দিনভর টিএমসিপির দৌরাত্ম্যে নাকাল ট্রেনযাত্রীরা, নির্বিকার রেল কর্তৃপক্ষ

আগামী ২৮ অগাস্ট তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনু্ষ্ঠান। সেই উপলক্ষেই সমাবেশে যোগ দিতে আসা তৃণমূলকর্মীদের দৌরাত্ম্যের শিকার হলেন ট্রেনযাত্রীরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেওয়া ব্যাজ পরে দিনভর দৌরাত্ম্য চালাল তারা। যাত্রীদের প্রতি চরম অমানবিক আচরণ করা সত্ত্বেও নীরব রেল কর্তৃপক্ষ।

Updated By: Aug 27, 2012, 10:17 AM IST

আগামী ২৮ অগাস্ট তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনু্ষ্ঠান। সেই উপলক্ষেই সমাবেশে যোগ দিতে আসা তৃণমূলকর্মীদের দৌরাত্ম্যের শিকার হলেন ট্রেনযাত্রীরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেওয়া ব্যাজ পরে দিনভর দৌরাত্ম্য চালাল তারা। যাত্রীদের প্রতি চরম অমানবিক আচরণ করা সত্ত্বেও নীরব রেল কর্তৃপক্ষ। এমনকী, অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও গ্রেফতার করা হল না কাউকে।
আসন নিয়ে বচসার জেরে এদিন ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়া হল এক যুবককে। ঘটনাটি ঘটেছে ইসলামপুরের আলোয়াবাড়ি স্টেশনে। ২৮ অগাস্ট তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনু্ষ্ঠানে যোগ দিতে আসা তৃণমূলকর্মীরাই ওই যুবককে ধাক্কা দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। যাত্রী বিক্ষোভের জেরে রেল কর্তৃপক্ষ আহত যুবকের চিকিত্সার দায়িত্ব নিলেও এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।  কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসের এস-৬ কামরার সতের এবং কুড়ি নম্বর আসনটি আলোয়াবাড়ি স্টেশন থেকে সংরক্ষিত ছিল গুড়িয়া খাতুন এবং সরফারোজ আলমের নামে। আলোয়াবাড়িতে ট্রেনে উঠে সংরক্ষিত আসনে বসতে গিয়ে তাঁরা দেখেন, ওই আসনে বসে রয়েছেন অন্য কয়েকজন। নিজেদের তৃণমূলকর্মী বলে পরিচয় দিয়ে আসন ছাড়তে অস্বীকার করেন ওই যাত্রীরা। এই ঘটনাকে গিরেই বচসা বাধে। গর্ভবতী গুড়িয়া খাতুনকে সামলাতে ট্রেনে উঠে পড়েন তাঁর ভাই তালেব হুসেন। ট্রেন ছেড়ে দিলেও বচসা থামেনি। স্টেশন থেকে ট্রেন কিছুটা এগোতেই ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে তালেব হুসেনকে ফেলে দেয় ওই যাত্রীরা। ঘটনার পরই স্টেশন চত্বরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে উত্তেজিত জনতা। বৈধ টিকিট থাকা সত্বেও কেন তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা ওই দুই যাত্রীর ট্রেনযাত্রায় বাধা দিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বিক্ষোভ সামাল দিতে আহত যুবকের চিকিত্সার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। ইসলামপুর হাসপাতালে আহত যুবককে নিয়ে আসা হলে, চিকিত্সকেরা তাঁকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
তালেব হুসেনের মতোই হেনস্থার শিকার হয়েছেন আরও ২৩ জন পর্যটক। শিয়ালদহগামী তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেসে তাঁদের সংরক্ষিত সিট তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যরা দখল করে নেন বলে অভিযোগ। টিকিট পরীক্ষক, রেল পুলিস বা স্টেশন মাস্টার, কাউকে জানিয়েও কোনও ফল হয়নি। শেষপর্যন্ত এনজিপি স্টেশনে ট্রেন ছেড়ে দিতে বাধ্য হন পর্যটকরা। অভিযোগ জানাতে গিয়েও চরম হেনস্থার শিকার হন তাঁরা। যদিও রেল কর্তৃপক্ষের তরফে এবিষয়ে এখনও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আজ সকালেই তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেসে শিয়ালদায় এসে পৌঁছন হয়রানির শিকার হওয়া যাত্রীরা।  গতকালের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন তারা। যাত্রীদের অভিযোগ রেল কর্তৃপক্ষকে এবিষয়ে  অভিযোগ জানানোর পরেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।  
আঠাশে অগাস্ট তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রবিবার উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন স্টেশনে তৃণমূলকর্মীরা ট্রেনে উঠে পড়েন বলে অভিযোগ। মমতা ব্যানার্জির ছবি দেওয়া তৃণমূল কংগ্রেসের ব্যাজ পরেছিলেন তাঁরা। অভিযোগ তৃণমূল কংগ্রেসের ঝাণ্ডা লাগিয়ে গোটা ট্রেনই প্রায় দখল করে নেন ওই তৃণমূলকর্মীরা। মালদহ স্টেশনে কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস পৌঁছলেও অভিযুক্ত যাত্রীদের গ্রেফতার করা হয়নি। জিআরপির তরফে জানানো হয়েছে, তাঁদের কাছে এ ঘটনার কোনও তথ্যই নেই। স্বাভাবিকভাবেই রেলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সংরক্ষিত কামরায় সংরক্ষণ করার পরেও এভাবে যদি বহিরাগতরা জবরদখল করেন। রীতিমতো ঝাণ্ডা লাগিয়ে কামরায় জবরদখল চালানোর পরও যদি রেল কর্তৃপক্ষ এত নির্বিকার হয়। তাহলে কতটা সুরক্ষিত যাত্রীরা।

.