খোয়া গিয়েছে দেড় বিঘা জমি-ভিটে-মাটি, তবুও রোদ্দুর হতে চায় বিরল রোগে আক্রান্ত ভুবন
পরিবারের সদস্যরা কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভরতি করে ভুবনকে। পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে সেখান থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ, কলকাতার হাসপাতাল হয়ে বেঙ্গালুরুর হাসপাতালে ভুবনের চিকিৎসা হয়
নিজস্ব প্রতিবেদন: জটিল স্নায়ুরোগ কৈশোর কেড়ে নিয়েছে কাটোয়ার পারুলিয়া গ্রামের ভুবন মণ্ডলের। চার বছর চলচ্ছক্তিহীনভাবে বিছানায় পড়ে সে। ছেলেকে বাঁচাতে শেষ সম্বল দেড় বিঘে জমি বিক্রি করতে হয়েছে। ঘটি-বাটি সব হারিয়েছে পরিবার। জটিল রোগে আক্রান্ত সন্তানকে নিয়ে কোনওরকমে দিনগুজরান করছে কাটোয়ার এই পরিবার।
আরও পড়ুন- নায়ারণগড়ে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে বিস্ফোরণ, মৃত ২
পরিবারে সদস্য বলতে মা, বোন আর বৃদ্ধ ঠাকুমা। ভুবনের ‘মারণ রোগে’ আক্রান্ত হওয়ার পর ছেড়ে চলে গিয়েছে তাঁর বাবা। এখন পরিবারের নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। রোজগার বলতে কাগজের ঠোঙা তৈরি করে বিক্রি করা অর্থ। চরম আর্থিক কষ্টের মধ্যে আধপেটা খেয়ে কোনওভাবে দিনযাপন করতে হচ্ছে গোয়াই গ্রাম পঞ্চায়েতের পারুলিয়া গ্রামের অপর্ণা মণ্ডলদের। কীভাবে এই পরিস্থিতি তৈরি হল ভুবনের?
ঘটনার শুরু ২০১৪ সালের ৩ মে। অভিশপ্ত ওই দিন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ভুবন কাকার বাড়ি থেকে ফিরছিল। পরীক্ষা সামনেই। তাড়াতাড়ি বই নিয়ে বসতে এক ছুটে বাড়ি আসছিল ভুবন। কিন্তু হঠাত্ই দাঁড়ানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে সে। শরীরের বাঁদিক অবশ হয়ে যায়।
আরও পড়ুন- মাইক বাজানোকে কেন্দ্র করে জনতা-পুলিস খণ্ডযুদ্ধ, আহত ১৫
পরিবারের সদস্যরা কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভরতি করে ভুবনকে। পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে সেখান থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ, কলকাতার হাসপাতাল হয়ে বেঙ্গালুরুর হাসপাতালে ভুবনের চিকিৎসা হয়। সেভাবে সাড়া মেলেনি চিকিত্সার। সেই দিনই শেষ দৌড় ছিল তার। তার পর থেকে বিছানায় শুয়ে ভুবন। আর বোধহয় কোনওদিন ভুবন ছুটবে না, স্কুলেও যেতে পারবে না। ক্যাথিড্রাল সঙ্গে করে সম্পূর্ণ অবশ শরীর নিয়ে শুয়ে থাকে ভুবন।
পরিবারের অভিযোগ, বহু আবেদন নিবেদন করেও প্রশাসনের কাছ থেকে কোন সাহায্য জোটেনি। স্থানীয় ব্লক প্রশাসনের কাছে আবেদন করেও কিছু হয়নি বলে জানিয়েছেন অপর্ণা দেবী। তবে, কাটোয়ার মহকুমা শাসক সৌমেন পাল জানিয়েছেন, প্রশাসনিকভাবে পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন- মায়ের সঙ্গে মেসোর শারীরিক সম্পর্ক, দেখে ফেলাতেই খুন ছেলে
ভুবনের বোন একাদশ শ্রেণির লিলি মণ্ডল সর্বক্ষণের তাঁর সঙ্গী। শীর্ণ হাত ধরে বোন সান্ত্বনা দিয়ে বলে ওঠে “দাদা তুই উঠে দাঁড়াবি, বেঁচে থাকবি।” সংবাদমাধ্যমের কাছে স্বেচ্ছামৃত্যুর আর্জি জানিয়েছে পরিবার। তবে, ভুবন এখনও রোদ্দুর হতে চায়।