খুনের নেশাতেই একের পর এক মহিলাকে হত্যা সিরিয়াল কিলারের
পুলিসের দাবি, মোট ১২ জন আক্রমণ করে কামরুজ্জামান। কিন্তু সকলকে মারতে সক্ষম হয়নি সে।
নিজস্ব প্রতিবেদন: পরনে ধোপদুরস্ত ব্র্যান্ডেড জামা-প্যান্ট। শৌখিন ও স্বল্পভাষী হিসাবে পাড়ায় পরিচিত ছিলেন কামরুজ্জামান সরকার। সেই লোকই যে একজন হাড় হিম করা সিরিয়াল কিলার, তা যেন এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না কালনার সমুদ্রগড়ের সুজননগরের বাসিন্দারা। এ যেন ক্রিশ্চিয়ান বেলের বিখ্যাত হরর সিনেমা আমেরিকান সাইকো বা বলিউডের মার্ডার ২-র চিত্রনাট্য।
যদিও পুলিস বলছে শুধুমাত্র খুনের নেশায় রীতিমতো নিখুঁত ছক কষে একের পর মহিলাকে হত্যা করেছে কামরুজ্জামান। আগে থেকে রেইকি করেছে। তার পর বাড়িতে একা থাকা মহিলাদের টার্গেট করেছে। তার পর নৃশংস হত্যা করেছে সে।
আরও পড়ুন: তৃণমূল কর্মীদের বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে, উত্তপ্ত গড়বেতা
পুলিসের দাবি, মোট ১২ জন আক্রমণ করে কামরুজ্জামান। কিন্তু সকলকে মারতে সক্ষম হয়নি সে। ৬ জনকে খুন করতে পারলেও বাকি ৬জন বরাত জোরে বেঁচে যান। আর তাদের বয়ানের ভিত্তিতেই পুলিসের জালে ধরা পড়ে ওই সিরিয়াল কিলার।
তবে তার হদিশ পেতে রীতিমতো নাজেহাল হতে হয় পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিসকে। তারা জানিয়েছে, জেলার কালনা মহকুমায় তিনটি খুন হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই মাথায় আঘাত করে ও শ্বাসরোধ করে খুন করার পর তার সর্বস্ব নিয়ে চম্পট দেয় খুনি।
আরও পড়ুন: 'জয় শ্রীরামের' পাল্টা জবাব, মোদীর বাড়িতে 'জয় বাংলা' লেখা কার্ড পাঠাবে তৃণমূল
গত বৃহস্পতিবার কালনার সিঙ্গেরকোণে এক নাবালিকার উপর হামলা হয়। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে। এর মধ্যে হুগলীর বলাগড়ে এক মহিলা ওই একই কায়দায় খুন হন। পাশাপাশি মেমারীর সাতগেছিয়ায় একই দিনে দুই মহিলা খুন হন। এর আগে ২০১৩ সালে একই কায়দায় কালনায় দুটি খুন হয়েছিল।
পুলিসের দাবি, খুনের ধরন দেখেই বোঝা যাচ্ছিল একই লোকের কাজ। পরে আহত মহিলাদের বর্ণনা, স্কেচ ও সিসিটিভি ফুটেজ থেকেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়। তারপরেই জেলা জুড়ে নাকা তল্লাশি শুরু করে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিস। আর তাতেই আসে সাফল্য। রবিবার মেমারির দেবীপুরে একই ধরনের কাজ করতে যাওয়ার পথে পুলিশের জালে হাতেনাতে ধরা পড়ে সিরিয়াল কিলার কামরুজ্জামান সরকার।
আরও পড়ুন: জগদ্দলে বিশ্ববাংলার লোগোয় 'ব'-এর বদলে লেখা হল রাম, তদন্তে পুলিস
পুলিস জানিয়েছে, টুকটুকে লাল রঙের নতুন মোটরবাইক চড়ত চেনম্যান কামরুজ্জামান। ব্যাগের হাতলে ঝুলত নাইলনের ব্যাগ। সেই ব্যাগেই থাকত লোহার রড আর সাইকেলের চেন। জেরায় কামরুজ্জামান জানায়, জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাইকে করে রেইকি করতে বেরত সে। মূলত বাড়িতে একা থাকা মহিলাদের টার্গেট করত সে। নানা অছিলায় তাঁদের বাড়ি ঢুকে প্রথমে মাথায় রড দিয়ে মেরে তারপর গলায় চেন পেঁচিয়ে তাঁদের খুন করত সে।
ধৃতের কাছ থেকে প্রচুর গয়না উদ্ধার করেছে পুলিস। তবে তার প্রায় পুরোটাই ইমিটেশনের। সোমবার তাকে বর্ধমান আদালতে তোলা হয়। ১৩ দিনের পুলিসি হেফাজতের দাবি করা হয়েছে বিচারকের কাছে। পুলিশ সূত্রে খবর, গোটা রহস্যের সমাধান করতে হলে খুনিকে সঙ্গে নিয়েই পুননির্মাণ করতে হবে ঘটনার। তবেই একের পর এক খুনের পেছনে অন্য কোনও কারণ আছে কি না জানা যাবে।
আরও পড়ুন: জয় শ্রীরাম বলাতেই কি বদলি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী? জল্পনা অন্দরে
ধৃতের বাড়ি মুর্শিদাবাদে। তবে, গত দুই বছর ধরে কালনার নাদনঘাটে বসবাস করছে সে। বাড়িতে আছে দুই ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রী। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নম্র ভদ্র স্বভাবের কামরুজ্জান এলাকায় সাতে পাঁচে থাকতেন না। তাঁর পেশা কি তাই নিয়ে কৌতুহলের অন্ত ছিল না এলাকাবাসীর। রোজ সকালেই স্যুটেড-বুটেড হয়ে ঝাঁ চকচকে দুচাকা করে তাঁকে বেরতে দেখতেন প্রতিবেশীরা।
জিজ্ঞাসা করলে কখনও বলতেন তিনি রেলের ঠিকাদার, কখনও বলতেন ঠিকাদারি সংস্থায় কাজ করেন, কখনও বা বলতেন ব্যবসার কথা। কিন্তু এমন পরিপাটি একজন মানুষের মুখোশের আড়ালে যে এমন একজন সিরিয়াল কিলার তা ভেবেই আঁতকে উঠছে এলাকাবাসীরা। নব্বইয়ের দশকের সিরিয়াল কিলার স্টোনম্যানের কথাও বলতে শোনা গেল কাউকে কাউকে। স্তম্ভিত কামরুজ্জানের বাড়ির লোকেরাও। চুপচাপ শান্তশিষ্ট স্বভাবের মানুষটা যে এমনটা করতে পারে কে জানত!