মুশকিল-এ অ্যায় দিল
পূজা বাসু দত্ত
দিল পে পথ্থর রাখকে ম্যায়নে মেক আপ করলিয়া, মেরে সাইয়াজি সে আজ ম্যায়নে ব্রেক আপ করলিয়া- মুক্তির আগেই ইউটিউবে অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিলের এই গান পপুলার হয়েছে। লাইকের বহর দেখে সেটা জানা গেছে। গানটা পরিচালকেরও পছন্দের। অন্তত তাঁর মনের কথা তো এটাই। কারণ, ফাওয়াদকে ছবি থেকে বাদ দিতে হয়নি বটে, কিন্তু ছবির প্রচার থেকে তো বাদ দিতেই হয়েছে। এমনকি পরবর্তী কোন ছবিতে তাঁকে আবার দেখা যাবে, সেটা বলা খুব মুশকিল।
রণবীর ঐশ্বর্যের মাখোমাখো দৃশ্য নিয়ে চাঞ্চল্যকে একেবারে পেছনে ফেলে ছবির লাইমলাইট পুরোটাই নিলেন রাজ ঠাকরে। কিছুটা হলে তিনিই এই ছবির হিরো-ভিলেন সব। হোয়াট্স অ্যাপে একটা জোক খুব ছড়াচ্ছে। অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিলে সব থেকে বেশি চার্জ করলেন রাজ ঠাকরে। বলিউডি দুনিয়ায় এখন তারই রাজ। অন্তত দেশ প্রম নিয়ে যে খেলাটা খেললেন তিনি, আর মানল তামাম বলিউড।
করণ জোহর। ব্র্যান্ডেড পরিচালক, প্রযোজক। মূলত, তাঁর ছবিতে গদগদ প্রেম আর বিদেশের দৃশ্য দেখার একটা বড় সুযোগ থাকে। এহেন ব্র্যান্ডেড ম্যান কিনা এককথায় স্বীকার করলেন রাজের হুমকি। সঙ্গে অবশ্যেই মুকেশ ভাট, ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন প্রডিউসার গিল্ডের প্রেসিডেন্ট। ছবিতে পাকিস্তানি ফাওয়াদের উপস্থিতিতে তেলে বেগুনে জ্বলে, ছবি মুক্তি রোখার চেষ্টা করে এমএনএস। তার বিরুদ্ধে কেন এত নমনীয় ছিলেন বলিউডের তাবর তারকারা। যাদের ফ্যান ফলোয়ার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে দিন দিন তারাও তো বেশ নীরব থাকল গোটা বিষয়। কেউ কিছুই বলল না। যদিও বা কেউ কেউ নিজের মত করে বার্তা দিয়েছিলেন, তা সংখ্যায় নেহাত কম। তাই পাত্তা না পাওয়াই স্বাভাবিক ছিল। সঙ্কটে পড়েছিল উড়তা পাঞ্জবও। যদিও বিতর্ক ছিল অন্য। কিন্তু লড়ে গেছিলেন অনুরাগ কাশ্যপ। আদালত পর্যন্ত দৌড়ে প্রমাণ করেই ছেড়েছিলেন, তিনিই ঠিক। তাঁর লড়াইয়ে পাশেও পেয়েছিলেন অনেককে। এই ছবির প্রযোজক বা পরিচালক কী পারতেন না আদালতের দারস্থ হতে? শিল্প আর শিল্পীর ওপর কোপ এত সহজেই মানল বলিউড? এই দেশের যেই ব্যবসার বাহুবল নেহাত কম নয়, তারাই কিনা আজ কুপকাত! বলিউড প্রমী হিসেবে এটাকে তো পাব্লিসিটি স্টান্ট বলে ভাবতে পারাটা কি খুব অস্বাভাবিক?
বলিউড তো বরাবর শিখিয়েছে দেশপ্রেম। দেশকে লিয়ে জান কুরবান। জাতীয়তাবোধ উঠে এসেছে অসংখ্য বলিউডের ছবিতে। কিন্তু সেই বোধের মূল্য পাঁচ কোটি। মানে তর্কের খাতিরে ধরেই নিলাম, পাকিস্তানকে বয়কট করলাম আমরা। কিন্তু সেটাও তো টাকার বিনিময় কেনা যাবে। তাহলে কোন দেশ প্রেমের বার্তা মানলেন করণ? বলা যেতে পারে, তিনি খানিকটা চাচা আপনি প্রাণ বাঁচার রাস্তায় হাঁটলেন। নিজের ছবিটাকে মানে মানে মুক্তি দিলেই তাঁর কাজ শেষ। ভার ম্যায় যায় সবকুছ। স্বার্থপর করণ জোহর হয়ত এটাই ভাবছেন। আসলে অনেক দিন পর আবার পরিচালনায় হাত দিলেন তো তিনি। তাই হয়ত কোনমতে ঝামেলা এড়ালেন। শিল্পে আদান প্রদানে জল ঢেলে।
আচ্ছা বলিউডের প্রায় সবাই এই বিতর্কে চুপ থাকলেন, অন্য মতলব নিয়ে। পাছে পাক গায়ক-নায়করা তাদের জায়গা দখল করে। কে জানে, কারো সর্বনাশ, কারো পৌষ মাস! বাইরের শিল্পী মানেই এক্সট্রা পাঁচ কোটি। আগামীদিনেপ্রযোজকদের তো ভাবাবে বটেই এই বিপুল অঙ্কটা।
খানদের বাড়াবাড়ি ছেড়ে অনেকদিন পর মনে ধরেছিল আর এক খানকে। ফাওয়াদ খান। উফ কী যে দেখতে। দেখেই কুছ কুছ হোতা হ্যায়। অভিনয়েও দক্ষ। পছন্দ শুধু আমারই নয়, অনেক মেয়েরই ফেভারিটের লিস্টে জুড়েছিল ফাওয়াদের নাম। কিন্তু.... মহারাষ্ট্র নবনির্মান সেনার বাড়াবাড়িতে সে সাধে আপাতত জল। মেয়েরা, মেয়েদের হিংসে করে। এখানে তো পুরুষের হিংসেই সামনে এল! এক সুপুরষের ( রাজ ঠাকরের ক্যারিশমাও কম নয়) রোষে অন্যজনের দেশে ঢোকাই বন্ধ হল।
করণ জোহরের ছবি মানেই প্রেমের জয়। এই ছবিতেই তাল কাটল। ছবি মুক্তির আগেই। কেমন যেন মনে হচ্ছে, এযেন মোহাব্বতে ছবিতে শাহরুখ নয়, রুক্ষ কঠোর অমিতাভের জয়।