২০১৫-তে গোটা পৃথিবীকে তোলপাড় করেছেন যাঁরা
সৌরভ পাল
আয়লান
ঠায় দাঁড়িয়েই থাকতে হবে আপনাকে। পলক পরবে না চোখে, নড়বেও না আপনার পা। সমুদ্র সৈকতে 'ঘুমিয়ে' আছে আয়লান। ছবিটা দেখেছেন? সমুদ্র সৈকতে শীতল হওয়ায় ওর পাশে কেউ নেই। মায়ের কোলের নিস্তব্ধা, নিরাপত্তা সব কিছু ছাপিয়ে আয়লান এক গোটা বিশ্বের স্তব্ধতায় ঘুমিয়ে থাকা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত। ঐ ফুটফুটে শিশুটা গোটা বিশ্বের ঘুম ভাঙিয়েছে, নিজে নিদ্রামগ্ন থেকেই। সমুদ্রের ঢেউ ওকে স্পর্শ করতে ভয় পেয়েছে। ভয় হয়েছিল সেনারও। ঘুমিয়ে থাকা আয়লানকে কোলে নিতে হাত কেঁপেছিল ওর। বন্দুক ধরতে, বুলেটে বুক ঝাঁঝরা করতেও যার ভয় হত না সে ভয় পেয়েছিল আয়লানের নিথর দেহটাকে সমুদ্র সৈকত থেকে তুলে আনতে। পৃথিবীর চোখে জল ছিল সেদিন। সমুদ্রগর্ভও কম পড়ে গিয়েছিল কোটি কোটি চোখের জলপ্রপাতকে আশ্রয় দিতে। কারণ, আয়ালান। সিরিয়ার স্মরণার্থী, একটা ছাদ আর জীবন নিয়ে সমুদ্র পার হয়ে আশ্রয়ের খোঁজে সেদিন আয়লানের সফর শুরু হয়েছিল। নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পেয়েছিল আয়লান? গোটা পৃথিবী বলেছিল, হ্যাঁ। ঈশ্বরের কোলে নিদ্রামগ্ন হয়েছে আয়ালান। ঈশ্বর কিন্তু মনে মনে বলেছিল গোটা পৃথিবী যাকে আশ্রয় দিতে পারল না, সেখানে আমার দুটো হাত 'কাফি নয়'। আয়লানকে ঘুম পারিয়ে কেঁদে ছিলেন স্বয়ং ঈশ্বর।
মালালা ও কৈলাস সত্যার্থী
'ইস্পাতের ফুল তুমি'। ইস্পাতের ফুল বললেও কম বলা হয়ে যায়। একপ্রান্তে জেহাদিদের বুলেট অন্যপ্রান্তে মালালা। ১০০ কিলোমিটার গতিতে ধেয়ে আসা বুলেটের নিশানা মালালার মাথার খুলি। একটা শিশু হামাগুড়ি দিতে গিয়ে যেমন পড়ে যায়, লুটিয়ে পরেছিল মালালাও। শিশুটা উঠে দাঁড়ায় আবার হামাগুড়ি দিতে শুরু করে, মালালাও তাই করল। বাঁচার একমাত্র ঢাল জোড়। মালালার হৃদপিণ্ড শালিকের মত নয়, বাজ পাখির কলিজা যে মানুষটার মধ্যে হৃদস্পন্দন ঘটিয়ে যাচ্ছে তাকে ঠেকায় এমন সাধ্যি কোন বুলেটের আছে? ইসলাম জেহাদের বিরুদ্ধে কলমকে সোচ্চার করল ব্লগার মালালা। রক্তস্নানের বিরুদ্ধে শান্তির পায়রা বিশ্বব্যাপী মালালার শব্দ নিয়ে উড়তে শুরু করল। 'শিক্ষার অধিকার সবার', মালালার ডাকে সারা দিয়েছে গোটা পৃথিবী। ১২ জুলাই, ১৯৯৭ সালে পাকিস্তানে জন্মগ্রহন করেছিল মালালা। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই জিতলেন নোবেল পুরস্কার।
মালালার ঝুলিতে আরও যে যে পুরস্কার রয়েছে-
Sakharov Prize
