মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কর্মী ছাঁটাই আসানসোলের এক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির
আসানসোলের সালানপুর থানার অন্তর্গত এথোরা গ্রামের এলাকায় দু নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে অবস্থিত এই মাল্টিন্যাশনাল আইসক্রিম কোম্পানিটি
নিজস্ব প্রতিবেদন: করোনার জন্য এক মাসের বেশি সময় ধরে লকডাউন। তার জন্য অনেক আগেই হাজার হাজার মানুষের পেটে টান পড়েছে। তবে এই সমস্যা সাময়িক। কিন্তু করোনার দোহাই দিয়ে ৩০টি পরিবারকে পাকাপাকি অনাহারের দিকে ঠেলে দিল একটি মাল্টিন্যাশনাল আইসক্রিম কোম্পানি।
লকডাউন শুরু হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রী বারবার বলেছেন এই অবস্থায় সরকারি বা বেসরকারি কোন কর্মসংস্থান থেকে কর্মী ছাঁটাই করা যাবে না। সেই নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ৩০ জন কর্মীকে ছাঁটাই করলেন একটি মাল্টিন্যাশনাল আইসক্রিম কোম্পানির কর্তৃপক্ষ ।
আসানসোলের সালানপুর থানার অন্তর্গত এথোরা গ্রামের এলাকায় দু নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে অবস্থিত এই মাল্টিন্যাশনাল আইসক্রিম কোম্পানিটি। চালু হয় ২০১৭ সালে। এই কারখানায় স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় ৮০০ জন কর্মী কাজ করেন। লকডাউন চলায় এই কারখানায় কাজকর্ম বন্ধ। সেই সময় এই ৩০ জন কর্মীকে টেলিফোন করে জানিয়ে দেওয়া হয় আর কাজে আসতে হবে না এবং মেল মারফত ছাঁটাইয়ের নোটিশ তাদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। আচমকা চাকরি চলে যাওয়াতে দিশেহারা হয়ে পড়েন বলবীর সিং, সুপান্ত রায় চৌধুরীর-সহ ত্রিশ জন কর্মী ।
আরও পড়ুন- গুজরাটে কোভিড-১৯ প্রাণঘাতী হওয়ার পেছনে উহানের L-Type করোনাভাইরাস!
এই ৩০ জন কর্মীর অধিকাংশই অন্য রাজ্যের বাসিন্দা। যখন এই আইসক্রিম কারখানাটি শুরু হয় তখন কর্তৃপক্ষই ভিন রাজ্য থেকে এই কারিগরদের নিয়ে এসেছিলেন। চাকরি চলে যাওয়াতে মহাবিপদে পড়েছেন তাঁরা। কোনও কুলকিনারা পাচ্ছেন না। কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি হয়ে বলবীর, বাহাদুররা জানান, ছাঁটাই হওয়া অধিকাংশ কর্মী ভিন রাজ্যের বাসিন্দা। পরিবার নিয়ে আসানসোলে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে হয়। লকডাউন চলায় একদিকে ঘরে নেই খাবার, অন্যদিকে বাড়ি ভাড়া বাকি পড়ে গেছে । তার উপর চাকরি চলে গেল। সব মিলিয়ে চরম বিপদের মুখোমুখি বলে জানান তাঁর।
কেন ছাঁটাই করা হল তার কারণ জানায়নি কর্তৃপক্ষ বলে অভিযোগ ওই শ্রমিকদের। তাঁরা জানান, কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়, অর্ধেক বেতনেও কাজ করত রাজি আছেন তাঁরা। তবুও কোন সমাধানের রাস্তা বেড়িয়ে আসে নি। বারবার অনুরোধে কোনও কাজ না হওয়ার পর ৩০ জন ছাঁটাই হওয়া কর্মী প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছেন। তাঁরা চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন পশ্চিম বর্ধমানের জেলা আধিকারিক আর লেবার কমিশনকে। লেবার কমিশন চিঠি পাওয়ার পরই মাল্টিন্যাশনাল আইসক্রিম কোম্পানির কর্তৃপক্ষকে একটা কড়া চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে সূত্রে খবর। বলা হয়েছে, কেন্দ্র এবং রাজ্যের নির্দেশ উপেক্ষা লকডাউন চলাকালীন আপনারা কর্মী ছাঁটাই করেছেন। এটা আইন বিরোধী। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজেদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুন।
লেবার কমিশন চিঠি দেওয়ার পর কোম্পানির ম্যানেজার বি রমেশের সঙ্গে বহুবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয় । কিন্তু তিনি আমাদের টেলিফোন ধরেননি। যার ফলে কোন কারণে কর্মী ছাঁটাই করা হল এবং লেবার কমিশনের চিঠি পাওয়ার পর তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে সেই বিষয়ে কিছুই জানা যায়নি।
এখানেই শেষ নয়। লকডাউনের কুপ্রভাব ক্রমশ গ্রাস করছে আসানসোল শিল্পাঞ্চলকে । শুধু মাল্টিন্যাশনাল আইসক্রিম কোম্পানি নয় , অভিযোগ পুরো শিল্পনগরী জুড়ে ছোট বড় অনেক বেসরকারি কলকারখানায় কর্মী ছাঁটাই শুরু হয়ে গেছে। সেইসঙ্গে বেশ কিছু কোম্পানি আটকে দিয়েছে কর্মীদের বেতন। সব মিলিয়ে লকডাউনকে সামনে রেখে মালিকপক্ষ নানারকম ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে।