কম খরচে বিলাস বহুল পরিষেবা! শীতে আড়মোড়া ভাঙতে আদর্শ ঠিকানা এ সব সরকারি ট্যুরিজম সেন্টার

পথচলতি মানুষের সুবিধার্থে গন্তব্যে পৌছানোর পথে তৈরি হয়েছে পথের সাথী মোটেল। যেখানে খনিকের বিশ্রাম নিয়ে আবারও যাত্রা শুরু করতে পারেন পর্যটকরা। মোটের উপর গত কয়েক বছরে পর্যটন শিল্পে বদল এসেছে

Reported By: অর্কময় দত্ত মজুমদার | Updated By: Dec 28, 2019, 07:58 AM IST
কম খরচে বিলাস বহুল পরিষেবা! শীতে আড়মোড়া ভাঙতে আদর্শ ঠিকানা এ সব সরকারি ট্যুরিজম সেন্টার
ফাইল চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন: বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর। জীবনানন্দ বহুযুগ আগেই একথা লিখে গেছেন। সত্যিই তো!  পাহাড়, নদী, জঙ্গল, সমুদ্র এবং সবুজের এমন অদ্ভুত্ মিশেল খুব কমই আছে এ বিশ্ব চরাচরে। আর এমন মাটি দিয়ে যে মানুষ গড়া সে ভ্রমণ পিপাসু হবে না তা কি আর হয়? তাই তো কথায় বলে বাঙালির পায়ের তলায় সর্ষে।  আর বাঙালি যেন প্রতিনিয়ত এই কথাটাই প্রমাণ দিতে ব্যস্ত। সে কারণেই চিরাচরিত দী-পু-দা'র গণ্ডি পেরিয়ে বাঙালির এক্সপ্লোরার মন নিত্যনতুন ডেস্টিনেশন খুঁজে বের করে চলেছে।

পর্যটন বাঙালির রক্তে। আর তা এতটাই  অ্যাডিক্টিভ যে তাকে ঘিরে গোটা একটা শিল্প গড়ে উঠেছে। এবং গত কয়েকটা বছর এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সকলের জন্য বেশ ভালো কেটেছে। তার কারণ রাজ্য সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ। সকলেই এক কথায় স্বীকার করে নিচ্ছেন ২০১১ সালের পর নতুন সরকার পর্যটনের উন্নয়ন করতে আলাদা করে প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। যার ফলে দেশ-বিদেশ থেকে আসা পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে।

ইন্ডিয়ান হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্তার বক্তব্যের পাশাপাশি সকলেই নিশ্চয় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে পোস্টার দেখেছেন বলিউড কিং শাহরুখ খান কীভাবে করজোড়ে সুইটেস্ট পার্ট অফ বেঙ্গলে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছেন। শুধু পোস্টারে কেন, পর্যটন দফতরের উদ্যোগে তৈরি হয়েছে বিজ্ঞাপন। সেখানেও বাংলার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর শাহরুখ।

রাজ্যের সবথেকে পপ্যুলার ট্যুরিস্ট স্পটগুলিতে ভিড় বাড়ছে মানুষের। ফলে স্থানীয়েরা ব্যবসা বাড়াতে উত্সাহ পাচ্ছেন। যেমন ধরুন দিঘার কথা। এক সময় বাঙালির প্রিয় উইকেন্ড ডেস্টিনেশন ছিল দিঘা। এখন সেই চিত্র বদলেছে। সারা সপ্তাহেই প্রায় মানুষের ভিড় থাকে সৈকত শহরে।রূপ পাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প। দিঘার সৈকত জুড়ে তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ ম্যারিন ড্রাইভ।

অন্যদিকে ধরুন উত্তরবঙ্গ বা দার্জিলিংয়ের কথা। বড়দিন আর বর্ষশেষের আনন্দে মেতে উঠতে ইতিমধ্যেই শিলিগুড়ি হয়ে ডুয়ার্স বা দার্জিলিংমুখী বহু মানুষ। সরকারের কাজে খুশি তারাও। গোটা রাজ্যের বিভিন্ন শহরকে বিজনেস ট্যুরিজমের নিরিখে প্রোমোট করতে চাইছে রাজ্য। সেই কারণেই কলকাতা, রাজারহাট, দিঘা-সহ বিভিন্ন প্রান্তে তৈরি হয়েছে কনভেনশন সেন্টার।

