`হবু রাজা`র দুয়োরানির কাহিনি...
ভোট মানেই যেখানে রেষারেষি, ঠান্ডা-লড়াই আর জনপ্রিয়তা কুড়নোর এক সুনিপূণ, নির্লজ্জ খেলা, দেশ যখন তৈরি ক্ষমতাদখলের এক নগ্ন লড়াই দেখতে, তখনই যেন একমুঠো খোলা হাওয়া নিয়ে এল এক অন্যরকম গল্পো। এমন একজন মানুষের প্রেম সামনে এল যাঁকে চিরকুমার বলেই এতদিন জেনে এসেছে দেশ।
ভোট মানেই যেখানে রেষারেষি, ঠান্ডা-লড়াই আর জনপ্রিয়তা কুড়নোর এক সুনিপূণ, নির্লজ্জ খেলা, দেশ যখন তৈরি ক্ষমতাদখলের এক নগ্ন লড়াই দেখতে, তখনই যেন একমুঠো খোলা হাওয়া নিয়ে এল এক অন্যরকম গল্পো। এমন একজন মানুষের প্রেম সামনে এল যাঁকে চিরকুমার বলেই এতদিন জেনে এসেছে দেশ। প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে কে `মোস্ট এলিজিবল ব্যাচেলর`- রাহুল গান্ধী না নরেন্দ্র মোদী? এই প্রশ্নের উত্তরের অপেক্ষায় যখন গোটা দেশ, তখনই এল বহু প্রতীক্ষিত সেই স্বীকারোক্তি। বিরোধীরা যাকে, "যার স্ত্রী নেই সে কীভাবে মহিলাদের সম্মান করবে?"- এহেন বাক্যবাণে বিঁধেছিলেন তারই প্রেমকাহিনিতে এখন উত্তাল দেশ। তিনি নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদি। প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নন, এই কাহিনি প্রেমিক মোদির।
পরনে সস্তার ছাপা শাড়ি, ঢিলেঢালা ব্লাউজ, শরীর যেন একটু ঝুঁকে পড়েছে, মুখে বলিরেখার ছাপ স্পষ্ট, কঠিন জীবনযাপনের সাক্ষী হাতের পাতা দুটি, সস্তার চটির মধ্যে দেখা দিচ্ছে কাদামাখা পায়ের ঝলক, মাথায় টেনে বাঁধা খোঁপা। গুজরাতের রাজসোনা গ্রামের কোনও মহিলার সঙ্গেই পার্থক্য নেই তাঁর। কিন্তু পার্থক্য অনেক। তাঁর স্বামী যে দেশের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। তিনি যশোদাবেন চিমনলাল মোদী।
গোধরা কাণ্ডের পর যশোদাবেনের কথা প্রথম শোনা যায়। তার আগে কঠোর নজরবন্দীতেই জীবন কাটাচ্ছিলেন যশোদাবেন। যদিও গ্রামের কেউই প্রথমে বিশ্বাস করতে চাননি তাঁর গল্পো। মোদী কোনওদিন তাঁকে স্বীকৃতি না দিলেও, জোর গলায় অস্বীকারও করেননি। যশোদাবেনের ঘনিষ্ঠরা বলতেন, গুজরাতের মেহসানা জেলায় ভদানগর গ্রামে মোদির সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল যশোদাবেনের। তখম তিনি অষ্টাদশী। উচ্চশিক্ষিত মোদীর সঙ্গে মাত্র ক্লাস এইট পাস যশোদাবেনের বিয়ে। সেখান থেকেই সূত্রপাত যোশাদাবেনের অন্তরালের। শোনা যায়, যশোদা নাকি মনে করতেন তাঁকে দেখতে সুন্দর নয়। তাই ছবি তুলতে ছিল প্রবল অনীহা। বিয়ের কিছুদিন পরই পড়াশোনা শেষ করতে তাঁকে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন স্বামী নরেন্দ্র। নিজেকে স্বামীর সঙ্গে মানানসই করে তুলতে