Tollywood: ‘আইনি চুক্তি থাকলে তাকে প্রতারণা বলে না’, নায়কের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক পরিচালক পীযূষ সাহা
Pijush Saha: হিরো বানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে বীরভূমের রামপুরহাটের বাসিন্দা অক্ষয় গুপ্তের কাছ থেকে ২০লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ ওঠে টলিউডের জনপ্রিয় পরিচালক পীযূষ সাহার বিরুদ্ধে। ২০২২ সালে পরিচালক প্রযোজকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছিল। সেই মামলাতেই সম্প্রতি গ্রেফতার হন পরিচালক। জামিন পেয়ে জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটালে অভিযোগের উত্তর দিলেন পীযূষ সাহা।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: টলিউডের(Tollywood) অন্যতম পরিচিত প্রযোজক ও পরিচালক পীযুষ সাহা(Pijush Saha)। বহু অভিনেতা অভিনেত্রীকে লঞ্চ করেছেন তিনি, যাঁরা আজ স্বনামধন্য অভিনেতা। তাঁর প্রযোজনা বা পরিচালনায় কাজ করেছেন মিঠুন চক্রবর্তী, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ও সহ বহু বিখ্যাত অভিনেতা, অভিনেত্রী। কিন্তু সম্প্রতি ২০ লক্ষ টাকার প্রতারণার অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযোগ আনেন অক্ষয় গুপ্ত নামের এক নবাগত অভিনেতা। গত ৩০ মে তার অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্রেফতার হন পীযূষ এবং ৬ জুন তিনি জামিনে মুক্তি পান।
পরিচালক পীযুষ সাহাকে এই ২০লক্ষ টাকা প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান ‘আমি কোনও চুরি করিনি বা ঘুষ নিইনি। অক্ষয় আমার অভিনয় ওয়ার্কশপের ছাত্র ছিল। আমার প্রযোজনায় হরি ঘোষের গোয়াল ছবিটা দেখে সে এবং তার মা এসে রীতিমতো আমার হাতে পায়ে ধরে ছেলেকে হিরো বানানোর জন্য। আমি সাফ জানাই এত টাকা আমার নেই। তাছাড়া আগে বহু মানুষকে সুযোগ দিয়েছি এখন আর পারব না। তখন অক্ষয় নিজেই আমায় জানায় সে ২০লক্ষ টাকা দিতে পারবে। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলি এই টাকায় ছবি হয় না। সে তবু নাছোড়বান্দা হওয়ায় আমি আশ্বাস দিই যে ঠিক আছে এরকম আরও দুজন যদি টাকা দেয় তাহলে আমিও কিছু টাকা দিয়ে তিনজনের চরিত্রের ওপর ভিত্তি করে একটা থ্রিলার বানানো যায়। সেক্ষেত্রে অক্ষয় যৌথ প্রযোজনার অংশীদার হবে। সেই মর্মে আমাদের আইনি চুক্তিও হয়, যেখানে এটাও স্পষ্ট উল্লিখিত থাকে অক্ষয় গুপ্ত আমাদের প্রোডাকশনের এক্সক্লুসিভ আর্টিস্ট ও সে এই মুহূর্তে অন্য কোনও ছবিতে কাজ করতে পারবে না। তারপর আমি স্ক্রিপ্ট রাইটার, মিউজিক ডিরেক্টর, ও টেকনিশিয়ানদের বুক করি। এরপর লকডাউন আসে। দু’বছর কাজ স্থগিত থাকে। তারপর ২০২২ সাল থেকে আবার কাজ শুরু হয়। ওকে মেইলে স্ক্রিপ্ট পাঠানো হয় এবং মেইলে অভিনয়ের