পৃথিবী ধ্বংস নিয়ে গুজবে কান দিতে মানা বিজ্ঞানীদের
পৃথিবীর আয়ু কি সত্যিই আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা? এই এক প্রশ্নে এখন উত্তাল কলকাতা থেকে ক্যালিফোর্নিয়া লন্ডনের বাস থেকে লাস ভেগাসের রঙিন রাত সব জায়গাতেই এক কথা আর তো কয়েক ঘন্টা বাঁচব, তাই চল বন্ধু জীবনটা দু`হাত পেতে চেটেপুটে উপভোগ করেনি। আতঙ্কের এই আবহে বেশ ব্যবসা চলেছে। পৃথিবী ধ্বংস হবে তাই নিশি ক্লাবের রেট রাতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চড়চড় করে বাড়ছে।
পৃথিবীর আয়ু কি সত্যিই আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা? এই এক প্রশ্নে এখন উত্তাল কলকাতা থেকে ক্যালিফোর্নিয়া লন্ডনের বাস থেকে লাস ভেগাসের রঙিন রাত সব জায়গাতেই এক কথা আর তো কয়েক ঘন্টা বাঁচব, তাই চল বন্ধু জীবনটা দু`হাত পেতে চেটেপুটে উপভোগ করেনি। আতঙ্কের এই আবহে বেশ ব্যবসা চলেছে। পৃথিবী ধ্বংস হবে তাই নিশি ক্লাবের রেট রাতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চড়চড় করে বাড়ছে। পার্কস্ট্রিটের সব নাইট ক্লাবে প্রচুর ভিড়। সবার নাকি একটাই লক্ষ্য। মরতে হলে মজা করতে করতে মরব! অবশ্যি হুজুগে কলকাত্তাইয়া সংস্কৃতির জেরে নিশি ক্লাব মালিকদের পোয়াবারো। সপ্তাহের মাঝেই সপ্তাহন্তের ফূর্তির রেশ। পৃথিবী ধ্বংস হোক বা না হোক সুরা ব্যবসায়ীদেরও পকেট অন্তত আজ রাতে দ্বিগুণ ভারী। ২১/১২/১২ দিনের আগের কয়েকটা ঘন্টা এভাবেই কাটছে। গুজবও উঠছে সুনামির মত। কেউ বলছেন, এই তো শুনে এলাম ওই দেশ ঝড় উঠেছে। কেউ আবার এসএমএসে লিখছেন, ধ্বংসলীলা নাকি শুরু হয়ে গেছে। সেলিব্রেটিরাতো আজ এই কাগজে কাল সেই টেলিভিশন চ্যানেলে তাঁদের একুশের পরিকল্পনার ফিরিস্তি ইতিমধ্যেই দিয়ে ফেলেছেন। পিছিয়ে নেই `আম জনতা`ও। এফএমের সৌজন্যে তাঁরাও মোটামুটি তাঁরদের ডুমসডের শেষ ইচ্ছার বিবরণ গাথা দিয়ে ফেলেছেন। বিজ্ঞানীরা অবশ্য বলছেন, ওসব গুজবে কান দেবেন না। আর পাঁচটা দিনের মতই কাঁটান। ডাক্তাররা বলছেন, ধ্বংস হয়ে যাব ভাবলে মনে কুপ্রভাব পড়ে এতে শরীর খারাপ হতে পারে। শেষের সেদিন সত্যিই ভয়ংকর কী না জানা নেই। তবু উঠছে। গুজবের গরু দুরদার করে গাছে উঠছে।
