ফোঁড়েদের হাতে রিমোট কন্ট্রোল, আলুর ছ্যাঁকা মধ্যবিত্তের রান্নাঘরে

রান্নাঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে রাজ্যজুড়ে আলুর কালোবাজারি। রাজ্যেজুড়ে আলুর কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা।

Edited By: অধীর রায় | Updated By: Jul 27, 2020, 05:47 PM IST
ফোঁড়েদের হাতে রিমোট কন্ট্রোল, আলুর ছ্যাঁকা মধ্যবিত্তের রান্নাঘরে
প্রতীকী চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন: করোনা গোষ্ঠীসংক্রমণ মোকাবিলায় সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী রাজ্যজুড়ে সপ্তাহে দুদিন লকডাউন। এছাড়া বিভিন্ন জেলায় পরিস্থিতি বিবেচনায় করে কোথাও তিনদিন কোথাও বা চারদিন লকডাউন। এই লকডাউনের সুযোগ নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন পাইকারি এবং খুচরো সবজি বাজারে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে কালোবাজারি। লকডাউনে সবজি বাজারে আকাল পড়বে এই আতঙ্কে সাধারণ মানুষ প্রয়োজনের তুলনায় কিনছেন বেশি। ক্রেতাদের ঘরে সবজি বাজার মজুত করার প্রবণতার ফয়দা লুঠছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। বিশেষ করে যে সব জিনিস কোল্ডস্টোরে রাখা যায় সেই সব আনাজ নিয়ে কালোবাজারি তুঙ্গে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য আলু। লকডাউনে আলুর কালোবাজারি খবরের শিরোনামে।   

রান্নাঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে রাজ্যজুড়ে আলুর কালোবাজারি। রাজ্যেজুড়ে আলুর কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। কিন্তু সূত্রের খবর পশ্চিমবঙ্গে আলুর যা জোগান তাতে আলুর অভাব কোনও ভাবেই হওয়া উচিত নয়। এ রাজ্যে আলুর চাষ সবচেয়ে বেশি হয় হুগলি আর পূর্ব বর্ধমানে। এই বছর আলু উত্পাদন হয়েছে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ লক্ষ মেট্রিক টন। যার মধ্যে ৩০ লক্ষ মেট্রিক টন উত্পাদন হয় হুগলিতে আর ১৫ থেকে ২০ লক্ষ মেট্রিক টন উতপাদন হয় পূর্ব বর্ধমানে।

আলু দু’ভাবে হিমঘরে মজুত হয়। এক চাষিদের হাত ধরে। দ্বিতীয়, আলু ব্যবসায়ীদের হাত ধরে। শতকরা হিসেবে জমি থেকে আলু ওঠার পর আলু ব্যবসায়ীদের হাতেই বেশিরভাগ আলু চলে যায়। কারণ তাঁরা প্রচুর টাকার বিনিময়ে চাষিদের থেকে জমি লিজ নিয়ে নেয়।

আরও পড়ুন: আক্রান্ত করোনা যোদ্ধা! রোগীর মৃত্যু হতেই আইসোলেশন ওয়ার্ডে ঢুকে নার্স পেটাল বাড়ির লোক

সূত্রের খবর বর্তমানে হিমঘরে যে পরিমাণ আলু মজুত আছে তাতে বাজারে আলুর ঘাটতি হওয়ার কথা নয়। আলুর দাম বাড়ার কথা নয়। কিন্তু কেন আলুর দাম বাড়ছে ?  তার প্রধান কারণ হল যেহেতু আলু মজুতের কোন নিদিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া থাকে না। তাই হিমঘরের মালিক অর্থাত আলু ব্যবসায়ীরা টাকার জোরে প্রচুর আলু মজুত করে। যার ফলে আলু জোগানে ক্ষেত্রে রাজ্যের মানুষকে নির্ভর করতে হয় আলু ব্যবসায়ীদের উপর।

জানুয়ারি মাসে নতুন আলু ওঠার পর বাজারে আসে ৩০ লক্ষ মেট্রিক টন আলু। বাকি আলু চলে যায় হিমঘরে। যেটা মে-জুন থেকে হিমঘরে থেকে আলু বাজারে আসতে শুরু করে। কিন্তু মার্চ মাস থেকে লকডাউন শুরু হওয়াতে মানুষের মধ্যে  প্রয়োজনের তুলনায় বেশি আলু কেনার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। সেটাকেই ধীরে ধীরে হাতিয়ার করে হিমঘরে আলু মজুত করে রেখে বাজারে কৃত্রিম অভাব তৈরি করছে একশ্রেণির অসাধু আলু ব্যবসায়ীরা।  
 
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক হুগলির এক আলু ব্যবসায়ী জানান, এখনও রাজ্যে সব হিমঘর মিলিয়ে ৫৭ লক্ষ্ মেট্রিক টন আলু মজুত আছে। এই সময় থেকে নতুন আলু ওঠা পর্যন্ত রাজ্যে দরকার ৫২ নক্ষ মেট্রিক টন আলু। অর্থাত প্রয়োজন যা তার থেকে আলু মজুত বেশি আছে। তবুও খুচরো বাজারে আলুর দাম আকাশছোঁয়া। এর সপক্ষে সেই অন্য যুক্তি খাঁড়া করলেও ইঙ্গিত দিলেন বেশি মুনাফা লাভের আশায় হিমঘর থেকে আলু বাজারে কম ছাড়া হচ্ছে। লকডাউনের মানুষের বাড়তি চাহিদাকে হাতিয়ার করে বাজারে কৃত্রিমভাবে আলুর সংকট তৈরি করা হচ্ছে।

সূত্রের খবর পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়াতে এক আলু ব্যাবসায়ীর গুদামে এইমুহূর্তে মজুত রয়েছে ৬৬ হাজার বস্তা আলু। সেই ব্যবসায়ীর হাত ধরেই কাটোয়া জুড়ে আলুর দাম ওঠানামা করে। যদিও আলু ব্যবসায়ীদের তাঁরা কালোবাজারি করছে না। লকডাউনের জন্য ট্রেন চলছে না । লরিতে মাল যাতায়াত অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি পেট্রোল জিজেলের দাম বাড়ায় পরিবহণ খরচ বেড়ে গেছে। তাই আলুর দামও বেড়েছে।
ইতিমধ্যে রাজ্য সরকার কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে ।কালোবাজারি রুখতে প্রশাসনকে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি আলু ব্যবসায়ীদের ডেকে হুঁসিয়ারি করা হয়েছে । সেই সঙ্গে “সুলভ বাংলা” থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রির ব্যবস্থা করে সরকার ।

 

.