ওই চিঠিগুলোর কী হল...
মোবাইল, কুরিয়র আসার পর থেকে চিঠিকে আমরা মাটিতে পুঁতে ফেলেছি। মন-মগজ এখন অনেক বেশি 'টেক্সট' নির্ভর। একটা সময় চিঠি অক্ষরের পোশাক পরে মনের ভাব, অনুভূতি প্রকাশ করে দিত। পরে আমরা ভাবলাম, এই একই কাজ এসএমএস, হোয়াটসঅ্যাপ করে দেবে। কিন্তু সেটা হল না।
একটা সময় চিঠি অক্ষরের পোশাক পরে মনের ভাব, অনুভূতি প্রকাশ করে দিত। পরে আমরা ভাবলাম, এই একই কাজ এসএমএস, হোয়াটসঅ্যাপ করে দেবে। কিন্তু সেটা হল না।
চিঠি, বিলুপ্ত হওয়া একটা দারুন অনুভূতির নাম। চিঠি, পোস্টকার্ডে এত বেশি পরিমানে জীবনের রঙ পোরা থাকত যে ওগুলো মনে করা মানে এখন সুখস্মৃতি আওড়ানোর মতো অনুভূতি হয়। চিঠি, একটা অনুভূতির নাম।
আরও পড়ুন- পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নামার আগে এশিয়া কাপের সূচি-বিভ্রাটে সমস্যায় ভারত
কথায় বলে, প্রকৃতিতে সব কিছুর বিকল্প তৈরি। একটা জিনিসের অভাব ঢাকতে আরেকটা জিনিস নিশ্চয়ই হাওয়ায় ভাসছে। কিন্তু চিঠির বিকল্প এসেছে কি? আপনারা কেউ পেয়েছেন নাকি? আমি তো পাইনি। এক শহর থেকে আরেক শহরে ছোটার ফাঁকে, জীবনের বর্ষা বা রোদের মাঝে, চিঠি কখনও ছাতা হয়ে দাঁড়িয়েছে, কখনও রেনকোট হয়ে শরীর ঢেকেছে।
মোবাইল, কুরিয়র আসার পর থেকে চিঠিকে আমরা মাটিতে পুঁতে ফেলেছি। মন-মগজ এখন অনেক বেশি 'টেক্সট' নির্ভর। একটা সময় চিঠি অক্ষরের পোশাক পরে মনের ভাব, অনুভূতি প্রকাশ করে দিত। পরে আমরা ভাবলাম, এই একই কাজ এসএমএস, হোয়াটসঅ্যাপ করে দেবে। কিন্তু সেটা হল না। প্রেমের বদলে এদের থেকে রাগ অনেক বেশি প্রকাশ পাচ্ছে।
আরও পড়ুন- ভারত-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট ম্যাচে স্পট ফিক্সিং, নাম জড়াল ম্যাক্সওয়েলের
ডিয়ার জিন্দেগি পড়া বন্ধুদের কাছেও চিঠি নিয়ে নিশ্চয়ই অনেক স্মৃতি রয়েছে। একটু পিছিয়ে গিয়ে দেখুন। ভাবুন তো, সেই সময় একটা চিঠি লিখতে যে সময়টা ব্যয় করতেন সেটা কি আসলে নিজেকে দেওয়া সময় ছিল না? মনের গভীরে ডুব দিয়ে সেখান থেকে অনুভূতির আমদানি করা। তার পর সেই অনুভূতিগুলোকে শব্দের বাঁধনে বেঁধে প্রকাশ করা। পুরো কাজটা আমাদের মনুষ্যত্বের বিকাশে সহায়তা করত অনেকটা।
ভালই হত, যদি আমরা চিঠি লিখতে থাকতাম। সম্মতি-অসম্মতির চিঠি। প্রেমে পড়া-প্রেম ভাঙার চিঠি। একে অপরকে জানার জন্য সেলফির থেকে অনেক বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে উঠতে পারত সেইসব চিঠি। যাতে কিনা জীবনের গাঢ় রঙ মাখানো থাকত।
আরও পড়ুন- ঘরে রাখলে গণপিটুনির ভয়, উপহারের গরু ফেরালেন আজম খানের স্ত্রী
আমরা একে অপরকে লিখতাম। একে অপরকে পড়তাম। তা হলে হয়তো কোথাও গিয়ে আমাদের ভিতরের একাকিত্ব এতটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারত না। সংযোগের ক্ষেত্রে চিঠি একটা ব্যালান্স তৈরি করত। সেটা কোনও অ্যাপ পারবে না। মোবাইল তো আমাদের অধৈর্য্য করে তুলেছে। আমাদের মধ্যে এখন অপেক্ষা বলে কোনও জিনিস আর নেই। উল্টোদিকে, চিঠি আমাদের মিলন ও অপেক্ষার মাঝে রেখে ধৈর্য্যের পাঠ পড়াত।
এই কিছুদিন আগে একটা মেসেজ খুব ভাইরাল হয়েছিল। অমুক একজনের ফেসবুকে কয়েকশো বন্ধু রয়েছে। কিন্তু সেই ব্যক্তি যখন হাসপাতালে ভর্তি হলেন তখন তাঁর পাশে মা-বাবা, ভাই-বোন ছাড়া কেউ ছিল না। সেই মা-বাবার সঙ্গে তাঁর দেখা করার সময় ছিল না। কারণ, তিনি সোশ্যাল সাইট নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। একটু পিছিয়ে যান। সেই সময় কিন্তু এমন ছিল না। একটা সময় চিঠি লেখা শুধুমাত্র প্রয়োজনের তাগিদ ছিল না। চিঠি ছিল নিজেকে দেখার একটা আয়না। চিঠি ছিল মনকে পরিষ্কার রাখার একটা আধার। চিঠির মৃত্যুর সঙ্গ সঙ্গে সমাজ, পরিবারে একটা অসীম শূন্যতা তৈরি হয়েছে যেন।
আরও পড়ুন- বিজেপি বিধায়কের কার্যালয়ে হামলা, ২ বছরের কারাদণ্ড হার্দিক পটেলের
মন আর মগজের উপর যে ধূলো জন্মেছে সেটা দূর করতে চিঠি লিখতে পারেন। ছোট ছোট অনুভূতিতে ঠাঁসা চিঠি। এতে দেখবেন একে অপরের মনটাকে দেখতে পাচ্ছেন। অবচেতন মনে কখনও কখনও নিজেকেই পড়ে ফেলবেন এই সুবাদে। পারলে আজ থেকেই শুরু করুন চিঠি লেখা। কাউকে না পেলে ডিয়ার জিন্দেগিকে চিঠি লিখেই না হয় শুরু করতে পারেন।
লেখক- জি নিউজের ডিজিটাল এডিটর।
(https://twitter.com/dayashankarmi)
(আপনাদের প্রশ্ন ও মন্তব্য ইনবক্সে পাঠান- https://www.facebook.com/dayashankar.mishra.54)
অনুবাদ- সুমন মজুমদার, জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল।