লকডাউন তাঁর কাছে যেন আশীর্বাদ! খড়কুটো আঁকড়ে মেতেছেন সৃষ্টি সুখের উল্লাসে
এ বছর করোনা আবহে দেশব্যাপী পুজোর জাঁকজমকে ভাঁটার টান। সে ভাবে আসেনি মন্ডপ সজ্জার বরাত। দু একটা অর্ডার আসলেও তাও করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় বাতিল করে দিয়েছেন শিল্পী নিজেই
নিজস্ব প্রতিবেদন: করোনা আতঙ্কে গৃহবন্দি মানুষ। ঘর থেকে বাইরে বেরোনো বন্ধ। ঘরে থাকতে থাকতে মানুষের মনের কোণায় জমে উঠেছে অবসাদের কালো মেঘ। কিন্তু অবসাদের সেই কালো মেঘ গ্রাস করতে পারেনি বাঁকুড়ার মালিয়াড়া গ্রামের শিল্পী সমরেন্দ্রনাথ মিশ্রকে। লকডাউনে হাতে অফুরন্ত সময়। তাই নির্জনে বসে শিল্পীর দশ আঙুল মেতে উঠেছে সৃষ্টি সুখের উল্লাসে।
শিল্পী সমরেন্দ্রনাথ মিশ্রের শৈল্পিক সত্তার যাত্রা শুরু কুড়ি বছর বয়সে। গ্রামের মুক্ত পরিবেশে বেড়ে ওঠার সময় মনের আয়নায় বাসা বাঁধতে শুরু করে তাঁর শিল্পসত্তা। গ্রাম জুড়ে ধান জমি । সেই জমি থেকে নানা রং-এর খড় সংগ্রহ করে শুরু করেছিলেন স্ট্র ক্র্যাফ্টের কাজ। ধীরে ধীরে শিল্পীর দশ আঙুলে ধরা দেয় দক্ষতা। এরপর থেকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি সমরেন্দ্রনাথ মিশ্রকে।
কৈশোরে নিজের মনের তাগিদে শিখে ফেলা শিল্পকলাই তাঁর জীবন জীবিকা হয়ে দাঁড়ায়। ডাক পড়ে বিভিন্ন পুজোর মন্ডপ সজ্জার কাজে। প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কলকাতা, মুম্বই, দিল্লি, রাঁচি, বোকারো, চেন্নাই সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দুর্গা ও কালী পুজোর মন্ডপ সজ্জার কাজ করে আসছেন তিনি। প্রতিবছর পুজোর আগের কয়েকটা মাস দম ফেলার ফুরসৎ থাকে না সমরেন্দ্রনাথ মিশ্রের।
কিন্তু এ বছর করোনা আবহে দেশব্যাপী পুজোর জাঁকজমকে ভাঁটার টান। সে ভাবে আসেনি মন্ডপ সজ্জার বরাত। দু একটা অর্ডার আসলেও তাও করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় বাতিল করে দিয়েছেন শিল্পী নিজেই। ফলে চলতি বছর পুজোর আগেও কোনো ব্যস্ততা নেই শিল্পীর। অবসর সময়ে একান্তে নিজের কর্মশালায় বসে শিল্পীর হাতে ধীরে ধীরে স্ট্র ক্র্যাফ্টে ফুটে উঠছে যামিনী রায়, গগনেন্দ্র নাথ ঠাকুর সহ বিভিন্ন নামী চিত্র শিল্পীর বিখ্যাত সব শিল্প কর্ম।
আরও পড়ুন- রাধারানির খুলিতে আটকে ২০টি বুলেট, Zee ২৪ ঘণ্টার হাতে সিটিস্ক্যানের রিপোর্ট
শিল্পী জানান, " লকডাউনে আমার হাতে অফুরন্ত সময়। এটাকে আমি আশীর্বাদ বলে ভাবছি।এই সময়টাতে আমি আমার কাজের বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা করে নিচ্ছি। কাজ নিয়ে গবেষণা করে আমি ভীষণ মানসিক তৃপ্তি পাচ্ছি। অন্যান্য সময়ে প্রচুর অডার্র থাকে । রোজগারের জন্য সেই কাজগুলো করতে হয়। ফলে এই সৃজনমূলক কাজগুলো করার সুযোগ থাকে না। সৃষ্টিশীল কাজ দূরে সরে যাচ্ছিল। এখন মনে হচ্ছে সৃষ্টিগুলো আমার কাছে এগিয়ে আসছে। তাই লকডাউন আমার জীবনে আশীর্বাদ।" কমার্শিয়াল কাজের ব্যস্ততায় এতদিন মনের যে চাহিদাগুলো অধরা থেকে গিয়েছিল ,করোনা আবহের অখণ্ড অবসরে সেগুলোই প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে শিল্পীর কর্মশালার ছোট্ট গ্যালারিতে। করোনার এই পরিস্থিতিতে একান্তে শিল্পী নিজের শিল্প সত্তাকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন নতুন প্রজন্মের মধ্যে।