বড় শিল্প গড়ে তোলার মতো জমি রাজ্যের ল্যান্ডব্যাঙ্কে নেই- বলছে সরকারি সূত্র
রাজ্য সরকারের জমি নীতির গেরোয় বাংলায় কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে শিল্পায়ন। নতুন বিনিয়োগের জন্য শিল্পপতিদের বারবার ল্যান্ডব্যাঙ্ক থেকে জমি নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেইমতো অর্থমন্ত্রী ছটি জেলার ল্যান্ডম্যাপ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু সরকারি সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যই বলছে, বড় শিল্প গড়ে তোলার মতো জমি রাজ্যের ল্যান্ডব্যাঙ্কে নেই।
রাজ্য সরকারের জমি নীতির গেরোয় বাংলায় কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে শিল্পায়ন। নতুন বিনিয়োগের জন্য শিল্পপতিদের বারবার ল্যান্ডব্যাঙ্ক থেকে জমি নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেইমতো অর্থমন্ত্রী ছটি জেলার ল্যান্ডম্যাপ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু সরকারি সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যই বলছে, বড় শিল্প গড়ে তোলার মতো জমি রাজ্যের ল্যান্ডব্যাঙ্কে নেই।
শুক্রবার রাজ্যের ছয় জেলায় জমি ম্যাপের ছবি প্রকাশ করেছে অর্থ দফতর।
কেউ শিল্প করতে চাইলে স্পষ্ট ধারণা পাবেন। কোথায় ট্যুরিজম হাব, কোথায় সার্ভিস সেক্টর হাব---
জমিম্যাপের কার্যকরিতা নিয়ে এমন অনেক কথাই বলেছেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু যেটা তিনি জানাননি, তা হল ওই ছয় জেলায় সরকারের হাতে কত পরিমাণ খাস জমি রয়েছে। শিল্পপতিদের বারবার ল্যান্ডব্যাঙ্ক থেকে জমি নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর সূত্রে যে তথ্য মিলেছে, তাতে সরকারের হাতে থাকা জমিতে বড় শিল্প গড়ে তোলা আদৌ সম্ভব কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
শুক্রবার হাওড়া, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলার জমিম্যাপ প্রকাশ করে অর্থদফতর। দেখে নেওয়া যাক, কলকাতার উপকণ্ঠে হাওড়া এবং দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় রাজ্য সরকারের হাতে কত পরিমাণ খাস জমি রয়েছে, সেই জমির চরিত্রই বা কী।
-----
হাওড়ায় সরকারের হাতে মোট ৭১.৪১ একর খাস জমি রয়েছে। আমতা ব্লকের পৈরাপুর মৌজায় ৭.৫৯ একর, রসপুরে ১১.৫৮ একর, মোল্লাগ্রামে ১.২১ একর এবং আমতায় ১.০১ একর জমি রয়েছে। সব জমিই রয়েছে একটি করে প্লটে।
---
শ্যামপুর দুনম্বর ব্লকের নেয়াদা মৌজায় দুটি প্লটে ১.৬২ একর জমি রয়েছে।
---
আমতা দুনম্বর ব্লকের মৈনান মৌজায় ৩.৯০ একর এবং সেনপুর মৌজায় ২.৫৫ একর জমি রয়েছে।
---
উদয়নারায়ণপুর ব্লকের চকঠাকুরাণী মৌজায় ৫.০৫ একর, বাজেপ্রতাপ মৌজায় ১.৪১ একর এবং হরিহরপুরে ১.১৮ একর জমি রয়েছে।
---
এর পাশাপাশি সাঁকরাইল ব্লকের বিভিন্ন মৌজায় ১৪ একর, বাগনান দুনম্বর ব্লকে ১২ একর এবং উলুবেড়িয়া দুনম্বর ব্লকে ৯ একর জমি রয়েছে।
---
এর বেশিরভাগ প্লটই গোচারণভূমি ও ভাগাড়।
---
এবার দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা। এই জেলায় সরকারি খাস জমির মোট পরিমাণ ৫৩৮.১৯ একর। একলপ্তে নেওয়ার মতো বড় জমি রয়েছে চকগড়িয়ায়। তার পরিমাণ ১২৮.৪৮ একর। চকগড়িয়ার খাস জমিতে রয়েছে বাস্তুভিটে, কলোনি ও হাসপাতাল। জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে।
---
কালিকাপুরে জমি রয়েছে দুটি প্লটে। ৮৯ একর এবং ২৫.৭০ একর।
---
ধাপায় ৭টি প্লটে ২১৮ একর জমি রয়েছে। একটি প্লটে রয়েছে ৪৭ একর জমি।
---
কালিকাপুর এবং ধাপার সবটাই জলাভূমি।
---
সোনারপুর ব্লকের জগতিপোতা মৌজায় ৩৩.৬৭ একর এবং করিমপুর মৌজায় ২১.২৫ একর জমি রয়েছে।
---
শিল্পায়নের জন্য ঢাক পিটিয়ে ল্যান্ডব্যাঙ্ক ও ল্যান্ডম্যাপের কথা বলছে সরকার। কিন্তু ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর সূত্রে পাওয়া তথ্য থেকে এটুকু পরিষ্কার যে, হাওড়া ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় একলপ্তে নেওয়ার মতো বড় জমিই নেই। তাই ওই দুই জেলায় সরকারি খাস জমিতে বড় শিল্প গড়ে ওঠার কোনও সম্ভাবনাও নেই। এখন প্রশ্ন, সরকারের হাতে যদি বড় পরিমাণে জমিই না থাকে, তাহলে কীসের ভরসায় বারবার শিল্পপতিদের ল্যান্ডব্যাঙ্ক থেকে জমি নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে?