নাম্বার ওয়ানের যোগ্য দাবিদার

বলিউড যখন কোটি টাকার গেম খেলছে মহা সমস্যায় পড়েছে স্বল্প বাজেটের ছবি। প্রাণপাত করে ছবি বানিয়েও হলই পায় না এই ছবিগুলো। টেবিল নাম্বার টোয়েন্টি ওয়ান-কে সেই অর্থে মাঝারি বাজেটের ছবিই বলা যায়। ফিজিতে হয়েছে গোটা ছবির শুটিং। ভাগ্য ভাল, বছরের এমন সময়ে মুক্তি পেয়েছে এই ছবি যখন বিগ বাজেট ছবির দাপট নেই। মাল্টিপ্লেক্সে অনেকগুলো শো পেয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই।

Updated By: Jan 6, 2013, 04:51 PM IST

শর্মিলা মাইতি
টেবিল নাম্বার টোয়েন্টি ওয়ান
রেটিং- ***1/2

বলিউড যখন কোটি টাকার গেম খেলছে মহা সমস্যায় পড়েছে স্বল্প বাজেটের ছবি। প্রাণপাত করে ছবি বানিয়েও হলই পায় না এই ছবিগুলো। টেবিল নাম্বার টোয়েন্টি ওয়ান-কে সেই অর্থে মাঝারি বাজেটের ছবিই বলা যায়। ফিজিতে হয়েছে গোটা ছবির শুটিং। ভাগ্য ভাল, বছরের এমন সময়ে মুক্তি পেয়েছে এই ছবি যখন বিগ বাজেট ছবির দাপট নেই। মাল্টিপ্লেক্সে অনেকগুলো শো পেয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। রাজীব খান্ডেলওয়াল ও নবাগতা সুন্দরী প্রতিযোগিতা বিজয়িনী টিনা দেশাই অভিনীত এই ছবি ঠিক সময়ে ভালই প্রচার পেয়েছে বলা যায়। গল্পে ফিজিতে বিয়ের অ্যানিভার্সারি পালন করতে গিয়েছেন তাঁরা। এক বিলাসবহুল রিসর্টে।

বছরের শুরুতেই টানটান উত্তেজক ছবি পেলে যেমন দর্শক-সমালোচক নড়েচড়ে বসে, এ ছবি দেখে ঠিক তেমন অনুভূতি হল। অনেকদিন পরে একটা সাসপেন্স থ্রিলার পাওয়া গেল, যা ছবি শুরুর দেড় মিনিটের মাথায় সাসপেন্সের আবহ তৈরি করে দেয়। তড়িৎগতিতে এগোয় গল্প। সংবিধান অনুসারে আর্টিকল নাম্বার টোয়েন্টি ওয়ান এ বলা হয়েছে রাইট টু লিভ। যার অর্থ বাঁচার অধিকার। ছবির শুরুতেই ঘোষণা করে দিলেন পরিচালক আদিত্য দত্ত। কিন্তু সবাইকে ছবির শুরুতেই একটা শক দিলেন। খেলা শুরু হল, মিথ্যের শাস্তি মৃত্যু। সত্যের পর সত্য বলে যেতে পারলেই একুশ কোটি টাকা পুরস্কার। উল্টোনো পিরামিডের ওপর দাঁড়িয়ে ছবির গল্প। যতই পরের ধাপে যাওয়া যায় ততই কঠিন হতে থাকে গেমের নিয়ম আর সেই সঙ্গে খুলে যেতে থাকে সব গোপন তথ্য। বাড়তে থাকে পরিধি। সারা জীবনেও কাছের মানুষটির কাছ থেকে যা জানা যায় না, সেগুলোও টেনে বের করে আনে, এমনই শক্তি এই গেম শো-এর। বাইরের সৌন্দর্যের অন্দরে তিক্ততা। জীবদ্দশাতেই সব কিছু দিয়ে যেতে হয়। হিসেব হয়ে যায় অপরাধের সঙ্গে অপরাধবোধের।