ওয়ার্কশপেও ডাকা হয়। ফোনেও বারবার ডাকা হয়। মাঝে নানান খবর থেকে আমরা জানতে পারি ও অন্য আরেকটি ছবিতে আমাদের না জানিয়েই কাজ করছে। ওকে ফোন করে জিজ্ঞেস করা হলে ও জানায় ও ছবিটা আর করতে চায় না, কারণ ও এখন বড় অভিনেতা, ওর দাদার রাধাকৃষ্ণ প্রোডাকশনে লিড হিরো হিসাবে অনন্যা গুহ ও রূপসা চ্যাটার্জির সঙ্গে কাজ করছে। তাই ও অন্য কোনও অভিনেতার সাথে স্ক্রিন শেয়ার করবে না। এদিকে আমি সবাইকে অ্যাডভান্স করে দিয়েছি আর চুক্তি অনুযায়ী ও আমার সহ-প্রযোজক তাই ও লিখিত ভাবে নো অবজেকশন জানিয়ে সরে না গেলে আমি একাও ছবিটার কাজে হাত দিতে পারছি না। সেই হিসাবে বারংবার ওর থেকে লিখিতভাবে সরে যাওয়ার আবেদন চাওয়া হয় কিন্তু সেটা ও দিতে রাজি নয়। তারপর হঠাৎই আমার নামে অভিযোগ দায়ের করে। এর মধ্যে আপনাদের জানিয়েছে মায়ের ক্যানসার ইত্যাদি, যা আমায় কখনোই বলেনি বরং বলেছে ৪০ লক্ষ টাকার অন্য ছবিতে আমায় হিরো করে কাজ করছে। আইনি চুক্তি তো ফোন করে ভাঙা যায় না’।
অক্ষয় দাবি করেছে ‘জালবন্দী’র স্ক্রিপ্ট অক্ষয়কে আপনি পাঠিয়েছিলেন শুনে পীযুষ বলেন ‘প্রমাণ দিতে পারবে তো এতবড় একটা মিথ্যে কথার? নাকি দুদিন বাদে তো বলবে তুলকালামে মিঠুন চক্রবর্তীর চরিত্র ওকে প্রথমে অফার করা হয়েছিল। মিথ্যে কথার একটা সীমা থাকে’।
পীযুষ সাহা আরও বলেন ‘এই ইন্ডাস্ট্রিতে বিগত ২৫ বছর কাজ করছি, এত মানুষকে হাতে করে প্রথম নিয়ে এসেছি, কেউ বলতে পারবে আমি টাকা নিয়েছি? আর আমি কি পাগল যে বিনা কোনও চুক্তিতে বিনা কাগজে ২০ লক্ষ টাকার মত একটা অঙ্ক আমি নিয়ে নেব? আমার আয়করেও কোনও ফাঁকি বা কারচুপি নেই। অন্যদের মত আমি মার্সিডিজ, বি এম ডব্লিউতে চড়ি না, বাড়ি গাড়ি করিনি, সিনেমাকে ভালোবেসে সিনেমাই বানিয়ে গেছি প্রফিট লস না ভেবেই। একটা কাজ হলে প্রায় ৫০-৬০ টা টেকনিশিয়ান ও অন্যান্য মানুষদের ঘর চলে। সেখানে এত বছর ধরে এত হিট সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে দেওয়ার পর এটা খুবই দু:খজনক। এরকম হলে কোনও প্রযোজকই আর নতুনদের সঙ্গে কাজ করতে চাইবে না। আজ ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হতে গেলে বাবা মা ইনভেস্ট করেন ভালো জায়গায় পড়াতে, দোকান খুলতেও টাকা লাগে আর সিনেমার বেলাতেই সব দায় একা প্রযোজকের। কেন হবে? সহ-প্রযোজনায় থেকে যন্ত্রণাটা বুঝুক না এইসব নতুন অভিনেতারা। আর আমি যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নিই ওর সমস্যা হয়েছে ও ইম্পা বা ফেডারেশনের দ্বারস্থ হল না কেন? আমরা তো আগে এইসব সরকারী সংস্থায় যাই। এটা কি শুধুই টাকা পাওয়ার ইচ্ছে নাকি পীযুষ সাহাকে কালিমালিপ্ত করার জন্য সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছে। আমি যখন কোনও অপরাধ করিনি তখন আমিও এর শেষ দেখে ছাড়ব’।