৪২ লাখের পঞ্চায়েত টেন্ডারে তোলাবাজি, প্রধানের কমিশন ০.৫%! বিস্ফোরক তৃণমূল উপপ্রধান
সরকারের পাঠানো টাকায় কে কাজ পাবে? কী কাজ হবে? আগেই ঠিক করে পঞ্চায়েতের এক সদস্য ২৪ জন ঠিকাদারের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা করে তুলে নেয়।
সন্দীপ ঘোষ রায়চৌধুরী: মঙ্গলকোটে পঞ্চায়েত টেন্ডারে তোলাবাজির অভিযোগ। বন্দুক দেখিয়ে উপপ্রধানকে তুনে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ। ছাড়া পেলেও দু-মাস আতঙ্কে গৃহবন্দি দোলন সাঁতরা। মঙ্গলকোট থানায় অভিযোগ দায়ের উপপ্রধানের। আতঙ্কে রয়েছেন পঞ্চায়েতের আরও ১২-১৪ জন সদস্য। অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সদস্য শেখ আব্দুল আজিম সিদ্দিকি।
পঞ্চায়েতের টেন্ডার তোলাবাজির ঘটনায় নয়া মোড় । ৪২ লাখ টাকার টেন্ডার অনুমোদনের বৈঠকের কোরামের জন্য বন্দুক ঠেকিয়ে জোর করে পঞ্চায়েতের উপপ্রধানকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠল। ভয়ে আতঙ্কে উপপ্রধান দোলন সাঁতরা মাঝি প্রায় দুমাস গৃহবন্দি। মঙ্গলকোট থানায় অভিযোগ দায়ের উপপ্রধান দোলন সাঁতরা মাঝির। এদিকে মঙ্গলকোটের ভাল্যগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পার্বতী ঘোষ স্পষ্ট জানান, পঞ্চায়েতের যে কোন টেন্ডারের ১০ শতাংশ কমিশন তোলা হয়। তাঁকে দেওয়া হয় মাত্র ০.০৫ শতাংশ। বাকি টাকা আত্মসাৎ করেন প্রদীপ চট্টরাজ নামে এক পঞ্চায়েত সদস্য। ভাল্যগ্রাম পঞ্চায়েতের ৪২ লাখ টাকার টেন্ডারের ঘটনায় উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে দল তদন্ত করবে বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়।
ঘটনার সূত্রপাত চলতি বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর। ভাল্যগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য রাজ্য সরকারের গ্রামীণ উন্নয়ন দপ্তর থেকে পাঠানো হয় ৪২ লক্ষ টাকার টেন্ডার নিয়ে পঞ্চায়েতের সদস্যদের বৈঠককে ঘিরে। সরকারের পাঠানো টাকায় কে কাজ পাবে? কী কাজ হবে? অভিযোগ, এসব আগেই ঠিক করে পঞ্চায়েতের এক সদস্য ২৪ জন ঠিকাদারের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা করে তুলে নেয়। আর তাই এই অভিযোগে অধিকাংশ সদস্য বৈঠকে আসতে রাজি হননি। বৈঠকের কোরাম করতে পঞ্চায়েত সদস্য রুনু মাস্টারের নেতৃত্বে পাঁচজন দুষ্কৃতী উপপ্রধান দোলন সাঁতরা মাঝিকে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে পঞ্চায়েতে তুলে নিয়ে আসেন বলে অভিযোগ।
যদিও অভিযুক্ত রুনু মাস্টার সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সদস্যরা নিজের ইচ্ছায় পঞ্চায়েতের বৈঠকে গিয়ে সই করেছেন। ১৯ সদস্যের ভাল্যগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পার্বতী ঘোষ কার্যত ঠুঁটো জগন্নাথ। পঞ্চায়েত পরিচালনায় প্রদীপ চট্টরাজের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি সক্রিয়। পঞ্চায়েতের কোন কাজ সম্পর্কে তাঁকে জানানো হয় না। হুমকি দিয়ে বিভিন্ন কাজে সই করিয়ে নেওয়া হয়। এমনকি যে কোনও টেন্ডারে ঠিকাদারদের কাছ থেকে ১০ শতাংশ কমিশন আদায় করা হলেও, আদায়কৃত কমিশন থেকে প্রধান মাত্র ০.০৫ শতাংশ ভাগ পায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে ভাল্যগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের ১২ সদস্য সমস্যা সমাধানের দ্রুত আবেদন জানিয়ে লিখিতভাবে গোটা ঘটনা দলের জেলা সভাপতিকে জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন, ফের উত্তেজনা বাসন্তীতে; তৃণমূল কর্মীদের মারধর, অভিযুক্ত আইএসএফ-আরএসপি-বিজেপি
পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় এপ্রসঙ্গে বলেন, উপপ্রধানের দলের ফোরামে জানানো উচিত ছিল। উপপ্রধান একজন মহিলা। তিনি থানায় অভিযোগ করেছেন। বিষয়টা পুলিস দেখবে। প্রধানের টেন্ডারের কমিশন তোলার অভিযোগ যদি সত্য হয় তাহলে অভিযুক্ত প্রদীপ চট্টরাজের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নেবে। এছাড়াও পুরো ঘটনার তদন্ত করবে দল।