ঢোলাকায় পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। ১৯৭২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর প্রাথমিক শিক্ষার ট্রেনিং নিয়ে আমেদাবাদে ৩ মাস শিক্ষকতা করেছিলেন। প্রথমে দেকওয়ালি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন যশোদাবেন। পরে রুপাল গ্রামের জেলা পঞ্চায়েত স্কুলে ১২ বছর পড়িয়েছেন তিনি। গত ১৩ বছর তিনি রাজোসনা গ্রামের বাসিন্দা। গ্রামের লোকেরা জানিয়েছেন, বেশ কয়েকবার আমেদাবাদে গেলেও নরেন্দ্র ক
ওদিনই তাঁকে থাকতে বলেননি। আশ্চর্যজনকভাবে গ্রামের মুসলমান শিক্ষার্থী, মহিলাদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় মোদীপত্নী।
মাসে ১০,০০০ টাকা মাইনে পেলেও মাত্র ১৫০ টাকা দিয়ে একশো বর্গফুটের একটি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকেন যশোদাবেন। টিনের চাল, কোনও শৌচাগার বা স্নানাগারও নেই কামরায়। ঘরের বাইরে রয়েছে একটি কল। সেখানেই রোজ ভোরে ঘুম থেকে উঠে স্নান করেন যশোদাবেন। ঘর পরিষ্কার করা, রান্না করা, বাসন মাজা, কাপড় কাচা সবই তিনি করেন নিজে হাতে। এদিকে গ্রামের শিশুরাও তাঁকে চেনে নরেন্দ্র মোদীর স্ত্রী হিসেবেই। প্রতি রবিবার অটোরিক্সায় চড়ে ২০ কিলোমিটার দূরে ব্রামহনওয়াড়ায় নিজের ভাইয়ের বাড়িতে যান তিনি।
সাংবাদিকরা তাঁর স্কুলে গেলে নিজের কাহিনি শোনাতে খুবই উত্সাহিত ছিলেন যশোদাবেন। কিন্তু স্কুলের কড়া নির্দেশ ছিল এক মিনিটও সময় নষ্ট করা যাবে না। তাই শেষপর্যন্ত তিনি বলেন, "আমার স্বামীর বিরুদ্ধে কিছু বলব না। তিনি খুব ক্ষমতাশালী। এই চাকরি করেই আমাকে বাঁচতে হবে। আমার ভয় করছে," এইটুকু বলেই সোজা হেঁটে ক্লাসরুমে ঢুকে গিয়েছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর স্ত্রী। এরপর থেকেই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাইতেন না। প্রায় পালিয়ে বেড়াতেন তিনি। শোনা যায় লোকচক্ষুর থেকে বাঁচতে দুহাতে মুখ ঢেকে নিজের ভাইয়ের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন যশোদাবেন।
এইভাবেই দিনের পর দিন অনাড়ম্বর ভাবে কেটে যায় তাঁর জীবন। শুধু একটাই ফোনের অপেক্ষায় থাকেন তিনি। এখনও তিনি আশা করেন একদিন তাঁকে ফোন করে নিজের কাছে ডেকে নেবেন তাঁর হাই প্রোফাইল স্বামী। তাঁর সঙ্গে থাকবেন। নিজের কৃচ্ছসাধনের ফল কোনওদিন পাবেন কিনা জানতে বহু জ্যোতিষির কাছেও গিয়েছেন তিনি। সকলেই বলেছেন এক কথা। একদিন তাঁকে ফিরিয়ে নেবেন তাঁর প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী স্বামী। সেই আশ্বাসেই এতদিন জোরের সঙ্গে বেঁচেছেন তিনি। আর সেই বিশ্বাসেই হয়তো আজ প্রথমবার সর্বসমক্ষে তাঁকে স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দিলেন নমো।