Bangladesh: মূল্যবৃদ্ধি সিগারেট ও মদের! নতুন বছরে অচিরেই বাড়ছে কর...
Bangladesh: বদলের বাংলাদেশে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আদায়ে সিগারেট, মদ, পোশাকের শো-রুম, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটের বিমান টিকিট, হোটেল, রেস্তোরাঁ ও ড্রিংক্স-সহ বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ক-ভ্যাট বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেছে বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর ফলে ওইসব পণ্য বা সেবায় গুনতে হবে বাড়তি টাকা। মূলত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পরিপালনে কিছু কিছু পণ্য ও সেবায় ভ্যাট বাড়ানো এবং যৌক্তিকীকরণ করা হচ্ছে।
সেলিম রেজা, ঢাকা: বদলের বাংলাদেশে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আদায়ে সিগারেট, মদ, পোশাকের শো-রুম, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটের বিমান টিকিট, হোটেল, রেস্তোরাঁ ও ড্রিংক্স-সহ বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ক-ভ্যাট বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেছে বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর ফলে ওইসব পণ্য বা সেবায় গুনতে হবে বাড়তি টাকা। মূলত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পরিপালনে কিছু কিছু পণ্য ও সেবায় ভ্যাট বাড়ানো এবং যৌক্তিকীকরণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর দেওয়া প্রতিবেদন পেশ করা হয়েছে, যা অনুমোদন হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সব ঠিকঠাক থাকলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির অনুমোদনে আগামী ৫ জানুয়ারি আদেশ জারি করা হতে পারে বলে বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র জি ২৪ ঘণ্টার বাংলাদেশ প্রতিনিধিকে নিশ্চিত করেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করে জি ২৪ ঘণ্টাকে বলেন, আইএমএফ-এর শর্ত পূরণে অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে ভ্যাট খাতে বড় পরিবর্তনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মূলত আইএমএফ অর্থ বিভাগকে শর্ত দিয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে। আইএমএফ-এর শর্তানুযায়ী, ভ্যাট খাতে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ বাড়তি আদায় করতে হবে। অর্থাৎ বাড়তি ১২ হাজার কোটি টাকার ভ্যাট আদায় করতে হবে। আমরা কয়েকটি খাতে ভ্যাট বাড়ানো, কোথাও হ্রাস এবং কোথাও কোথাও যৌক্তিকীকরণের পরিকল্পনা প্রস্তাব প্রতিবেদন তৈরি করেছি। অর্থ উপদেষ্টাদের বৈঠকে প্রস্তাব প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেলে ৫ জানুয়ারি আদেশ জারি হতে পারে।
আরও পড়ুন:Durgapur: ঘরের মেঝেতে রক্তগঙ্গা! দেওরের এলোপাথাড়ি বটির কোপ, লুটিয়ে পড়ল বৌদি...
তিনি বলেন, 'নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো পণ্যে বা সাধারণ মানুষের প্রভাব পড়ে এমন কোনো পণ্য বা সেবায় ভ্যাট বা সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়নি। বরং বেশ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে বাজেটের পর বেশ কয়েকবার ভ্যাট ও শুল্ক কমানো হয়েছে।' বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর প্রস্তাব অনুসারে, সিগারেট খাত থেকে সবচেয়ে বেশি বাড়তি প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা রয়েছে। কেননা সিগারেট বাংলাদেশের রাজস্ব আদায়ের সবচেয়ে বড় খাত।
চলতি অর্থবছর সিগারেটের দাম ও শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। তবে অর্থবছরের বাকি ছয়মাসে দাম ও শুল্ক আরো বাড়ানো হচ্ছে। বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বলছে, ডব্লিউএইচও’র নির্দেশনা ও রাজস্ব আদায় বাড়াতে সিগারেট খাতে দাম ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে।
বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর হিসাব অনুযায়ী, আগামী ছয়মাসে সিগারেট খাত থেকে প্রায় ৪০০০ কোটি টাকার বাড়তি রাজস্ব আদায় সম্ভব হবে। অন্যদিকে, চলতি বছর ব্যাংক খাতে আবগারি শুল্ক বাড়ানো হয়। কিন্তু বিমান টিকিটে গত কয়েক বছর ধরে আবগারি শুল্ক বাড়ানো হয়নি। ব্যাংক খাতে আর্থিক নিরাপত্তা ও বাধ্য হয়ে মানুষ টাকা রাখে। তার উপর প্রায় সব হিসাবধারীকে আবগারি শুল্ক দিতে হয়। কিন্তু বিদেশ ভ্রমণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাধ্য হয়ে নয়—কখনো কাজে, আবার কখনো ভ্রমণের জন্য যান। এসব বিবেচনায় বিমান টিকেটে আবগারি শুল্ক বাড়ানোর পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে যৌক্তিকীকরণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সে জন্য বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর প্রতিবেদনে ‘দি এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট অ্যাক্ট, ১৯৪৪’ সংশোধনী আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রতিবেদন বলছে, অভ্যন্তরীণ রুট ও সার্কভুক্ত দেশের বিমান টিকেটে ৫০০ টাকা হারে আবগারি শুল্ক দিতে হয়। এটা যৌক্তিকীকরণ করা প্রয়োজন। সেজন্য অভ্যন্তরীণ রুটে ২০০ টাকা বাড়িয়ে ৭০০ টাকা ও সার্কভুক্ত দেশে বর্তমানের দ্বিগুণ বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করা হচ্ছে। এছাড়া এশিয়ার দেশগুলোতে দুই হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে আড়াই হাজার টাকা এবং ইউরোপের দেশগুলোতে তিন হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে চার হাজার টাকা করা হচ্ছে। আবগারি শুল্ক বাড়ার ফলে টিকেটের দাম বাড়তে পারে। বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর সূত্র বলছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়াও বেশ কিছু পণ্যে অব্যাহতি রয়েছে।
বাংলাদেশের ৪২টি পণ্য ও সেবায় ভ্যাট হার ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। যেমন—হোটেল, রেস্তোরাঁ, মিষ্টান্ন ভাণ্ডার ও পোশাক ব্র্যান্ডের শো-রুমে ভ্যাট ৫ ও ৭ শতাংশ রয়েছে। আবার নন-এসি হোটেলের ভ্যাট সাড়ে সাত শতাংশ থেকে দ্বিগুণ করে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আর স্থানীয় ব্র্যান্ডের পোশাকের ওপর বর্তমানে সাড়ে সাত শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। শুধু ব্র্যান্ডেড নয়, সাধারণ মানের যে কোনো পোশাক কিনলেই ক্রেতাদের একই হারে ভ্যাট পরিশোধ করতে হতে পারে। মেডিসিন ব্যবসায়ও ভ্যাট বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। আর্টিফিশিয়াল ড্রিংকস যেমন জুস জাতীয় পণ্যের সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। এইচআর থেকে সিআর কয়েলের ক্ষেত্রে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এছাড়া, যে-সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কেনার ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ ট্রেড ভ্যাট কার্যকর আছে, সেটি সাড়ে সাত শতাংশে উন্নীত করা হচ্ছে।
শুধু স্থানীয় পণ্য নয়, আমদানি করা সাতটি পণ্যের সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে—সুপারি, সাবান, ডিটারজেন্ট, পেইন্ট, আর্টিফিশিয়াল টোব্যাকো। এছাড়া মদের বারে সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বলছে, এসব পণ্য থেকে বাড়তি প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা আদায় হবে।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)