মালালা ইউসুফজাই: বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নোবেলজয়ী

যেখানে মহিলাদের বেশিরভাগ জীবনটাই কেটে যায় অশিক্ষার অন্ধকারে, পাকিস্তানের সেই সোওয়াতে আলোর শিখা ১৭ বছরের কিশোরী ইয়ুসুফজাই মালালা। বন্দুকের নলের সামনেও যিনি মাথা নোওয়াতে শেখেননি। বরং মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেও লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন শিক্ষার সুযোগ সকলের জন্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। তারই স্বীকৃতি দুহাজার চোদ্দর নোবেল শান্তি পুরস্কার। পাকিস্তানের খাইবার পাকতুনখোয়া প্রদেশের সোওয়াত জেলার ছোট্ট শহর মিঙ্গোরা। সেখানেই মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার উপর এক সময় ফতোয়া জারি করেছিল তালিবান। সেখানেই দুহাজার নয় সালে গর্জে ওঠে এগারো বছরের ইয়ুসুফজাই মালালা। বিবিসিতে ছদ্মনামে তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়। ব্লগে উঠে আসে সোওয়াত উপত্যকায় তালিবানের প্রভাব বিস্তারের খুঁটিনাটি। তালিবানি শাসনে তাঁর জীবন। এই উপত্যকায় তাঁর দৃষ্টিতে নারীশিক্ষার গুরুত্ব।

Updated By: Oct 10, 2014, 07:43 PM IST
মালালা ইউসুফজাই: বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নোবেলজয়ী

ওয়েব ডেস্ক: যেখানে মহিলাদের বেশিরভাগ জীবনটাই কেটে যায় অশিক্ষার অন্ধকারে, পাকিস্তানের সেই সোওয়াতে আলোর শিখা ১৭ বছরের কিশোরী ইয়ুসুফজাই মালালা। বন্দুকের নলের সামনেও যিনি মাথা নোওয়াতে শেখেননি। বরং মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেও লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন শিক্ষার সুযোগ সকলের জন্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। তারই স্বীকৃতি দুহাজার চোদ্দর নোবেল শান্তি পুরস্কার। পাকিস্তানের খাইবার পাকতুনখোয়া প্রদেশের সোওয়াত জেলার ছোট্ট শহর মিঙ্গোরা। সেখানেই মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার উপর এক সময় ফতোয়া জারি করেছিল তালিবান। সেখানেই দুহাজার নয় সালে গর্জে ওঠে এগারো বছরের ইয়ুসুফজাই মালালা। বিবিসিতে ছদ্মনামে তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়। ব্লগে উঠে আসে সোওয়াত উপত্যকায় তালিবানের প্রভাব বিস্তারের খুঁটিনাটি। তালিবানি শাসনে তাঁর জীবন। এই উপত্যকায় তাঁর দৃষ্টিতে নারীশিক্ষার গুরুত্ব।

তখন অশান্ত সোওয়াতে একের পর এক স্কুল ধ্বংস করে ফেলছে তালিবান। আর তখনই উর্দু কবি, শিক্ষা আন্দোলনের কর্মী জিয়াউদ্দিন ইয়ুসুফের মেয়ে বছর এগারোর মালালার লেখা আলোড়ন তৈরি করে।  সোওয়াতে পৌছয় পাক সেনা। শুরু হয় যুদ্ধ। সে সময়ই এগারো বছরের মালালার জীবন নিয়ে তথ্য চিত্র করেন সাংবাদিক অ্যাডাম বি এলিক। প্রকাশ্যে আসে ইয়ুসুফজাই মালালা।  

খুব অল্পদিনেই বিখ্যাত হয়ে যাওয়া এই কিশোরী চলে যায় তালিবানের হিট লিস্টে। তার কণ্ঠরোধ করাই ছিল তালিবানদের উদ্দেশ্য। নয় অক্টোবর দুহাজার বারো। স্কুল বাসে ওঠার সময় এক ব্যক্তি তার নাম জিজ্ঞাসা করে। মালালা নামটা শুনেই অত্যাধুনিক অস্ত্র থেকে তিন রাউন্ড গুলি করে ওই ব্যক্তি। এরপর জীবন-মৃত্যুর লড়াই। দীর্ঘদিন ইংল্যান্ডে চিকিত্সার পর সুস্থ হয়ে ওঠে ইয়ুসুফজাই মালালা। ততদিনে গোটা বিশ্ব জেনে গিয়েছে মিঙ্গোরার এই লড়াকু মেয়েটির নাম।  গোটা বিশ্ব দাঁড়িয়েছে তালিবান শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এই কিশোরীর পাশে।   

ইয়ুসুফজাই মালালার জীবন সামনে আসার পরই রাষ্ট্রসঙ্ঘও সকলের জন্য শিক্ষা নিয়ে নতুন উদ্যোগ নেয়। দুহাজার পনেরর মধ্যে বিশ্বের সকলকে স্কুলে পাঠাতে মালালার নামে প্রকল্প তৈরির সুপারিশ হয়। যার জেরে পাকিস্তানে শিক্ষার অধিকার আইন আসে। দুহাজার তেরর এপ্রিল মাসে মালালাকে বিশ্বের একশো প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করে টাইম ম্যাগাজিন। দুহাজার তেরোর বারোই জুলাই তাঁর জন্মদিনে রাষ্ট্রসঙ্ঘে তিনি বিশ্বের সকলের জন্য শিক্ষার কথা বলেন। সেই দিনটিকে 'মালালা ডে'নামে স্মরণীয় করে রাখে রাষ্ট্রসঙ্ঘ। রাষ্ট্রসঙ্ঘের মঞ্চে দাঁড়িয়ে সেদিন মালাল বলেন, এই দিন শুধু তাঁর নয়, সকল মহিলা, ছেলে এবং মেয়ে, যাঁরা নিজেদের অধিকার নিয়ে আওয়াজ উঠিয়েছেন, এ দিন সকলের। নারীশিক্ষা আন্দোলন, শিক্ষার প্রতি অনুরাগ তাঁকে এনে দিয়েছে দেশ বিদেশের নানা পুরস্কার এবং সম্মান। এই কিশোর বয়সেই তিনি সাম্মানিক ডক্টোরেট পেয়েছেন হ্যালিফ্যাক্সের ইউনিভার্সিটি অফ কিংস কলেজ থেকে।  

প্রতি মুহূর্তেই বিশ্বের সকল মানুষের কাছে শিক্ষার বার্তা দিতে নিরলস সতের বছরের মালাল ইয়ুসুফজাই। প্রতি মুহূর্তেই কূসংস্কারের বিরুদ্ধে গোটা বিশ্বের মালালাদের গর্জে উঠতে ভরসা জোগান তিনি।  প্রতি মুহূর্তেই নারীশিক্ষার প্রসারের জন্য সরব হন তিনি।   সেই কাজের জন্য এবার সর্বোচ্চ সম্মান পেলেন মালালা ইয়ুসুফজাই। দুহাজার চোদ্দর নোবেল শান্তি পুরস্কার।

 

.