আজব খেলা। কিন্তু বলুন দেখি, টেলিভিশন থেকে ইন্টারনেট, সর্বত্র চলছে গেম শো। উড়ছে টাকা। লাইফ ইজ আ গেম। বড় মাছ হওয়ার চেষ্টা আর ইঁদুর দৌড়। হেরে গেলে যেন জীবন থেকেই বেরিয়ে যাওয়া। খেলছেন নায়ক নায়িকা। বাহবা রাজীবকে। প্রথম ছবি আমির থেকেই চিনিয়েছিলেন তাঁর অভিনয়ের জাত। মাঝে কয়েকটা ছবি বিস্মৃতির অতলে, কিন্তু এ ছবিতে হ্যাংওভার কাটিয়ে দুরন্ত কামব্যাক। বলিউডের আর পাঁচটা নায়কের থেকে আলাদা চেহারা। সুন্দর অথচ দৃঢপ্রতিজ্ঞ মুখ। সাবলীল অভিনয়ে কোনও অত্যুক্তি নেই। নিঃসন্দেহে কমার্শিয়াল ও প্যারালাল, দু`ধরনের ছবিতেই ডিম্যান্ড আছে এ ধরনের নায়কের। সত্যি বলতে কী, প্রত্যাশাটা একটু বেশিই উসকে দিলেন রাজীব। নায়িকা টিনা দেশাই-ও নবাগতা হিসেবে নজর কাড়লেন। ছিপছিপে মেদহীন চেহারা। আদর্শ বিকিনি বেব তো বটেই, খানিক ঘষামাজা করলে অচিরে নাম্বার গেমে নায়িকাদের পেছনে ফেলে দেবেন। তুখড় অভিনয় অবশ্যই টানটান গল্পকে আলাদা অনুভূতির জগতে নিয়ে যায়। দর্শককেও হাতছানি দিয়ে ডাকে।

ওয়েবসাইটে গেমের লাইভ শো দেখান পরেশ রাওয়াল। তিনি রিসর্টের মালিক। পুরোদস্তুর `ইন্টারেস্টিং` চরিত্র। না-কমিক, না ট্র্যাজিক। কিছুটা লার্জার দ্যান লাইফ। আপাতদৃষ্টিতে ভিলেন। পেঁয়াজের খোসার মতো যখন খুলতে থাকে গেম শো-এর ধাপগুলো, তখনই বেরিয়ে আসে এক পুত্রশোকগ্রস্ত বাবা। এর বেশি খোলসা করে বলছি না। রিভিউ আসলে গল্প বলার জায়গা নয় তো! বিশেষ প্রশংসা না করেও বলা যায়, ঠিকমতো মাউথ পাবলিসিটি হলে এধরনের ছবিও সুপারহিট হওয়ার দাবি রাখে!
মাত্র ১০৮ মিনিট। যেন অদৃশ্য দড়ির টানে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে। পলক পড়ে না। এমনকি ইন্টারভ্যালের সাময়িক বিরতিও দর্শকের চোখেমুখে বিরক্তি আনছে। সফল চিত্রনাট্য। দারুণ ক্যামেরার কাজ। তবে শেষ দিকে অবশ্য সাসপেন্সের চেয়েও বেশি তীব্র হয় একটা মেসেজ। র‌্যাগিং এর বিরুদ্ধে। ক্লাইম্যাক্সে একটু নাটকীয়তার ছোঁয়া। তবু জনস্বার্থে এটা মেনে নেওয়াই যায়। মেনে নেওয়া যায় কথাটা ভুল বললাম। স্টোরিলাইনের ঠাসবুনন এমনই অসামান্য যে, শেষ দৃশ্যের জন্য একটা মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই ফেলেন দর্শক। স্ক্রিনে ভেসে ওঠে সারা বছরের র‍্যাগিং-এর খতিয়ান। দর্শক উঠে দাঁড়ায়। তুষ্ট, কিন্তু অবক্ষয়ী সমাজ দেখে অবসাদগ্রস্ত। ভুলে যায় হাততালি দিতে। অনবরত চলতে থাকা গেম শো-গুলোও কি তবে র‍্যাগিং-এর সমার্থক?

.