Hemanta Mukhopadhyay: হেমন্তের সঙ্গে উত্তমের বিবাদ ঘটেছিল; কেন দূরত্ব তৈরি হয়েছিল দু'জনের?

'হারানো সুর' (১৯৫৭) ছবিতে হেমন্তের 'রমা' ডাকটা অবিকল যেন উত্তমেরই ডাক! সেই রোম্যান্স মাখানো মন্দ্র স্বর।

Updated By: Jun 16, 2022, 12:41 AM IST
Hemanta Mukhopadhyay: হেমন্তের সঙ্গে উত্তমের বিবাদ ঘটেছিল; কেন দূরত্ব তৈরি হয়েছিল দু'জনের?

সৌমিত্র সেন: একটা যদি হয় শরীর, অন্যটা তবে আত্মা। অন্তত বাংলা ছবির দর্শকের একটা বড় অংশের তেমনই মত। উত্তম যদি শরীর হন, তবে হেমন্ত সেই শরীরের আত্মা।

আসলে গানের দৃশ্যগুলিতে পর্দায় উত্তম আর পর্দার পিছনে (প্লেব্যাকে) হেমন্তের দ্বৈত উপস্থিতি দর্শক-শ্রোতার মনে এক অখণ্ড অদ্বৈত অনুভূতিতে ধরা দিত। তাঁরা মনে করতেন, বা বিশ্বাস করতে ভালোবাসতেন, উত্তম লোকটা যদি গান তবে তিনি হেমন্তের মতোই গাইবেন! আর হেমন্ত লোকটা যদি কথা বলেন তবে উত্তমের মতোই বলবেন। এ ভাবনাটা খুব মিথ্যেও তো নয়। 'হারানো সুর' (১৯৫৭) ছবিতে হেমন্তের 'রমা' ডাকটা অবিকল যেন উত্তমেরই ডাক! সেই রোম্যান্স মাখানো মন্দ্র স্বর।

বাংলা ছবির ইতিহাস বলছে, উত্তমকুমার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের প্রথম যৌথকাজ 'শাপমোচন' (১৯৫৫)। এর বেশ কয়েকবছর আগেই 'সহযাত্রী' ছবিতে দু'জনে একসঙ্গে কাজ করেছিলেন বলে সিনেমা তথ্যবিদেরা বলে থাকেন। তবে সে ছবির কোনও প্রভাব গণমনে সেভাবে পড়েনি। 'শাপমোচন' ছবির উত্তম-অভিনয়ের সঙ্গে হেমন্ত-গানের আশ্চর্য সম্মিলনসুধাসাগরে নিজেদের সম্পূর্ণ আত্মবিসর্জন দিয়েছিলেন বাংলা ছবির দর্শক। 'সুরের আকাশে তুমি যে গো শুকতারা' বা 'ঝড় উঠেছে বাউল বাতাস'-এর মতো গানে হেমন্ত-উত্তমের দ্বৈতশিল্পে প্রায় চিরতরে মজে গেল বাঙালি। তারপর ছবির পর ছবিতে এই জুটির নানা সিদ্ধি, মন-মাতানো ম্যাজিকের মৌতাত।

উত্তম-হেমন্ত জুটি ক্রমে বাংলাছবির পক্ষে একেবারে মণিকাঞ্চন যোগ হয়ে দাঁড়াল। যে কোনও ইন্ডাস্ট্রিতেই এমন যোগ খুব বেশি হয় না। ফলে এমন একটা অতুলনীয় জুটি নিয়ে বাংলা ছবির গৌরববোধও ছিল যথেষ্ট। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দুই স্রষ্টার মনেও কি কোনও বিরল তৃপ্তিবোধ ছিল না? বা ছিল না কোনও সুদূরলালিত কমপ্লেক্স? 

না থাকাটাই অস্বাভাবিক। এবং কিছুটা যে ছিলই, তার প্রমাণ মেলে পরবর্তী কালে উত্তম-হেমন্ত জুটির মধ্যে পরতে পরতে মেঘ জমতে শুরু করায়। 

কেন মেঘ?