Simone de Beauvoir Prize
Honorary Canadian citizenship
National Youth Peace Prize
শিশুর মৌলিক অধিকার, শিশুর শিক্ষা-এই নিয়েই কাজ শুরু করেছিলেন কৈলাস সত্যার্থী। ২০১৫-তে মালালা ইউসুফজাইয়ের সঙ্গেই আরও যে মানুষটি নোবেল পদকে ভূষিত হয়েছেন, তাঁর নাম কৈলাস সত্যার্থী। জন্ম ভারতের মধ্যপ্রদেশ, ১১ জানুয়ারি, ১৯৫৪।
নোবেল শান্তি পদক ছাড়াও কৈলাস সত্যার্থী আরও যে যে পদকের অধিকারী-
The Aachener International Peace Prize, Germany (1994)
Robert F. Kennedy Human Rights Award (1995)
Alfonso Comin International Award (2008)
Medal of the Italian Senate (2007)
Defenders of Democracy Award (2009)
Harvard Humanitarian Award (2015)
ভ্লাদিমির পুতিন
ইনিই রাষ্ট্রপতি, ইনিই প্রধানমন্ত্রী। খবরের পাতায় শিরোনামে কেবল শাসক হিসেবেই প্রাধান্য পেয়েছেন, তেমনটা নয়। সাদা পাতায় হাজার হাজার শব্দে বর্ণিত হয়েছে পুতিনের পরকীয়াও। দাম্পত্য জীবনে বিচ্ছেদেও খবরে এসেছেন পুতিন। সম্প্রতি আইসিস হামলার বিরুদ্ধে পুতিনের ইসলাম বিরোধী বক্তব্যে তোলপাড় হয়েছে গোটা বিশ্ব। বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রধর দেশ ও রাষ্ট্রনায়কদের মধ্যেও নাম উঠে এসেছে পুতিনের। রাশিয়ার বর্তমান রাষ্ট্রনায়ক ইনিই। ২০০০ থেকে ২০০৮ সালে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি পদে ছিলেন ভ্লাদিমির পুতিন। এর আগে ১৯৯৯ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রীও ছিলেন তিনিই। ৬৩ বছরের এই রাষ্ট্রনায়ক ২০১৫-তে পৃথিবী সারা জাগানো ব্যক্তিত্বদের মধ্যে অন্যতম একজন।
শেখ হাসিনা
'চ্যাম্পিয়ন অফ দ্য আর্থ'। ২০১৫-তে UNESCO থেকে এই শিরোপা যার মাথায় উঠেছে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৫-তে বাংলাদেশের সামাজিক ও আর্থিক উন্নয়ন বিশ্বের বাকি দেশগুলোর তুলনায় সবথেকে এগিয়ে ছিল, আর যিনি তাঁর কাণ্ডারী তিনি হলেন শেখ হাসিনা, এমনটাই মনে করেছে UNESCO । পৃথিবীর জনবহুল দেশগুলির মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম একটি। তাই কাজটা খুব একটা সহজ ছিল না। এমন একটি বিশ্বসম্মানের অধিকারী যিনি, তাঁকে 'NEWSMAKER'-এর তালিকায় না রাখলেই নয়।
অ্যাঞ্জেলা মর্কেল
বর্তমান বিশ্বের সবথেকে ক্ষমতাশালী মহিলা। বিশ্বের ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মর্কেল। বয়স ৬১। বিশ্বের সন্ত্রাস হামলার মোকাবিলাতে জার্মান চ্যান্সেলরের ভূমিকা সারা বিশ্বব্যাপী সারা ফেলেছে।