শেষের সেদিন সত্যিই কি আসন্ন? ২০১২ একুশে ডিসেম্বর। ৫১২৫ বছরের পুরোনো মায়া ক্যালেন্ডারের শেষদিন। ষাটের দশকে মায়া সভ্যতার বিশেষজ্ঞ মাইকেল কোর কথার সূত্রেই পৃথিবীর শেষের সেদিন নিয়ে জল্পনার সূত্রপাত। কো বলেছিলেন, মানবতার পাপক্ষয়ে মায়া ক্যালেন্ডারের শেষে এই দিনই ধ্বংস হয়ে যাবে পৃথিবী।
কী হতে পারে শেষের সেদিন? সেই নিয়ে জল্পনার শেষ নেই। নেই গুজবেরও অন্ত। কোনও কোনও মতে ভয়ঙ্কর কম্পনে কেঁপে উঠবে পৃথিবী। হবে জলোচ্ছ্বাস। পৃথিবীজুড়ে ঘনিয়ে আসবে অন্ধকার। হবে প্রবল অগ্নুৎপাত। পৃথিবীর দুই মেরু না কী উল্টেপাল্টে যাবে। অন্য কোনও গ্রহ এসে আঘাত করবে পৃথিবীকে। আমূল বদলে যাবে কক্ষপথে পৃথিবীর অবস্থান। অবিশ্যি সব জল্পনা যে পৃথিবীর ধ্বংস নিয়ে তা নয়। কিঞ্চিৎ আশাবাদী যাঁরা আবার আস্থাও রাখেন মায়ান ক্যালেন্ডারে তাঁরা নতুন যুগের শুরুয়াত হিসাবে ২১ তারিখকে চিহ্নিত করেছেন।
নতুন মায়া ক্যালেন্ডারের সূচনার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে লাতিন আমেরিকার দেশ গুয়াতেমালা। ঐতিহাসিক ক্ষণের সাক্ষী থাকতে মায়া সভ্যতার পৌরাণিক স্থান গুয়াতেমালার তিকালে জমায়েত হয়েছেন দেশ বিদেশের পর্যটকেরা। বিপুল জমায়েত হয়েছে মায়া সভ্যতার আর এক পৌরাণিক স্থান মেক্সিকোর চিচেন ইতজাতেও।
তবে পৃথিবীর শেষদিন নিয়ে উত্কণ্ঠা আতঙ্ক চরমে। মহাপ্রলয় থেকে বাঁচতে নানারকম ব্যবসাও ফেঁদেছে বিভিন্ন সংস্থা। যেমন অস্ট্রিয় বাঙ্কার প্রস্তুতকারক সংস্থা। মাটির নীচে তৈরি তাঁদের বাঙ্কার আগামী কুড়ি বছর সুরক্ষিত থাকবে বলেই দাবি সংস্থার। অথচ তা সত্ত্বেও বাঙ্কারের ব্যবসা লাভের মুখ দেখেনি বলেই জানিয়েছেন মালিক।
সত্যিই কি আগামিকাল পৃথিবীর শেষদিন ? কালকের পর কি আর সূর্য উঠবে না পৃথিবীর আকাশে ? থমকে যাবে মানব সভ্যতার উন্নয়ন ? উল্টে পাল্টে যাবে সব হিসেব-নিকেশ? কী বলছেন বিজ্ঞানীরা? এই তত্ত্বকে কি সমর্থন করছেন তাঁরা ? ২১/১২/২০১২। কী হবে ওইদিন! সেই জল্পনায় মশগুল সারা বিশ্ব। সময় যত এগোচ্ছে চড়েছে উত্তেজনার পারদ। একেবারে শেষ মুহূর্তে এখন তুঙ্গে উঠেছে সেই আলোচনা, উত্কণ্ঠা। সত্যিই কি ধ্বংসের মুখোমুখি আমাদের প্রিয় পৃথিবী ? শেষবেলায় দাঁড়িয়ে আমরা ? বিশ্বজুড়ে জল্পনা যতই জোরালো হোক না কেন। বিজ্ঞানীরা কিন্তু মোটেও সেকথা বলছেন না।