নানা রকম মতই উঠে এসেছে। নানা ঘটনা শোনা গিয়েছে। কোনটা সত্য, কোনটা নিছক রটনা-- কেউ সেসব গবেষণা করে স্থির করে দেননি পরবর্তী কালে। ফলে বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই গেছে। 

তবু যেসব বিতর্ক শোনা যায়, সেগুলি এরকম। 'বিশ সাল বাদ' হিট হওয়ার পরে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় নাকি উত্তমকুমারকে নায়ক করে বম্বেতে ছবি করতে চেয়েছিলেন। উত্তমের সঙ্গে তাঁর এ নিয়ে কথাও অনেকদূর গড়িয়েছিল। কিন্তু শেষমেশ কোনও অজ্ঞাত কারণে উত্তম পিছিয়ে গিয়েছিলেন। তাতে হেমন্ত খুবই মর্মাহত হয়েছিলেন, উত্তমের উপর ক্ষুণ্ণও হয়েছিলেন। আর তা নিয়ে উত্তমের সঙ্গে তাঁর  কিঞ্চিৎ দূরত্বও তৈরি হয়ে বলে শোনা গিয়েছিল। সময়টা ১৯৬২ সালের আশেপাশে।

বিবাদের অন্যতর কারণও শোনা যায়। বলা হয়, উত্তম গৌরীর বিবাহবার্ষিকীর আসরে হেমন্তকে নিয়ে একটা বড়সড় অসন্তোষ তৈরি হয়। হেমন্ত নাকি গৌরীদেবীকে বিদ্রূপের ছলে এমন কিছু কথা বলেন যা উত্তমের কাছে অপমানজনক বলে মনে হয়েছিল।

আবার এমনও শোনা যায়, কিছু বছর পরে অভিনেত্রী মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়কে কেন্দ্র করে উত্তম-হেমন্ত সম্পর্কে নতুন করে চিড় ধরে। হেমন্ত এবং উত্তম দুজনেই নাকি নিজের নিজের পুত্রের সঙ্গে মৌসুমীর বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। পরে মৌসুমীর সঙ্গে বিয়ে হয় হেমন্তপুত্রেরই। উত্তমের পক্ষে এটা মেনে নেওয়া নাকি সহজ হয়নি। সেটা অবশ্য ছিল ১৯৭২ সাল।

ভিন্ন ধাঁচের একটা কারণও রয়েছে। ষাটের দশকের মাঝামাঝি কোনও সময়ে একটু আলগা ভাবে বাতাসে এটা ভেসে বেড়াত। শোনা যায়, হেমন্ত নাকি নিজের পরিসরে কখনও বলেছিলেন, উত্তমের জনপ্রিয়তার পিছনে তাঁর কণ্ঠের ব্যাপক অবদান রয়েছে। মন্তব্যটা তর্কাতীত না হলেও তর্কযোগ্য তো বটেই। এবং এ কথা হয়তো মিথ্যেও নয়, ছবির পর্দায় চলনে-বলনে সংলাপে-গানে উত্তমের যে-ইমেজ তৈরি হয়ে উঠেছিল তাতে হেমন্ত-কণ্ঠের নেপথ্য অবদান একটা ছিলই। তবে, তা আবার এতটাও অমোঘ নয় যে, সেটা সরিয়ে নিলে উত্তমকে নেহাতই অনাথ দেখাবে। শোনা যায়, দেওয়ালের কান বেয়ে বেয়ে হেমন্তের উক্ত মন্তব্য নাকি উত্তমের কানেও পৌঁছেছিল। আর কানে যাওয়া মাত্রই তিনি নাকি মনে মনে ঠিক করে নিয়েছিলেন, এবার তিনি অন্য গায়কদের সঙ্গে কাজ করে নিজেকে প্রমাণ করবেন। এর কোনও তথ্যপ্রমাণ মেলে না। তবে দুই মহা তারকার দূরত্ব যে বেড়েছিল তা নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই।

প্রায় এক দশকের এই দূরত্ব ঘুচেছিল 'সোনার খাঁচা' (১৯৭৩) ছবিতে। পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় বীরেশ্বর সরকারের সুরে 'কে জানে ক ঘণ্টা' গানটি গেয়েছিলেন হেমন্ত, এ গানে 'লিপ' দিয়েছিলেন উত্তম। শোনা যায়, দু'জনের বরফ গলিয়েছিলেন পুলক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ই।   

আরও পড়ুন- Paran Bandopadhyay: 'যতদিন বাঁচব রায় বাড়ির ঘরে আমার স্থায়ী ঠাঁই',পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়

আরও পড়ুন- Exclusive: 'মা তাপসের জন্য খাবার সরিয়ে রাখতেন', চন্দননগরে গিয়ে স্মৃতিমেদুর প্রসেনজিৎ

(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)

.