রবীন্দ্রসুরে 'অ-সুরের' জোয়ার

আমাদের বাঙালীজাতির সবথেকে গর্বের কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এবার ২৫শে বৈশাখে তাঁর জন্মের সার্ধশতবর্ষ উদ্‍যাপিত হল। জোড়াসাঁকোর প্রভাতি অনুষ্ঠান থেকে সরকারী উদ্যোগে কবিপ্রণাম। পাশাপাশি অন্যান্য গণমাধ্যমগুলিতেও নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রবীন্দ্রস্মরণ।

Updated By: May 31, 2012, 11:11 AM IST

আমাদের বাঙালীজাতির সবথেকে গর্বের কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এবার ২৫শে বৈশাখে তাঁর জন্মের সার্ধশতবর্ষ উদ্‍যাপিত হল। জোড়াসাঁকোর প্রভাতি অনুষ্ঠান থেকে সরকারী উদ্যোগে কবিপ্রণাম। পাশাপাশি অন্যান্য গণমাধ্যমগুলিতেও নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রবীন্দ্রস্মরণ।

কপিরাইট বস্তুটি রবীন্দ্রনাথের গানের উপর আর লাগু হয় না। বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে এখন পরিবেশন করা হয় রবীন্দ্রসংগীত। যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বেশ মনোগ্রাহী। কবিগুরু নিজে থাকলে হয়তো তিনিও এই বিষয়টিতে নানারকম পরীক্ষা নিরীক্ষা করতেন, কারণ তাঁর মতো আধুনিক চিন্তাভাবনার মানুষ আজও বিরল। তবে ইদানিং রবীন্দ্রসংগীতের সুর পাল্টে ফেলে নিজের পছন্দমত সুর বসিয়ে সংগীত পরিবেশনের একটা ট্রেন্ড হয়েছে!! এবং এইকারণে কিছু ক্ষেত্রে গানের তালেরও পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। বেশকিছু নবীন শিল্পীদের মধ্যেই নিজস্ব সুরারোপিত রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে. যা গানটিকেই সম্পূর্ণভাবে বিকৃত করে। রবীন্দ্রসংগীত, রবীন্দ্রনাথ এই বিষয়ের ওপর যে তাদের বিন্দুমাত্র পড়াশোনা নেই তা তাদের পরিবেশনের ধরণেই স্পষ্ট। তবে লক্ষণীয়, বেশকিছু মানুষ এই বিষয়টিকে বেশ উত্সাহ দিয়ে প্রোমোট করে চলেছেন। এখনকার মিডিয়ার রমরমার যুগে এই প্রোমোট কথাটির ওজন যে এনেক বেশি, সেই বিষয়ে সেই পরিমাপ পরিমিতি বোধটা কোথাও হারিয়ে যাচ্ছে।

যে কোনও বিকৃত বস্তুই খুব ক্ষণস্থায়ী। মরীচিকার মতো। এই বিষয়টিকে মাথায় রেখে রবীন্দ্রলাথের রচিত স্মরলিপি অনুযায়ী সংগীত পরিবেশন করাই হয়তো শ্রেয়। রবীন্দ্রসংগীতে ক্ষেত্রে কী কী বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হবে তার কোথাও কোনও নির্দেশ রবীন্দ্রনাথ দিয়ে যাননি। তবে তাঁর গেনার সুর কেমন হবে, সেটা স্বরলিপির মাধ্যমেই ঠিক করে দিয়ে গেছেন। সুতরাং বাদ্যযন্ত্র দিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করা যেতেই পারে। তবে তাঁর গানের সুর নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করার সাহস না দেখানোই ভাল। আমাদের কারোরই হয়তো রবীন্দ্রনাথ নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করার অধিকার নেই। তাঁর ব্যপ্তি যে ভুবনজোড়া।

দেবব্রত বিশ্বাস, পীযুষকান্তি সরকার, সুচিত্রা মিত্র, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে ইদানিংকালের ইন্দ্রানী সেন, শ্রাবনী সেন, শ্রীকান্ত আচার্য্য। এঁদের কেউই তাঁদের 'নিজস্ব সুরারোপিত' রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেননি বা করেন না। এবং জনপ্রিয়তার ক্ষেত্রেও এঁরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্থানে সুপ্রতিষ্ঠিত। অতএব, রবীন্দ্রনাথ পড়ে, রবীন্দ্রসংগীতে যাঁরা পথপ্রদর্শক রয়েছেন তাঁদেরকে দেখেই যেন পরবর্তী প্রজন্মের নবীন শিল্পীরা এগিয়ে যান। শুধু বেলফুল মালা দিয়ে রবীন্দ্রনাথকে পুজো করলেই হবে না, অন্তর থেকে তাঁর সৃষ্টিকে উপলব্ধি করতে পারলেই হয়তো শিল্পীর যথার্থতা বজায় থাকবে।

কোয়েল পাল

Tags:
.