বিজ্ঞানীদের মতে ২০১২ সাল আদৌ পৃথিবীর শেষ নয়। পৃথিবীর ধ্বংস সংক্রান্ত যুক্তিনিষ্ঠ কোনও তথ্যপ্রমাণ বিজ্ঞানীদের হাতে নেই। নিবিরু নামের গ্রহ পৃথিবীর দিকে ছুটে আসছে। এমন জল্পনা থেকেই পৃথিবী ধ্বংসের গুজবের সূত্রপাত। প্রথমে ২০০৩ মে মাসে ওই গ্রহটি পৃথিবীকে আঘাত করবে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে । প্রাচীন সুমেরিয়ান সভ্যতার বাসিন্দারা নাকি ওই গ্রহটি আবিষ্কার করেছিলেন । কিন্তু কিছুই যখন ঘটল না, তখন মায়া সভ্যতার ক্যালেন্ডারের সূত্র ধরে ২০১২, ২১ ডিসেম্বরের মহাপ্রলয়ের তত্ত্ব সামনে চলে এল।
নিবিরু নামের কোনও গ্রহ যদি পৃথিবীর দিকে সত্যিই এগিয়ে আসত, তাহলে অন্তত এক দশক আগে থেকে বিজ্ঞানীরা সেবিষয়ে জানতে পারতেন। এতদিনে সেই গ্রহকে খালি চোখে দেখাও যেত। কিন্তু তেমন কিছুই ঘটেনি। নিবিরু তত্ত্বকেও তাই ভুয়ো বলেই উড়িয়ে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। মহাপ্রলয়ের সময় পৃথিবী অন্ধকারে ডুবে যাবে বলে জল্পনা। নাসার বিজ্ঞানীরা সেই আশঙ্কাকে নস্যাৎ করে দিয়েছেন ।
গ্রহদের অবস্থান বদলের কারণে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। শোনা যায় এমন জল্পনাও। কিন্তু গ্রহদের অবস্থান বদলের কোনও সম্ভাবনা আগামী কয়েক দশকে নেই বলেই জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবীর মেরু পরিবর্তন হয়ে ধ্বংসলীলা শুরু হবে বলেও গুজব তুঙ্গে। কিন্তু সেই তত্ত্বও খারিজ করেছেন বিজ্ঞানীরা। কোটি কোটি বছরে পৃথিবীর স্থলভাগের সামান্য অবস্থান পরিবর্তনের কথা স্বীকার করেছেন বিজ্ঞানীরা। তবে মেরু পরিবর্তন অসম্ভব বলেই মনে করেন তাঁরা।
বিশালকায় কোনও উল্কা হঠাত পৃথিবীতে কি আঘাত আনতে পারে ? ৬৫০ কোটি বছর আগে তেমনই কোনও উল্কার আঘাতে পৃথিবী থেকে মুছে গিয়েছিল ডায়নোসরেরা। কিন্তু এমন কোনও আশঙ্কা নেই বলেই নাসা জানিয়েছে।
সৌর ঝড়ে কী ক্ষতি হতে পারে পৃথিবীর ? বিজ্ঞানীদের মতে সৌরঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে উপগ্রহ যোগাযোগ ব্যবস্থা। যদিও এখন সৌরঝড়ের প্রভাব থেকে উপগ্রহ যোগাযোগ ব্যবস্থাকে রক্ষা করতে বিজ্ঞানীরা অনেক বেশি দক্ষ। আর আগামী দিনে তেমন বড়সড় কোনও সৌরঝড়ের সম্ভাবনা নেই বলেও অভিমত তাঁদের। সবমিলিয়ে বিজ্ঞানীদের দাবি ২০১২ সালে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কোনও বৈজ্ঞানিক তথ্যপ্রমাণ নেই। জল্পনার পারদ তুঙ্গে ওঠার জন্য ইন্টারনেট, সিনেমা এবং বিভিন্ন ধরনের বইকেই দায়ী করেছেন বিজ্ঞানীরা।