রক্তাক্ত মানবজমিন, ধ্বংসস্তূপের পটভূমিতে সোমবার ঈদ পালিত হল গাজায়

  দু'দুটি মহাযুদ্ধে মানব জমিনকে রক্তাক্ত করার পরেও মেটেনি তৃষ্ণা। এখনও গাজা, সুদান, ইউক্রেন, আফগানিস্তান, ইরাকে এখনও গর্জে উঠছে কামান। ফাটছে শেল। মরছে মানুষ। আশ্রয় শিবিরে বাড়ছে হাহাকার।

Updated By: Jul 28, 2014, 08:08 PM IST
রক্তাক্ত মানবজমিন, ধ্বংসস্তূপের পটভূমিতে সোমবার ঈদ পালিত হল গাজায়

ব্যুরো রিপোর্ট:  দু'দুটি মহাযুদ্ধে মানব জমিনকে রক্তাক্ত করার পরেও মেটেনি তৃষ্ণা। এখনও গাজা, সুদান, ইউক্রেন, আফগানিস্তান, ইরাকে এখনও গর্জে উঠছে কামান। ফাটছে শেল। মরছে মানুষ। আশ্রয় শিবিরে বাড়ছে হাহাকার। ধ্বংসস্তূপের পটভূমিতেই সোমবার ঈদ পালিত হল গাজা ভূখণ্ডে। শত্রুর সেলে শেষ হয়ে যাওয়ার আতঙ্ক নিয়েই উত্সবের উপলক্ষ্য খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন মানুষ। গাজা-ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই ভূমধ্য সাগরের এই তিরে রক্তক্ষরণ অব্যাহত। প্রমিসড ল্যান্ডের অজুহাতকে সামনে রেখে বারবার আরব দেশগুলির সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে ইজরায়েল।

আরব দুনিয়ার অন্যপ্রান্তেও শান্তি নেই। এখানে সংঘর্ষ প্রধানত তেলের অর্থনীতিকে সামনে রেখে। কালো সোনার মালিকানাকে কেন্দ্র করে নয়ের দশকের গোড়ায় কুয়েত ও ইরাকের সংঘর্ষ। তাতে হস্তক্ষেপ করে আমেরিকা। উপসাগরীয় মরুরাশিতে ঝড় তোলে মার্কিনি যুদ্ধ বিমান। মরুভূমির বুকে আধুনিক মারনাস্ত্রের প্রদর্শন দেখে শিউরে ওঠে বাকি বিশ্ব।

কিন্তু, তেলের তৃষ্ণার অন্ত নেই। তাই বছর তেরো পরে আবার একটা উপসাগরীয় যুদ্ধ। গণ বিধ্বংসী অস্ত্র খুঁজে বের করতে ইরাকে হামলা চালায় আমেরিকা। ইরাককে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেও সেই অস্ত্রের খোঁজ মেলেনি।

পূর্ব প্রান্তে আরব দুনিয়ার প্রবেশদ্বার আফগানিস্তান। স্মরণাতীত অতীত থেকেই বন্ধুর এই ভূমি যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবেই পরিচিত। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আফগানিস্তানে অশান্তি শুরু হয় দুই মহাশক্তির ঠাণ্ডা লড়াইকে কেন্দ্র করে। আটের দশকে আফগান গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন। মধ্যপ্রাচ্যে কমিউনিস্ট শক্তিকে ঠেকাতে মুজাহিদদের গোপনে সাহায্য করে আমেরিকার। বহু রক্তক্ষরণের পর অবশেষে আফগানিস্তান ছাড়ে রাশিয়া। ঠিক যেভাবে সাতের দশকে ভিয়েতনাম ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল আমেরিকা।

সে ছিল আরেক ঠাণ্ডা লড়াই। স্বাধীনতার যুদ্ধে পিপলস আর্মি অফ ভিয়েতনামকে সাহায্য করেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। আর কমিউনিস্ট শক্তিকে রোখার ঘোষিত লক্ষ্য নিয়ে সেই যুদ্ধে সামিল হয় আমেরিকা। যদিও, ভিয়েতনামী মানুষের মরণপণ লড়াইয়ের কাছে হার মানতে হয়েছিল মার্কিনী শক্তিকে।

যুদ্ধ থেকে বাঁচেনি এই উপমহাদেশও। উনিশশো বাষট্টিতে সীমান্ত সমস্যাকে কেন্দ্র করে যুদ্ধ হয়েছে ভারত আর চিনের মধ্যে। তারপর পঁয়ষট্টি ও একাত্তরে দু'দুবার যুদ্ধে জড়িয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। একাত্তরের যুদ্ধের মধ্যে দিয়েই জন্ম নিয়েছে এদেশের পূর্বপ্রান্ত বাংলা ভাষীদের স্বতন্ত্র রাষ্ট্র বাংলাদেশ।  

একানব্বইয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সরাসরি আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর সামর্থ্য আর কারোর ছিল না।তাই যুদ্ধের উদ্দেশ্য আর প্রকৃতি দুইই গেল বদলে। জন্ম নিল ছায়াযুদ্ধের নতুন পরিভাষা। সন্ত্রাসবাদ। গৃহযুদ্ধের পর প্রথম নিজের দেশে আক্রান্ত হলে আমেরিকা। যাত্রীবাহী বিমানকে ক্ষেপনাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে দুহাজার একে নিউ ইয়র্কে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার গুঁড়িয়ে দিল জঙ্গিগোষ্ঠী আল কায়দা। মার্কিন সেনাসদর পেন্টাগনের আছড়ে পড়ল বিমান। সৌজন্যে এক আরব ধনকুবের। ওসামা বিন লাদেন।

বদলার লড়াইয়ে আমেরিকা শুরু করল 'সন্ত্রাসের' বিরুদ্ধে যুদ্ধ। ওসামা বিন লাদেনকে তাঁর গোপন ডেরা থেকে খুঁজে হত্যা করার পরও সেই যুদ্ধ থামেনি। বিশ্বের অন্যত্রও চলছে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম। এক চিলতে জমি,কয়েকটি তেলের কুয়ো কিংবা খনিজ ভাণ্ডার দখলের প্রতিদিন রক্তাক্ত হচ্ছে ইরাক, ইউক্রেন, গাজা, সুদান, কঙ্গো।  

 

.