লেখক অভিজিৎ রায় হত্যার নিন্দায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, প্রতিবাদী মিছিল বাংলাদেশে
বাংলাদেশের লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা ঘটনাকে তীব্র ভাষায় নিন্দা করল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তদন্তে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে মার্কিন প্রশাসনের তরফ থেকে। অন্যদিকে, এই হত্যালীলার প্রতিবাদে গতকাল ঢাকার রাজপথে শতাধিক মানুষ মিছিল করেন।
ওয়েব ডেস্ক: বাংলাদেশের লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা ঘটনাকে তীব্র ভাষায় নিন্দা করল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তদন্তে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে মার্কিন প্রশাসনের তরফ থেকে। অন্যদিকে, এই হত্যালীলার প্রতিবাদে গতকাল ঢাকার রাজপথে শতাধিক মানুষ মিছিল করেন।
বৃহস্পতিবার একুশের বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরেই খুন হন বাংলাদেশের লেখক, মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায়। গতকাল, রাত ৮টা ৪৫ নাগাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মোড়ে অভিজিৎ ও তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যার উপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় একদল অজ্ঞাত পরিচয় সন্ত্রাসবাদী। নির্মমভাবে তাঁদের কোপানো হয়। আশ্চর্যের বিষইয় চোখের সামনে এই নারকীয় হত্যালীলা ঘটতে দেখেও উপস্থিত একজনও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেননি। বরং ব্যস্ত ছিলেন মোবাইলে ছবি তোলায়।
এই হামলায় গুরুতর জখম হন দু'জনেই। দুষ্কৃতীদের অস্ত্রের আঘাতে অভিজিতের মাথা ফেটে দু'ভাগ হয়ে যায়। রাস্তার মধ্যেই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল তাঁর নিথর শরীর। রক্তে ভিজে গিয়েছিলেন বন্যাও। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ কয়েকজন পথচারী অভিজিৎ ও বন্যাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে অভিজিৎকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন বন্যা। দুষ্কৃতীদের আক্রমণে কাটা গেছে তাঁর হাতের আঙুল।
শুক্রবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে বিবৃতি জারি করে এই ঘটনাকে ভয়ঙ্কর ও নিষ্ঠুর অ্যাখা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে এ আসলে ভীরুতারই প্রদর্শন।
মার্কিন প্রশাসনের মুখপাত্র জেন সাকি বলেছেন ''এই হামলা শুধু মাত্র কোনও ব্যক্তির উপর নয়, বরং সার্বজনীন নীতি সন্নিবেশিত বাংলাদেশের সংবিধানের উপর আঘাত। এই আচরণ আসলে ভীরুতার প্রদর্শন।''
বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিবাসী অভিজিৎ ও বন্যা গত সপ্তাহেই একুশের বইমেলায় অংশগ্রহণ করবেন বলে দেশে ফিরেছিলেন। এবারের বইমেলায় তাঁর দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে।
মুক্তমনাতে বহুদিন ধরেই ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে লেখালেখি করতেন অভিজিৎ। এই ব্লগের উদ্দেশ্যই ছিল মুক্তচিন্তাধারা, মানবতাবাদ ও যুক্তিবাদের পক্ষে সওয়াল করা।
কিছুদিন আগেই সমকামিতা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছিল পেশায় বায়ো ইঞ্জিনিয়ার অভিজিতের একটি বই। সেই নিয়ে গোটা বাংলাদেশের মৌলবাদীরা রে রে করে ওঠে। দিনের পর দিন ধর্মান্ধতার বিরোধীতা করে আসছিলেন তিনি। কলমের মাধ্যমে প্রতিবাদ করে আসছিলেন বাংলাদেশ সহ সারা পৃথিবীতে বাড়েতে থাকে ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে। আর সেই কারণে মৌলবাদীদের তীব্র রোষের মুখে তাঁকে বারবার পড়তে হয়েছে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে সরাসরি তাঁকে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছে বহুবার। তাঁর ও তাঁর স্ত্রী বন্যার বিরুদ্ধে বহুদিন আগে থেকেই কুরুচিকর মন্তব্যে ভরে গেছে ধর্মীয় মৌলবাদীদের ফেসবুক ওয়াল। এমনকি এইবার দেশে ফেরার আগেও দু'জনকেই খুন করার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায় শাহবাগ পুলিস স্টেশনে একটি হত্যার মামলা রুজু করেছেন। তাঁর অভিযোগ জামাতের মদত পুষ্ট ধর্মীয় মৌলবাদীরাই খুন করেছে অভিজিতকে।