দা-এর কোপ দেওরের, অঝোরে ঝরছে রক্ত, ছুটছেন বউদি! হাড়হিম দৃশ্য...

(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)

.