পর্যটন দফতরের বিভিন্ন আবাস ঢেলে সাজাচ্ছে সরকার। কয়েকদিন আগেই পর্যটন মন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, বেশ কিছু ট্যুরিজম সেন্টারকে নতুন করে স্টার হোটেলের উপযুক্ত করে তোলা হচ্ছে। কম খরচে বিলাসবহুল পরিষেবা দিতেই সরকারের এই উদ্যোগ।

এক নজরে দেখে নেওয়া যাক বর্তমানে রাজ্যের কোথায় কোথায় সরকারি ট্যুরিজম সেন্টার আছে।

সরকারি ট্যুরিস্ট সেন্টার:

** দার্জিলিং ট্যুরিস্ট লজ

** ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি ট্যুরিস্ট প্রজেক্ট

** বহর ট্যুরিজম প্রপার্টি (বহরমপুর)

** শান্তিনিকেতন ট্যুরিজম প্রপার্টি

** দিঘা ট্যুরিজম প্রপার্টি

** হলং ট্যুরিস্ট লজ (জলদাপাড়া)

** মর্গ্যান হাউজ কটেজেস, মর্গ্যান হাউজ ট্যুরিজম প্রপার্টি,

** হিল টপ ট্যুরিজম প্রপার্টি, তাসিডিং ** ট্যুরিজম প্রপার্টি (কালিম্পঙ)

** মুক্তধারা ট্যুরিজম প্রপার্টি (মাইথন)

** মূর্তি ট্যুরিজম প্রপার্টি (গরুমারা)

** বালুতট ট্যুরিজম প্রপার্টি (বকখালি)

‍** তিস্তা সুন্দরী ট্যুরিজম প্রপার্টি (জলপাইগুড়ি)

** রৌদ্রচ্ছায়া ট্যুরিজম প্রপার্টি (কার্শিয়ং)

** বনলক্ষ্মী ট্যুরিজম প্রপার্টি (মালবাজার)

** দিনান্তে ট্যুরিজম প্রপার্টি (রায়গঞ্জ)

** মাতলা ট্যুরিজম প্রপার্টি (সজনেখালি)

** কালীঘাট পিলগ্রিমেজ ফেসিলিটেশন সেন্টার, কলকাতা

এছাড়াও পথচলতি মানুষের সুবিধার্থে গন্তব্যে পৌছানোর পথে তৈরি হয়েছে পথের সাথী মোটেল। যেখানে খনিকের বিশ্রাম নিয়ে আবারও যাত্রা শুরু করতে পারেন পর্যটকরা। মোটের উপর গত কয়েক বছরে পর্যটন শিল্পে বদল এসেছে। খুলে গেছে নতুন সম্ভাবনার দরজা। তবে সার্বিক ভাবে পরিকাঠামোতে আরও কিছু বদল আনার প্রয়োজন রয়েছে বলেই মনে করছেন এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা।

আরও পড়ুন- ১৮ ঘণ্টা পার, এখনও উদ্ধার হল না কুয়োয় আটকে থাকা বাঁশদ্রোণী যুবকের

কলকাতার সঙ্গে চিনের কুনমিং যুক্ত হয়েছে সরাসরি বিমান পরিষেবায়। তবে কলকাতা বিমানবন্দরকে এখনও পুরোপুরি ব্যবহারই করা হয়নি বলে মত অনেকের। কেউ কেউ বলছেন বিমানবন্দরকে কেন্দ্র করে পর্যটনে জোর দিতে হবে। তবে অন্ডাল বা অন্য কোথাও নয় সেই কাজ শুরু করতে হবে নেতাজিসুভাষ চন্দ্র বোস বিমানবন্দর থেকেই।

আবার কেউ বলছেন সরকারের প্রথম কাজ হওয়া উচিত্ বিভিন্ন ট্যুর অপারেটরদের একটা তালিকা তৈরি করে তাদের নথিবদ্ধ করা। তা না হলে অসম প্রতিযোগিতায় ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। কখনও আবার নাম খারাপ হচ্ছে কোনও ভাল ডেস্টিনেশনের। তবে এই মুহূর্তে দেশ ও রাজ্যের পর্যটন শিল্প কিছুটা হলেও ধাক্কা খেয়েছে,  জাতীয় অর্থনীতির খারাপ হালের সৌজন্যে।

.