করোনার চোখরাঙানিকে উড়িয়ে বিয়ে পিপিই কিট পরেই!
নব দম্পতির এই পোশাক-পরিকল্পনা নিঃসন্দেহে শিক্ষণীয়।
নিজস্ব প্রতিবেদন: নেপোলিয়ন নাকি বলেছিলেন, তাঁর অভিধানে 'না' শব্দটির কোনও জায়গা নেই।
শুধু নেপোলিয়ন (NAPOLEON) কেন, এখন তো দেখা যাচ্ছে, সাধারণ মানুষও অনেকটা ওই লাইনেই ভাবছে। না হলে পিপিই কিট (PPE KIT) পরে বিয়ের (MARRIAGE) কথা চট করে কেউ ভাববে? যেমন ভেবেছেন এই শহরেরই এক হবু দম্পতি!
সেদিক থেকে দেখতে গেলে বলতেই হয়, মানুষের ইনোভেশনেরও কোনও সীমা-পরিসীমা নেই। এভাবে হবে না তো কী হয়েছে, ওভাবে করে দেখা যাক-- এই দুর্নিবার আকাঙ্ক্ষাই তো মানুষকে দিকে অতীতে কত দুঃসহ কাজ করিয়ে নিয়েছে। বিয়ে তো সেখানে ছেলেমানুষ!
দৃশ্যতই অবশ্য বিষয়টি খুব রোমাঞ্চকর যে, 'যদিদং হৃদয়ং মম তদস্তু হৃদয়ং তব' এই সামমন্ত্র উচ্চারণ করে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হচ্ছেন যে-নবদম্পতি, তাঁদের পরিধানে জ্বলজ্বল করছে আস্ত দু'খানি পিপিই কিট! বিয়ের পোশাকের উপরেই নীল রঙের পিপিই চড়িয়ে নিয়েছেন বরবাবাজী; টোপর পরেছেন কিটের উপরে। একইভাবে পিপিই-তে সজ্জিতা কন্যা তাঁর ফুলমুকুট পরে নিয়েছেন পিপিই-র উপরেই। আর এই চিত্তাকর্ষক সাজেই মালাবদল।
আরও পড়ুন: ৩৭ দিনের মধ্যে একই 'বউ'কে ৪ বার বিয়ে করলেন এক যুবক! কেন জানেন?
জন্ম-মৃত্যু-বিবাহ এমনিতেই বড় আকস্মিকের খেলা। সেখানে আবার পোশাকের এই আকস্মিকতা আরও আলোচ্য বইকী। বিবাহের সঙ্গে যে মাঙ্গলিক বিধির কথা বলা হয়ে থাকে, সেখানে বাগদান, কন্যাসম্প্রদান, সপ্তপদীর মতো বিষয়ের সঙ্গে রয়েছে 'স্নাপন ও পরিধাপন' শীর্ষক একটি অংশও। সেখানে বধূকে স্নান করানো ও বস্ত্র ও উত্তরীয় ইত্যাদি পরানোর কথা বলা হয়েছে। প্রাচীন শাস্ত্রকার বা আচারপদ্ধতির নিয়ামকেরা যখন এই সব নিয়মকানুন রচনা করেছিলেন তখন বিয়ের পোশাক হিসেবে পিপিই কিটকে ভাবাটা ছিল ডাইনোসর যুগে দাঁড়িয়ে স্মার্টফোনের কল্পনা করার মতো!
শাস্ত্রে আটপ্রকার বিয়ের বিধান আছে-- ব্রাহ্ম, দৈব, আর্ষ, প্রাজাপত্য, আসুর, গান্ধর্ব, রাক্ষস, পৈশাচ। এর মধ্যে শেষ চারটি মানে, আসুর, গান্ধর্ব, রাক্ষস, পৈশাচবিবাহ স্বাভাবিক নয়। এই চার গোত্রের বিবাহ ঘটেই একটু বিরুদ্ধ পরিবেশে, প্রতিকূলতা, বাধা-বিপত্তির মধ্যে দিয়ে। ফলত, এই সব বিবাহে পরিপার্শ্বের আনুকূল্য না থাকায় বর-বধূর পোশাক-আশাকও পূর্ব-নির্ধারিত থাকার সম্ভাবনা কম বলে নিশ্চিত ভাবে অন্যরকম হয়।
এখন যে-পর্ব চলছে, কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ, তাতে দেশ জুড়ে পরিবেশ সত্যিই ঘোর প্রতিকূল। না, তাই বলে কেষ্টপুরের মণিদীপা ও কলকাতার আদর্শপল্লীর বিশ্বজিতের বিবাহ ওই চারগোত্রের কোনওটিতেই পড়বে না। সাধারণ ভাবে প্রথাগত 'প্রাজাপত্য' এই বিবাহানুষ্ঠানেই তাঁরা পারিপার্শ্বিক প্রতিকূলতার কথা মাথায় রেখেছেন এবং এই প্রতিকূলতার মধ্যেই বিবাহের সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হননি।
গতকাল সোমবার, ১২ বৈশাখ, ২৬ এপ্রিল সল্টলেক (SALTLAKE) সেক্টর-১-য়ে আয়োজিত ছিল তাঁদের বিবাহবাসর। সেখানেই পিপিই কিট পরে বিশ্বজিতের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন মণিদীপা। তাঁদের এই 'জেসচার' নিঃসন্দেহে শিক্ষণীয়। পথপ্রদর্শকও।
'যদিদং হৃদয়ং মম তদস্তু হৃদয়ং তব' এই সামমন্ত্র উচ্চারণ করে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হচ্ছেন যে-নবদম্পতি, তাঁদের পরিধানে জ্বলজ্বল করছে আস্ত দু'খানি পিপিই কিট! #PPEKIT #marriage #Corona2ndWave pic.twitter.com/VTnHfpGKFz
— zee24ghanta (@Zee24Ghanta) April 27, 2021
মানুষ ইদানীং সাধারণ কোভিডবিধি (COVID PROTOCOL) মানতেই বড় বেশি ঢিলেমি দিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই আবহে বিবাহের মতো এক 'লাইফটাইম অকেজনে' তাঁরা প্রথা থেকে বেশ খানিকটা সরে এসে যে সচেতনতার প্রকাশ ঘটালেন তা সত্যিই অভিনন্দনযোগ্য।
আরও পড়ুন: লকডাউনে বাতিল বিয়ের অনুষ্ঠান, করোনা সতর্কতা মেনে মন্দিরেই গাঁটছড়া বাঁধল যুগল