EXPLAINED | Flood: কেন ঘন ঘন আকস্মিক বন্যা? 'উড়ন্ত নদী'ই ডেকেছে মহাপ্রলয়! প্রকৃতির ভয়ংকর খেলায় সব...
Reason Behind Flood: কেন ঘন ঘন আকস্মিক বন্যা? সারা বিশ্ব আক্রান্ত! কী কারণ? কী হতে চলেছে আগামীতে?
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: বাংলাদেশে (Bangladesh) এই মুহূর্তে জলবন্দি ৪০ লক্ষ মানুষ! ফসল নষ্ট হয়েছে ৩.৫ লক্ষ হেক্টর জমির। বিধ্বংসী বন্যায় প্লাবিত হয়েছে ১২টি জেলা। কার্যত বানভাসী বাংলাদেশই জলের তলায়! বাংলাদেশ আজ বিপর্যস্ত। তবে গতবছর থেকে ইরাক, ইরান, কুয়েত, জর্ডান, চিন ও কানাডার মতো দেশ দেখেছে ভয়াবহ বন্যা। দ্রুত উষ্ণ হয়ে উঠতে থাকা বায়ুমণ্ডল এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি আর্দ্র। আর এত ঘন ঘন বন্যা হওয়ার এটাই কারণ বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। যে সব জায়গায় প্লাবিত হয়েছে,আবহাওয়াবিদরা খেয়াল করে দেখেছেন, সেখানে বজ্রপাত, শিলাবৃষ্টি ও অতি মাত্রায় বৃষ্টিপাতও হয়েছে! ওই সব অঞ্চলের আকাশ বা বায়ুমণ্ডল রেকর্ড পরিমাণে আর্দ্রতা রয়েছে। যা ২০০৫ সালের পরিস্থিতিকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে জলবন্দি ৪০ লাখ মানুষ, ফসল নষ্ট ৩.৫ লাখ হেক্টর জমির
দুই মাস পর চিলিতে মাত্র তিন দিনে ৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল! এত বৃষ্টি হয়েছিল যে, এটি আন্দিজ পর্বতের কিছু অংশের তুষারও গলিয়ে দিয়েছিল। এতেই ব্যাপক বন্যা হয়। যার ফলে সেখানকার রাস্তাঘাট, সেতু ও জল সরবরাহব্যবস্থা সব ধ্বংস হয়ে যায়। এক বছর আগে অস্ট্রেলিয়ার কিছু অংশে বন্যা হয়েছিল। যাকে সেই দেশের রাজনীতিবিদরা ‘রেইন-বোমা’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। ওই বন্যায় ২০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয় এবং হাজার হাজার মানুষ তাদের ভিটেবাড়ি ছাড়া হয়েছিলেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এসব ঘটনা বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলোর কারণে হয়েছে, যা ক্রমেই আরও তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।
বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলো প্রতিনিয়ত দীর্ঘ, প্রশস্ত ও প্রায়ই ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠছে, যা বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষকে বন্যার ঝুঁকিতে ফেলছে! এমনটাই মত নাসার। এই ‘আকাশের নদী’ বা ‘উড়ন্ত নদী’ হলো ভূপৃষ্ঠ থেকে বায়ুমণ্ডল পর্যন্ত লম্বা ও প্রশস্ত জলীয় বাষ্পের স্তম্ভ, যার উদ্ভব হয় সাধারণত গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চল থেকে, পরে তারা ঠাণ্ডা মেরু অঞ্চলের দিকে সরতে থাকে। এই উড়ন্ত নদীগুলো পৃথিবীর মধ্য-অক্ষাংশজুড়ে চলাচল করা মোট জলীয় বাষ্পের প্রায় ৯০ শতাংশ বহন করে। একটি বায়ুমণ্ডলীয় নদী গড়ে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ, ৫০০ কিলোমিটার প্রশস্ত এবং প্রায় তিন কিলোমিটার গভীর হয়ে থাকে। যদিও এই নদীগুলো ক্রমেই দীর্ঘ প্রশস্ত হচ্ছে। অনেক সময় তা পাঁচ হাজার কিলোমিটারের চেয়েও বেশি দীর্ঘ হয়ে প্রশস্ত হয়ে থাকে। তবুও মানুষ এই নদী চোখে দেখতে পায় না। তারা যা দেখে তা শুধুই কিছু পুঞ্জিভূত মেঘ। নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির বায়ুমণ্ডলীয় গবেষক ব্রায়ান কান বলেছেন, ‘এই নদীর অস্তিত্ব ইনফ্রারেড ও মাইক্রোওয়েভ ফ্রিকোয়েন্সি দিয়ে দেখা যেতে পারে। এ কারণে বিশ্বজুড়ে জলীয় বাষ্প ও বায়ুমণ্ডলীয় নদী পর্যবেক্ষণের জন্য স্যাটেলাইট বেশ কার্যকর হতে পারে।’
উত্তর আমেরিকার দীর্ঘতম নদী মিসিসিপি যতটা না আর্দ্রতা ছড়াবে তার চেয়ে ১৫ গুণ বেশি আর্দ্রতা ছড়াতে পারে বায়ুমণ্ডলের বিশাল ও শক্তিশালী নদীগুলো। এই উড়ন্ত নদীগুলো গড়ে যে পরিমাণ জল নিঃসরণ করে তা বিশ্বের সবচেয়ে বড় নদী আমাজনের নিয়মিত জল প্রবাহের প্রায় দ্বিগুণ। বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলো সব সময়ই ছিল। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, গ্লোবাল ওয়ার্মিং আরও বেশি জলীয় বাষ্প তৈরি করছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। এভাবে অল্প সময়ের মধ্যে ভূ-পৃষ্ঠে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হয়। যে কারণে বিপর্যয়কর বন্যা ও ভূমিধ্বস দেখা দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৬০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী বায়ুমণ্ডলীয় জলীয় বাষ্প ২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তা তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমেই বাড়ছে।
জার্মানির পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব জিওসায়েন্সের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, গ্রীষ্মমন্ডলীয় দক্ষিণ আমেরিকা, উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য প দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বায়ুমণ্ডলীয় নদী অনেক দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করছে। এর অর্থ হলো প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হবে, যা ভূপৃষ্ঠের জন্য ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব বয়ে আনবে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর খলিফা ইউনিভার্সিটির আরও একটি সমীক্ষা বলেছঠে, ২০২৩ সালের এপ্রিলে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ঠিক এমনটাই হয়েছিল। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ‘আমাদের হাই-রেজোলিউশন সিমুলেশনের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলো দেখা গিয়েছে। এই নদীগুলো যখন উত্তর-পূর্ব আফ্রিকা থেকে পশ্চিম ইরানের দিকে উচ্চ গতিতে প্রবাহিত হয় তখন তা ভারী বৃষ্টিপাত তৈরি করে। আগামীতে আরও ভূমিধ্বস ও আকস্মিক বন্যার জন্য় তৈরি থাকতে হবে।
আরও পড়ুন: খেলতে খেলতেই মূত্র বিসর্জন! লাল কার্ড দেখে ছাড়লেন মাঠ, এমনও ঘটে ফুটবলে
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)